১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিশ্বসাহিত্যের টুকিটাকি

মুরাকামির উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণ

-

বিশ্বখ্যাত জাপানি ঔপন্যাসিক হারুকি মুরাকামির ১৫ তম উপন্যাস ‘দি সিটি অ্যান্ড ইটস আনসার্টেন ওয়ালস’ নিয়ে পাঠক-সমালোচকদের আগ্রহের শেষ নেই। ১৯ নভেম্বর বইটির ইংরেজি সংস্করণ আমেরিকা ও ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত হওয়ার কথা। মূল উপন্যাসটি গত বছরের এপ্রিলে জাপানি ভাষায় প্রকাশিত হয়। এটি আগে একটি নভেলা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল, পরে এটিকে পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসে রূপ দেয়া হয়। মুরাকামির জন্ম ১৯৪৯ সালে। তার বই ৫০টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একজন আন্তর্জাতিক বেস্ট সেলার লেখক। নতুন উপন্যাসের শুরুতেই দুটো চরিত্রকে দেখা যায়। ১৭ বছর বয়সী বকু, ১৯৮০ সালের ভার্সনে পাঠক যাকে পেয়েছিল ‘আমি’ হিসেবে। কিমি নামে আরেকটা চরিত্রকেও পাই, আগের উপন্যাসে সে ছিল ‘তুমি’ হিসেবে। এই দু’জন রহস্যময় প্রাচীর দিয়ে ঘেরা একটা শহর নির্মাণ করে। এরপর যুক্ত হয় তৃতীয় আরেকটা চরিত্র, যার নাম ওয়াতাশি। শহরে প্রবেশ করে সে। কিমি কাজ করত একটা লাইব্রেরিতে। ওয়াতাশি সেখানে কিমির সঙ্গে দেখা করে। শহরে প্রবেশ করার কিছু শর্ত আছে। ধরা যাক, কোনো লোক আজব প্রাচীর দিয়ে ঘেরা সেই শহরে ঢুকবে, প্রথমে যে কাজ তাকে করতে হবে, তা হলো, ছায়া বিসর্জন। ওয়াতাশি শহরে ঢোকার মুখেই এক দারোয়ানের কাছে তার ছায়াটা জমা রাখে। এই সামান্য ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, পুরো উপন্যাসের আবহ পরাবাস্তবধর্মী। যখন উভয়েই একটি প্রবন্ধ লেখার প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে তখন তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মেয়েটি ছেলেটিকে দূরে রাখে, তাকে বলে যে তার আসল আত্মা একটি প্রাচীরের ওপারে একটি শহরে রয়েছে। তারা একসাথে শহরটিকে বিশদভাবে কল্পনা করে এবং ছেলেটি সবকিছু লিখে রাখে। এক দিন মেয়েটি উধাও হয়ে যায় এবং ছেলেটি আর তার কথা শুনতে পায় না। এমনকি তার যৌবনে ছেলেটি মেয়েটির জন্য আকুল হয়ে থাকে এবং এগোতে পারে না। এটি একটি পরাবাস্তব উপন্যাস। এখানে আছে একটি সমান্তরাল গল্প। ছেলেটি এখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, সে সেই শহরে পৌঁছেছে যেখানে মেয়েটিকে কল্পনা করেছিল। প্রবেশ করতে হলে তাকে তার ছায়া থেকে নিজেকে আলাদা করতে হবে। প্রতিদিন তাকে শহরের একটি ছোট লাইব্রেরিতে যেতে হয়। মানুষটির ছায়া মরতে শুরু করলে অবশেষে সে তার ছায়াকে নিয়ে শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ মুহূর্তে, সে তার মন পরিবর্তন করে এবং ছায়াকে তাকে ছাড়া চলে যেতে দেয়। এখানে গল্পের মধ্যে নাটকীয়তা আছে, আছে ভৌতিক চরিত্রও। যে মানুষের ছায়া থাকে না সে ভূত না হয়ে যায় না। উপন্যাসে আছে দেয়াল। এই দেয়াল দেখা গেছে মুরাকামির বিভিন্ন উপন্যাসে। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ওইন্ড-আপ বার্ড ক্রনিকল’ উপন্যাসেও দেয়ালের মধ্য দিয়ে যাওয়া-আসার ব্যাপারটা আছে এবং সেখানেও গল্পের একটা গুরুত্বপূর্ণ মোটিফ হলো দেয়াল। মুরাকামি বলেছেন, ‘আমার জন্য প্রাচীর হলো এই পৃথিবী এবং অন্য আরেক পৃথিবীর মধ্যকার সীমানা। যেসব ক্ষমতাবান মানুষ এই প্রাচীরের মধ্য দিয়ে যাওয়া-আসা করতে পারেন, তাঁরা আমার লেখায় খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।’ মুরাকামি তাঁর লেখায় দেয়ালকে দেখিয়েছেন বিভিন্নভাবে। যেমন চেতন এবং অচেতন জগতের মধ্যকার দেয়াল; বাস্তবতা এবং বিভ্রমের মধ্যকার প্রাচীর। মুরাকামি নতুন উপন্যাসের এপিগ্রাফে ব্রিটিশ কবি এস টি কোলরিজের ‘কুবলা খান’ থেকে একটা উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। আর উপন্যাসের ভেতর গল্পের অংশ হিসেবে আছে কলম্বিয়ান লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ‘লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা’ থেকে একটা উদ্ধৃতি।


আরো সংবাদ



premium cement