০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

একটি পেঁপে, এক টুকরো জীবন

একটি পেঁপে, এক টুকরো জীবন -


সিয়াম সিয়ামরে বাপ কই তুই? মারে এক গ্লাস পানি দিবিনি? গলা শুকাই গেছে রে বাপ।
-আইতাছি মা। ভাতের হেন গাইল্লা আইতাছি।
চুলায় ভাত বগবগিয়ে পাক ওঠে। ভাতগুলো লাফিয়ে উপরে ওঠানামা করে। যেনো ডাংগুলি খেলছে তারা। সিয়াম ভাবে ইশ আমিও যদি এমনে খেলতে পারতাম। নাইবা খেলি যদি একটু শান্তি মতো থাকতে পারতাম। মার ব্যারাম হইলে কোনো সন্তান সুখে থাকে? ভাবে সিয়াম।
সিয়াম ডুবানি দিয়ে ভাত সিদ্ধ হওয়া দেখে পুরাতন ছেঁড়া একটা টি-শার্টকে লম্বা করে পাতিলের দুই ধারে শক্ত করে ধরে মাড় ফেলে অতি সাবধানে।
সিয়াম ভাত রান্না করতে পারে আরও বহু আগে থেকে। এখন রান্না করতে আর ভুল হয় না। প্রথম প্রথম হাত পুড়ে গেলেও এখন ভাতের মাড় ফেলা রপ্ত করে নিয়েছে এক্কেবারে পাক্কা ঘরণীদের মতো।
বান্দুরে থাকা মাটির কলস থেকে ইস্টিলের গ্লাসে করে পানি নিয়ে মাকে দেয় সে।
গ্লাস মুখে নিয়ে এক ঢোকে পানি গিলে ফেলে মোমেনা। তারপর কিছু সময় দম নিয়ে আবার বলে, পুত রে কি রানছোস, ভুখ লাগছে দুইডা ভাত বাইড়া দিবি?
মায়ের করুণামাখা কথা সিয়ামের ভেতর তোলপাড় করে দেয়। চোখ ঝাপ্সা হয়ে যায়। কোনোমতে কান্না ঠেকিয়ে গিয়ে একটা ইস্টিলের থালায় ভাত নুন শাক আর কাঁচামরিচ দিয়ে সাজিয়ে দেয়। মা হাত ধুয়ে কেমন গপগপি খায়। সিয়াম তাকিয়ে দেখে। সিয়ামের চোখে অশ্রুগুলো ধোঁয়া হয়ে ওড়ে অথবা অন্য কোনো ছুতোয় হা করে কান্না গিলে ফেলে। খাবার শেষে ওষুধের পাতার শেষ ওষুধ টা মা’কে খাইয়ে দিয়ে কাঁথা দিয়ে সুন্দর করে ঢেকে দিলো মাকে।
সিয়ামরা তিন ভাইবোন ছিলো। বাবা কাঠের মেইলে চাকরি করত। একবার খরমপুর মাজারে ঘুরতে গিয়ে আসার পথে বাস দুর্ঘটনায় বাবাসহ বড় ভাই আর বোন নিহত হয়। সিয়াম আর তার মা ছিটকে রাস্তার পাশে থাকা জঙ্গলে গিয়ে পড়ে। বেশ আহত হলেও সে যাত্রায় বেঁচে ফিরে মা আর ছেলে। তখন সিয়ামের বয়স আর কত হবে এই তো সাত কি আট। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিলো সে তখন। বড় ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। ছাত্র পড়িয়ে যা পেত তা দিয়েই নিজের পড়ার খরচ যোগাতো। বোনটা ছিলো তার পিঠাপিঠি। ভাইয়ের পরীক্ষার আগে মাজারে মানত করার ইচ্ছা নিয়ে পরিবারসহ ঘুরতে গিয়ে গোটা পরিবারের নেমে আসে অমাবস্যার কালোরাত।

