গ্রাফিতির ভাষা
- রেজাউল করিম খোকন
- ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আবুল হাসান সাহেব চাকরি থেকে রিটায়ার্ড করেছেন তিন বছর হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো সকালে অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই। একটা ঢিলেঢালাভাব চলে এসেছে জীবনযাপনে। কিন্তু তারপরও কিছুটা নিয়ম-কানুনের মধ্যে নিজেকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই ভোরে ফজর নামাজ আদায় শেষে প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে হাঁটাহাঁটি করেন। ডায়াবেটিস খুব বেশি না হলেও হার্টের প্রবলেম দেখা দিয়েছে। কিছু দিন আগে এনজিওগ্রামে তিনটি ব্লক শনাক্ত হয়েছিল। ডাক্তাররা দু’টি রিং বুকে লাগিয়ে দিয়েছেন। ওষুধপত্র খেতে দিয়েছেন। খাওয়া-দাওয়ায় সচেতন ও সতর্ক হতে পরামর্শ দিয়েছেন। এর পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়ম করে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট হাঁটার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হাসান সাহেব জীবনযাপনে এবং চাকরিক্ষেত্রে সবসময় নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলে এসেছেন। অনিয়ম, বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেননি কোথাও। চাকরিতে সততা বজায় রেখে কাজ করে গেছেন। একজন সৎ নীতিপরায়ণ মানুষ হিসেবে তার বিশেষ সুনাম ছিল।
অবসরজীবন শুরু হওয়ার আগেও প্রতিদিন সকাল কিংবা সন্ধ্যার পর কিছুটা সময় নিয়ম করে হাঁটাহাঁটি করতেন। তাই বয়স বাড়লেও সেই অভ্যাসটা ধরে রাখতে গিয়ে তার তেমন সমস্যা হচ্ছে না। আর এখন তো অখণ্ড অবসর। অন্য কিছুর ব্যস্ততা নেই।
ডিসেম্বরের শীতের আমেজে সকালে হাঁটতে বেরিয়েছেন হাসান সাহেব। তিনি কিছুদূর যেতেই দেখতে পান একদল ছেলে-মেয়ে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছে। সামনেই বিজয় দিবস। এজন্য এলাকার বিভিন্ন দেয়ালজুড়ে গ্রাফিতি আঁকার কাজ শুরু হয়েছে। যারা আঁকছে তারা সবাই পটুয়া কিংবা আঁকাআঁকিতে অভিজ্ঞ নয়। কিন্তু কী পরম যতœ আর আন্তরিকতা নিয়ে যে যার মতো কাজ করছে। সুনিপুণ কাজ না হলেও তাদের আঁকা গ্রাফিতিগুলোতে এক ধরে সজীবতার ছোঁয়া রয়েছে। রঙ তুলির ছোঁয়ার প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ছবি। দেয়ালগুলো যেন কথা বলছে। যে কথা এতদিন বলার জন্য সবাই উদগ্রীব ছিল। মনের মধ্যে জেগে উঠলেও তা মুখ ফুটে বলা যায়নি। মনের কথা মনের মধ্যেই চেপে রাখতে হয়েছে। কিন্তু এখন সেই পরিবেশ নেই। জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরাচারী দুঃশাসনের অবসানের পর গোটা দেশটাই যেন বদলে গেছে।
এই তো মাত্র কয়েক মাস আগে দেশটা দুঃসহ স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। একটানা দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে রেখেছিল যারা গোটা দেশের মানুষকে। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে দাবি করলেও কার্যত দেশের বেশির ভাগ মানুষই ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী। কারো স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশে উপায় ছিল না। স্বৈরাচার, স্বেচ্ছাচার সর্বত্রই শেকড় গেড়ে বসেছিল। চাকরিজীবনের শেষ কয়েকটি বছর যে কী দুঃসহ কঠিনভাবে কেটেছে, হাসান সাহেব উপলব্ধি করেছেন। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনেক কাজ করতে হয়েছে। যা করতে গিয়ে বারবার বিবেকের দংশনে দংশিত হয়েছেন। অনেকবার চাকরি ছেড়ে দিতে মন চেয়েছে। চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তেমন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছেন। এই বয়সে নতুন কোনো চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। ছেলেটার পড়াশোনা শেষ হয়নি। মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছেন। তার বিয়ে দিতে গিয়ে বেশ কিছু জমানো টাকা খরচ হয়ে গেছে। চাকরি ছাড়লে কিভাবে সংসার চলবে, ছেলেটির পড়াশোনার খরচ চলবে কিভাবে? নানা সীমাবদ্ধতার কারণে চরম অস্বস্তি নিয়ে চাকরিজীবনের শেষ সময়গুলো কাটাতে হয়েছে হাসান সাহেবকে। তার মতো অফিসে আরো অনেক সহকর্মীও চরম অস্বস্তি নিয়ে চাকরি করেছে স্রেফ পেটের দায়ে।
