১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

উত্তর আধুনিক কথাশিল্পী হান ক্যাঙ

উত্তর আধুনিক কথাশিল্পী হান ক্যাঙ -

২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন দক্ষিণ কোরীয় কবি ও লেখক হান ক্যাঙ। ১০ অক্টোবর রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি এ পুরস্কারের জন্য তার নাম ঘোষণা করে। বিশ্বের ১২১তম এবং এশিয়ার প্রথম নারী লেখক তিনি সাহিত্যে নোবেল জয়ী হলেন। কোরিয়ার ৯১ বছর বয়সী প্রখ্যাত কবি কো উনের পাঠকসমাজকে বিস্মিত করে ৫৩ বছর বয়সী লেখিকা নোবেল কমিটির দৃষ্টি কাড়লেন।
কানের গদ্যে তথা গল্প ও উপন্যাসের গভীরে বীজায়িত হয় মানবজীবনের অঘটনসমূহ। অতি প্রাকৃতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ১৯৯৭ সালে কান ‘দি ফ্রম্নট অব মাই ওম্যান’ ছোটগল্প লিখেন। এর ১০ বছর পর তিনি একে উপন্যাসে রূপ দেন। এর কাহিনী এ রকম :
ইয়ং হাই নামে নারী তার শরীরের সাথে মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটতে থাকে। সে বৃক্ষের মতো অচেতন জীবন যাপন শুরু করে। তার এ পরিবর্তনকে কাফকার মেটামরফোসিসের সাথে তুলনা চলে। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ এতে অভিনব জগতের কল্পনা যেমন স্ত্রীর বৃক্ষে পরিণত হওয়া বা নিজেকে জন্তুর মতো মনে করা উত্তর আধুনিক কথাসাহিত্যিকের স্তরে উন্নীত করে হান ক্যাঙকে।
এক দিকে শৈশব থেকেই হান ক্যাঙ ছিলেন মাইগ্রেনের রোগী। ৯ বছর বয়সে পরিবারের সাথে রাজধানী সিউলে বসবাস করছিলেন। এ সময় সে দেশে এক পুলিশ অফিসার কর্তৃক রাইফেলের গুলিতে ৫৯ জনকে মেরে ফেলার নৃশংস ঘটনা ঘটে। এ গণহত্যা ক্যাঙয়ের মনে গভীর রেখাপাত করে। মানুষ কিভাবে মানুষের প্রতি এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তিনি মেনে নিতে পারেননি। মানুষের অত্যাচার নিপীড়ন তার মনস্তত্ত্বের গভীরে প্রভাব ফেলে। তাই পরে প্রতিফলিত হয় তার সৃষ্টিকর্মে।
নোবেল কর্তৃপক্ষ বলছে, দারুণ কাব্যিক গদ্যের জন্য তাকে এ পুরস্কার দেয়া হলো, যা ঐতিহাসিক ক্ষতগুলোকে সাহসিকতার সাথে তুলে ধরে এবং মানবজীবনের ভঙ্গুরতাকে প্রকাশ করে।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন এক বিবৃতিতে বলেন, দেহ ও আত্মা, জীবিত ও মৃতের মধ্যে সংযোগ সম্পর্কে তিনি অনন্যভাবে সচেতন।
তার কাব্যিক ও পরীক্ষামূলক শৈলী তাকে আধুনিক গদ্যের একজন পথপ্রদর্শক করে তুলেছে।
হান ক্যাঙয়ের জন্ম দক্ষিণ কোরিয়ার গুয়াংজুতে ১৯৭০ সালের ২৭ নভেম্বর। ১৯৯৩ সালে লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটি নামে একটি সাময়িকীতে কয়েকটি কবিতা লেখার মাধ্যমে তার লেখকজীবনের শুরু। তবে ১৯৯৫ সালে ছোট গল্পের সঙ্কলন ‘লাভ অব ইয়েসু’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার গদ্য পাঠকের সামনে আসে।
তার বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সাফল্য আসে ‘দ্য ভেজেটারিয়ান’ উপন্যাসের মাধ্যমে। ২০১৬ সালে তার এ উপন্যাস ম্যান বুকার পুরস্কার পায়। হান ক্যাঙ-ই প্রথম কোনো দক্ষিণ কোরীয় লেখক, যিনি সাহিত্যে নোবেল পেলেন।
বিজয়ীরা একটি সনদ, একটি গোল্ড মেডেল ও চেক পেয়ে থাকেন।
হান ক্যাঙ মনে করেন, প্রতিটি লেখক শুধু কাহিনীকার নন, বরং প্রত্যেক সৎ লেখক অন্তস্থ প্রশ্নের উত্তরের খেঁাজ করতে থাকেন। কেউ অভীষ্ট উত্তরের সন্ধান পায় না। লেখকের জীবন প্রশ্নোত্তরের একটি অনন্ত অভিযাত্রা।
