৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
মু ক্ত গ দ্য

প্রকৃতির প্রশান্তি

-

বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতু বৈচিত্র্য বড় মনোহর। প্রতিটি ঋতুই তার আপন আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ হেমন্ত, শীত ও বসন্তের আগমন মানুষ টের পায় প্রত্যেক ঋতুর সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণেই। কেননা আমাদের দেশের প্রতিটি ঋতুই ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও প্রকৃতি নিয়ে সাঝে বা আগমন করে। যেই অপরূপ রূপ ও প্রকৃতি সবার হৃদয় মনকে মুগ্ধ করে। যেখানে পাওয়া যায়, সবুজ-শ্যামলে ভরপুর সোনালি রোদ্দুর ফসলের মাঠ, ফুলে ফলে ভরপুর গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্য ও আধুনিকতায় হারিয়ে না যাওয়া গ্রামের সেই আনন্দঘন মজার মজার স্মৃতি। যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব প্রকৃতিপ্রেমীকে মুগ্ধ করে। আর এজন্য গ্রামবাংলার অঞ্চলসমূহকে সৌন্দর্যের আঁধার বলা যায়। যেখানে প্রতিটি ঋতুকে খুব ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। কখনো নদ-নদীর জলরাশিতে খুব বেশিই দৃষ্টিগোচর হয় নীলাদ্রির মুগ্ধ করা প্রতিচ্ছবি। যতদূর চোখ যায় দৃষ্টিসীমানায় শুধু নীলাকাশ-নীলাদ্রির মনকাড়া দৃশ্যই চোখে পড়ে। গ্রামগুলো থাকে যেন সবুজ গালিচায় মোড়ানো ও ফুল-ফল আর হাজারো বৃক্ষে নিপুণভাবে সবকিছু সাজানো। আর নদ-নদীগুলো এঁকে বেঁকে চলে গেছে বহুদূর। দু’পারে যার উঁচুনিচু মেঠোপথ। পথের দু’পাশে নদীরপাড়ের ফুটে থাকা রঙ-বেরঙের নানা ফুল। কোথাও নদীর বুকে চিকচিকে বালুচর ও কাশফুলে ভরপুর দৃষ্টিসীমা! সত্যি তা প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়টা প্রশান্ত করে দেয়। যেখানে সদ্য বিদায় নেওয়া শরতের আকাশটার সৌন্দর্য ধবধবে কাশফুলগুলো আরো একধাপ বাড়িয়ে দিয়ে থাকে।
শরতের কাশফুলগুলো মাটিতে নুয়ে পড়ার পরপরই হেমন্তের আগমন ঘটে। আর হেমন্তকাল মানেই শিশিরস্নাত প্রথম প্রহর। হালকা কুয়াশায় ঢাকা একটি মিষ্টিভোর। আবছা কুয়াশায় ঢাকা চারদিকের মাঠঘাট। হেমন্তের ঋতুতে শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি ও রাজঅশোক ইত্যাদি নানা ধরনের ফুল ফোটে। হেমন্তের সকালে শিউলি ফুলের সৌরভ বাঙালির (আমাদের) প্রাণে আনে উৎসবের এক মহাআমেজ। আয়োজন করা শুরু হয় নানা রকমের পিঠা উৎসব, আরো কত কী! এই সময়গুলোতে দিনের আকাশটা হয় যদি সূর্যের আলোয় ঝলমলে ও মনকাড়া নীলের সাথে সাথে শুভ্র আভা ও খণ্ড খণ্ড মেঘমালায় সাজানো। তাহলে পরিবেশটা কেমন হতে পারে! কতটা সুন্দর হতে পারে! এক কথায় অতুলনীয় ও অবর্ণনীয়। তা পরিপূর্ণ অনুভব করা ততক্ষণ সম্ভব নয়, যতক্ষণ না তা সরাসরি উপভোগ করা হবে, ফিল করা হবে। আর মনের রঙিন ভাবনাগুলোকেও মনোরম আকর্ষণীয় করে রাঙাতে পারব না। তাই কেউ যদি স্বপ্নের মতো করে প্রতিটি ঋতুর এই সৌন্দর্যকে ও ভালো দিকটাকে উপভোগ করতে চায়। তাহলে অবশ্যই তাকে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে উপভোগ করার ও ভালোবাসার মনমানসিকতা তৈরি করতে হবে। কখনো সুযোগ হলে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যকে কাছ থেকে উপভোগও করতে হবে। কেননা এই ঋতু ও প্রকৃতি থেকেই লাভ করা যায় হৃদয়ের প্রশান্তি, চোখের শীতলতা ও সর্বোপরি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার পরিচয়। যিনি তা অত্যন্ত নিখুঁত, নিপুণভাবে ও আকর্ষণীয় করে সৃষ্টি করেছেন ও সাজিয়েছেন। প্রতিটি ঋতুর কল্যাণকর দিকটাকে ও প্রকৃতিকে ভালোবাসুন, প্রকৃতির ছোয়া অনুভব করুন। আর মহান রবের শুকরিয়া আদায় করুন।
অতএব প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য বিভিন্ন ঋতুকে কখনো কখনো খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করুন। মাথার উপরের বিশাল আকাশটাকে মন থেকে একটু দেখুন। মনটাকে নতুনভাবে, নতুন সাঝে রাঙিয়ে তুলুন। হৃদয়ে নতুন কিছুর উপলব্ধি ও ভাবনার উদয় ঘটার ক্ষেত্র সৃষ্টি করুন। আর দেখুন, শরতের বিদায়ে হেমন্তের আগমন ঘটেছে। লাল সবুজের দেশে হেমন্তের কুয়াশায় ঢাকা মিষ্টিভোর আমাদেরকে শীতের আগমনী বার্তা দেয়।


আরো সংবাদ



premium cement