দেয়ালের গ্রাফিতিগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করছেন হাসান সাহেব। গত জুলাই-আগস্টের উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বল করছে।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলন দমনে স্বৈরাচারী সরকার দিনে দিনে নির্মম বেপরোয়া হয়ে উঠছিল ক্রমেই। দমন পীড়নের মাত্রা অতীতের সব দৃষ্টান্তকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠতেই মানবতাবিরোধী পৈশাচিক উপায় অবলম্বন করতে থাকে স্বৈরাচারী সরকার। আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাতে দ্বিধা করে না পুলিশ ও সরকারের অন্যান্য বাহিনীর লোকজন। তাদের সাথে যোগ দেয় স্বৈরাচারী শাসক দলের সন্ত্রাসীরা। নির্মমতার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে তারা।
কিন্তু তাতেও দমে যায় না তরুণ প্রজন্ম। বিপ্লব আর দ্রোহের আগুন ঢাকা শহর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। পুলিশের গুলি, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড আর নির্মম নির্যাতন উপেক্ষা করে তারা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। সব ধরনের বৈষম্য, অন্যায়, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচার, দুর্নীতির অবসানে দীর্ঘদিন ধরে চেপে বসা স্বৈরাচারী সরকারকে পদত্যাগের দাবিতে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা দেশ। পুলিশের নির্বিচারে গুলি আর নির্মমতার শিকার হয়ে আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ফারহানের মতো শত শত তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী প্রাণ হারায়। টগবগে তাজা তরুণের রক্তে বাংলাদেশের মাটি রঞ্জিত হয়।
স্বৈরাচারী সরকারের মানবতাবিরোধী, হিংস্র, পাশবিক আচরণে বিক্ষুব্ধ সবাই। তাই ভয়কে জয় করে মৃত্যুর পরোয়া না করে পুলিশ, র্যা ব, বিজিবির উদ্যত অস্ত্রের সামনে বুক পেতে দাঁড়াতে দ্বিধা করে না দেশের ছাত্র-জনতা। স্বৈরাচারের অন্যায়, অনিয়ম, অবিচার, স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জেগে ওঠে গোটা বাংলাদেশ। জেগে ওঠা ছাত্র-জনতাকে দমন করতে পৈশাচিকতার নতুন নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করে বিভিন্ন সরকারি বাহিনীর লোকজন। দীর্ঘসময় ধরে জোর করে চেপে বসে থাকা স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতার চরম প্রকাশ ঘটাতে থাকে।
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হিংস্র হায়েনার রূপ ধরে ঝাঁপিয়ে পড়া আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ বাহিনীর হুঙ্কারে পিছিয়ে কিংবা পালিয়ে না গিয়ে মুখোমুখি সামনে এসে দাঁড়ায়। বিচলিত কিংবা ভীত না হয়ে বুক চিতিয়ে সেই উদ্যত অস্ত্রের মুখে দাঁড়ায়। অবাক ব্যাপার, স্বৈরাচারী সরকারের নির্দেশ পালন করতে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালাতে এক মুহূর্ত দেরি করে না। পুলিশের গুলি নির্ভীক অকুতোভয় দুঃসাহসী সেই যুবক আবু সাঈদের বুক বিদীর্ণ করে। দেশের পুলিশ বাহিনী এভাবে নিজ দেশের ছাত্র-জনতার প্রতি গুলিবর্ষণ করবে-এটা যেন সে বিশ্বাস করতে পারেনি। তারা তো বিদেশ থেকে এখানে আন্দোলন দমন করতে আসেনি। দেশের মানুষ হয়ে তারা এমন নৃশংসতা চালাবে ধারণা করেনি কেউ। একইভাবে মুগ্ধ, ফারহানসহ আরো বহু টগবগে তরুণ, যুবক কিশোর রাজপথে আত্মাহুতি দিয়েছে গত কয়েক দিনে।