২০১৬ সালে ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ অনবদ্য উপন্যাসের জন্য আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পেয়ে হান ক্যাঙ সারা বিশ্ব পাঠকের নজরে আসেন। এ সময় তিনি মার্কিন লেখক ও সমালোচক বেথেইন প্যাট্রিকের প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তত্ত্ব ও তথ্য প্রকাশ করেন। হান ক্যাঙ সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মানুষ হয়ে মানুষকে বোঝা আদৌ সম্ভব কি না, এ সংক্রান্ত সংশয় নিয়ে বোঝা পড়ায় আসতে চেয়েছি ; আরো নানান কিছু (ভেজিটেরিয়ান উপন্যাসে) ।
ক্যাঙ কোরীয় পিতৃতন্ত্রকে কঠোরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, উপন্যাসে তিনি একটি বোঝাপড়ায় আসতে চেয়েছেন যে, এ পৃথিবীতে কেউ যদি চান,আসলেই তিনি নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ, নিসহিংস, রিপুহীন ও নিরীহ থাকতে পারেন কি পারেন না। আমি দেখেছি, পৃথিবীতে সরলতা শুধু সুন্দরের সাথেই নয়, বিষবৎ হিংসার সাথেও জড়ানো। জগতের এসব দ্বন্দ্ব ও দ্বৈরথ নিয়ে কিছু প্রশ্ন সবার মনেই জাগে, আমার মনেও। আমি অস্থির বোধ করতে থাকি। তখন আমি লিখি।
কানের লেখালেখির পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে তিনি কোনো লেখকের বা শিল্পীর নাম উল্লেখ করেননি। শুধু বলেন, আমি যেখানেই যাই ক্যাথি কোলউইংজের (জার্মান চিত্রশিল্পী) অঁাকা পোট্রের্টগুলোর একটা না একটা সাথে রাখি।
কোরিয়াকে এখনো যথেষ্ট পরিমাণ রক্ষণশীল মনে করেন ক্যাঙ। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী বেথেইনের মন্তব্য হচ্ছে, কোরীয় নারীদের চরিত্র এবং সারা বিশ্বের নারীদের মিল রয়েছে ‘নারী দেহের যৌনকরণ’ আর নারীর প্রতি পুরুষের যৌন দৃষ্টিভঙ্গি। তাই কানের কাহিনীতে দেখা যায় স্ত্রীর খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের শঙ্কার চেয়ে স্বামীর কাছে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, স্ত্রীর বুক নিয়ে স্বামী বেজায় চিন্তিত। স্তনবৃন্ত দেখা যাচ্ছে কি যাচ্ছে না।
লেখক পরিবারেই হান ক্যাঙয়ের বেড়ে ওঠা। বাবা হান সিয়ং ওন ঔপন্যাসিক। ভাই হান ডং রিমও লেখক। হান ক্যাঙ নিজে সাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। ১৯৯৩ সালে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। পরের বছর প্রকাশিত হয় গল্প। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম বই। ৮টি উপন্যাস, পাঁচটি উপন্যাসিকা, একটি কাব্য ও দু’টি প্রবন্ধ সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে এ পর্যন্ত। তার দুই প্রিয় লেখক হচ্ছেন দস্তয়েভস্কি ও লিম চুল- উ।
ক্যাঙয়ের অনুবাদক ডেবোরাহ স্মিথ ব্রিটিশ অনুবাদক। বইটি প্রথমে ইংল্যান্ড পরে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত হয়। সে বছরই (২০১৬) দি ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ জিতে নেয়। মাত্র আট বছর পর হান ক্যাঙ পেয়ে গেলেন নোবেল পুরস্কার।


আরো সংবাদ



premium cement
এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে হামলা সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা কে হবে মিয়ানমারের আগামীর নীতিনির্ধারক ফ্যাসিবাদীরা বিদেশে অর্থ পাচার করে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে : সেলিমা রহমান নোবিপ্রবির সাথে চীনের শিহেজী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর মতিউরের স্ত্রী কানিজ কারাগারে, রিমান্ড শুনানি ১৯ জানুয়ারি মহেশখালীতে প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বে যুবক খুন নাটোরে অগ্নিসংযোগের মামলায় দুলুসহ ৯৪ খালাস ক্রিড়া মন্ত্রণালয় ফ্যাসিবাদমুক্ত হওয়া উচিৎ : নূরুল ইসলাম বুলবুল ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন চট্টগ্রাম বিএনপি নেতা শামীমকে শোকজ, সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দিলে শাস্তি

সকল