সিয়াম গাছের কিছু বড়ই, পেয়ারা আর পেঁপে নিয়ে বাজারে যায়। মায়ের ওষুধ ফুরিয়েছে। ওষুধ কিনতে হবে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যার কিছু আগ অব্দি সিয়ামের প্রায়ই সব বিক্রি হয়। আর একটা পেঁপে বিক্রি করেই মায়ের ওষুধ নিয়ে বাড়ি যাবে- ভাবে সে।
চারিদিকে শোরগোলে সম্বিত ফিরে আসে তার। সে দেখে সবাই দৌড়াচ্ছে। এমন সময় একজন হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলে পেঁপের দাম কত? সে যে-ই বলতে যাবে ৫০ টেকা তখনি সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ তার কথা মিলিয়ে যায়। লোকটা তড়িঘড়ি করে দৌড়াতে থাকে সাথে সিয়ামও। হাঁপাতে হাঁপাতে লোকটা বলে বাড়ি চলে যা ছেলে। এখানে গোলাগুলি হচ্ছে।
সিয়াম দৌড়িয়ে গলির ভেতরে আসে। এখানে থাকা ওষুধের দোকান সবগুলাই শাটার নামিয়ে দিচ্ছে। সিয়াম গিয়ে তাদের হাত ধরে বলে ওষুধ নেমুত বন্ধ করেন কা দোকান। কিন্তু কেউ-ই তার কথা কানে নেয় না। শেষ বেলায় কোনোমতে এক দোকানি হুড়াহুড়ি করে সিয়ামের আনা ওষুধের খোসা দেখে দেখে ওষুধ নামিয়ে দিয়ে ফার্মেসির শাটার নামিয়ে বলে, বাড়ি চলে যা। নাহলে মারা পড়বি। যেমনে পুলিশ গুলি করতাছে তোর উপ্রে গুলি পড়ব টেরও পাবি না।
সিয়াম কানে তুলে না কথা। সে ভাবে তাকে আর কে করবে গুলি। সে কি আর কোনো আন্দোলন গিয়েছে নাকি। কি যেনো কোটা নাকি একটা নিয়ে কলেজ ভার্সিটির ভাইয়েরা আন্দোলন করছে তাদের থামাতে হয়ত পুলিশ গুলি করতাছে। তা ছাড়া সে তো কাউকে কিছুই করেনি।
ততক্ষণে সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ আর আসে না তার কানে। সে আনমনে গলির মুখে চলে আসে। মেইন রাস্তা পার হয়ে বুড়িগঙ্গার ধারে তার বাড়ি।
সে এখন কোনোমতে মায়ের কাছে যেতে পারলেই হয়। হাতে তার মায়ের এক সাপ্তাহের ওষুধ।
সে হাঁটছে, কারা যেনো দূর থেকে তাকে বলছে এই পুলা যাইস না ওরা এখন গুলি করতাছে যাইস না। আয় আয়। ওই পুলা। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তাই হলো।
গোটা সন্ধ্যা আর মাগরিবের আকাশ এবং মসজিদের আজান আর মোড়ে দাঁড়ানো মানুষগুলো সাক্ষী হয়ে রইল। সবাই চাক্ষুষ দেখল দশ বছরের একটি বালকের রক্তে মেইন রাস্তার মোড় রক্তস্নান করেছে। দূরে ছিটকে পড়ে আছে একটা পুঁটলি অন্য পাশে একটা পেঁপে ও কিছু ভাঙতি টাকার নোট।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
ক্রেন দিয়ে ভাঙা হচ্ছে শেখ মুজিবের বাড়ি সড়ক দুর্ঘটনায় দাদি নিহত, আহত নাতি খুনের বিচার না হলে খুনের সংস্কৃতি চলতেই থাকবে : জামায়াত আমির ইজতেমায় হাজারো লোকের ফ্রি চিকিৎসা দিলো হাফেজ্জী চ্যারিটেবল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজের ফ্যাসিবাদের সব চিহ্ন মুছে দিলো শিক্ষার্থীরা ভোটার নিবন্ধনে অস্ট্রেলিয়া-কানাডায় যাচ্ছে ইসি পাবিপ্রবিতে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা হলের নামফলক ভেঙ্গে দিলেন শিক্ষার্থীরা রাবিতে মুজিব পরিবারের নামফলক ভেঙে ফেললেন শিক্ষার্থীরা সিলেটে শেখ মুজিবের ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিলো ছাত্র-জনতা হানিফের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিলো ছাত্র-জনতা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো খুলনার শেখ বাড়ি

সকল