হাসান সাহেব চোখের সামনে এত অন্যায়-অত্যাচার, নির্মমতা দেখে অস্থির হয়ে ওঠেন। চোখের সামনে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন তিনি। সেই সময়ে যেন ফিরে যান তিনি। তার মনে পড়ে যায়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলের কথা। সেদিন বাংলাদেশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বিকেলে রাজু ও তার ছোট ভাই সাজু তাদের বাবার হাত ধরে বিজয় মিছিলে শামিল হয়েছিল। তখন সবার মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছিল। দেশ শত্রুমুক্ত হয়েছে। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে রেহাই পেয়েছে বাংলার মানুষ। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় মিছিলে বাবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল তারা। কোনো ক্লান্তি এসে ভর করেনি কারো দেহমনে। অনাবিল আনন্দ আর মুক্তির স্বাদ সবাইকে নতুন প্রাণে উজ্জীবিত করেছিল। সেদিন সবার চোখে ছিল অনেক স্বপ্ন। আর মনে অনেক আশা-প্রত্যাশা বাসা বেঁধেছিল। শোষণ বঞ্চনা দুঃখকষ্ট দারিদ্র্য থাকবে না। ঘরে ঘরে স্বাধীনতার সুফল ভোগ সব শ্রেণী, পেশা ধর্ম-বর্ণের মানুষ। সমাজে কোনো অশান্তি, অনিয়ম, বঞ্চনা, বৈষম্য থাকবে না।
হাসান সাহেব বাংলাদেশের বয়স বাড়ার সাথে নিজেও বেড়ে উঠেছেন। কিশোর থেকে তরুণ যুবক এবং এখন প্রায় বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে গেছেন। নিজের চোখের সামনে দেখেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক উত্থান-পতন। সরকার পরিবর্তন হয়েছে। একটি দল গেছে আরেকটি এসেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। দুঃখ, দারিদ্র্য, টানাপড়েন জীবনের অবসান হয়নি। বিগত ১৫-১৬ বছরে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারের নিত্যনতুন রূপ দেখেছে, যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। বিভিন্ন ভাবে নানা ইস্যুতে দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। মিথ্যে অমূলক অভিযোগ এনে অযথা সাধারণ নিরীহ মানুষকে হয়রানি, অপদস্থ নির্যাতন করা হয়েছে। সত্যিকার ধার্মিক মানুষদের ভিন্নতর ট্যাগ লাগিয়ে সমাজে লাঞ্ছিত, অপমানিত করা হয়েছে করা হয়েছে। বিচারের নামে প্রহসন করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অনেক নেতৃস্থানীয় দেশপ্রেমিক, ধার্মিক, সৎ ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। কাউকে কাউকে আয়নাঘরে বন্দী করা হয়েছে, বছরের পর বছর দুঃসহ নির্যাতনে তাদের সময় কেটেছে সেখানে। গুমের শিকার হয়েছে অগণিত মানুষ। এখনো তাদের খোঁজ জানে না পরিবার।
নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে যাবতীয় সব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গোটা জাতির কাছে অপরাধী হয়েছে। এর মাধ্যমে জনমনে চরম ক্ষোভ আর বিদ্রোহের স্ফুরণ ঘটেছে আরো। নির্বাচনের নামে বারবার প্রহসন করা হয়েছে। সাধারণ নিরীহ মানুষের জীবনে চরম নাভিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল তাদের দুঃশাসনে। সবাই এর কবল থেকে মুক্তি চাইছিল। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাকের কাছে প্রতিদিনের প্রার্থনায় ওই জালিমদের কবল থেকে মুক্তির কাতরতা প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাদের পৈশাচিকতা, নির্মমতা বর্বরতার অবসান হয়নি। সবাই ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল।
হাসান সাহেব ধার্মিক মানুষ। ধর্ম-কর্ম করেন নিয়মিত। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাকের ওপর প্রতি মুহূর্তে ভরসা রাখেন। তাঁর বিশ্বাস ও ভরসা ছিল, তিনি নিশ্চয়ই এই জালিমদের কবল থেকে দেশের মানুষকে এই দেশকে রক্ষা করবেন। একদিন তাদের ভয়ঙ্কর পতন ঘটবেই। এই বাংলাদেশে দাম্ভিক স্বৈরাচারী শাসক দলের একগুঁয়ে আচরণ, যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা দেখে তার মন ঘৃণায় ভরে গিয়েছিল ।
দেশের সব মানুষ স্বৈরাচারী শাসনের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে একতাবদ্ধ হয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। তারা তাদের ঘৃণা আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল। স্বৈরাচারের হুমকি, ধমক, রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছিল। পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন বাহিনী এবং সরকারের সমর্থক সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্মমতা, পৈশাচিকতার শিকার হয়েও দমে যায়নি। তারা জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময়গুলোতে হতাশ কিংবা হতোদ্যম হয়ে ঘরে ফিরে যায়নি। তারা আবার নতুন উদ্যমে ফিরে এসেছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে।
এবার দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভের পর দেশের মানুষের মধ্যে আবার অনেক উচ্ছ্বাস, আনন্দ উদ্দীপনা দেখছেন হাসান সাহেব। দীর্ঘদিন ধরে দেশকে নরকে পরিণত করে রেখেছিল স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী। অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি, অত্যাচার, শোষণ বঞ্চনা, চাঁদাবাজি, শক্তি ও ক্ষমতার দম্ভ ইত্যাদিতে অতিষ্ঠ মানুষ মুক্তির উপায় খুঁজছিল। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাকের ওপর অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা থাকা হাসান সাহেবও মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়তেন। তিনি ভাবতেন, তার জীবনকালে হয়তো এই জালিমশাহির পতন কিংবা অবসান নিজ চোখে দেখে যেতে পারবেন না। কিন্তু অসীম দয়াময় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক প্রমাণ করে দিয়েছেন, অন্যায় অবিচার জুলুম করে চিরদিন কেউ টিকে থাকতে পারে না।
নতুন এই বাংলাদেশে সবাই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। আগের মতো স্বৈরাচার আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। দেশটা সব অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম, জুলুম, দুর্নীতি বঞ্চনা, বৈষম্য থেকে মুক্ত হবে। সত্যিকারের স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। সম্পদের সুষম বণ্টন হবে, দুঃখ, দারিদ্র্য, অভাব দূর হয়ে যাবে। বিদেশী শক্তির প্রভাবমুক্ত হয়ে নিজেদের মতো করে দেশের সব কিছু পরিচালিত হবে। বাইরের কারো অঙ্গুলি হেলনে এ দেশের সরকার চলবে না। কারো প্রভুত্বের পরোয়া করবে না বাংলাদেশ। বিজয় দিবসকে সামনে রেখে দেয়ালে দেয়ালে আঁকা নানা রঙের গ্রাফিতিগুলোতে কথায়, লেখায়, রেখায় সেই বক্তব্য তুলে ধরেছে তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েগুলো।
ঘুরে ঘুরে গ্রাফিতিগুলো দেখতে দেখতে আবুল হাসানের মনটা অদ্ভুত আবেগে ভরে ওঠে। তার চোখ দুটো অশ্রুজলে চিকচিক করছে। গ্রাফিতির মাধ্যমে এলাকার দেয়ালগুলো দীর্ঘদিনের নির্জনতা, নিথরতা নীরবতা কাটিয়ে যেন সরব হয়ে উঠেছে। এখন দেয়ালগুলো আর নিথর নেই। জেগে উঠেছে। তার এবং দেশের সব মানুষের মনের কথাগুলো অকপটে প্রকাশ করছে। যেখানে সবার আকাক্সক্ষা ও স্বপ্নের কথা ফুটে উঠছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা