১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী

জাতীয় জাগরণের কবি ফররুখ আহমদ চিরবিদায়ের ট্র্যাজেডি

ফররুখ আহমদ। মৃত্যু : ১৯ অক্টোবর ১৯৭৪, জন্ম : ১০ জুন ১৯১৮ -

চির সংগ্রামী কবি ফররুখ আহমদ ছিলেন আজীবন অনমনীয় ও নিরাপস, তোষামোদ বিমুখ, সত্যবাদী, নির্লোভ, অবৈষয়িক, উদার, অতিথিবৎসল এবং আত্মপ্রত্যয়ী ব্যক্তিত্ব। তার জীবন ছিল সরল, একরৈখিক ও সত্যের ওপর সমাসীন। তার কর্মজীবন, সাহিত্যিক জীবন ও জান্নাতের পথে অনন্তযাত্রা এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। ফররুখ বলেছিলেন : ‘মুমিনের মৃত্যুই চেয়েছি/দীর্ঘদিন এ জীবনে- আল্লাহ্র দরগাহে। অসত্যের/অন্যায়ের পদপ্রান্তে চাই নাই আত্মসমর্পণ/পৃথিবীতে।’ -নৌফেল ও হাতেম।
জীবন সন্ধ্যায়
২৭ রমজান ১৯৭৪ ফররুখ হঠাৎ ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। জ্বরের প্রকোপে হারিয়ে ফেলেন সংজ্ঞা। মধ্যরাতে একটু সুস্থ হলে সবাই তাকে রোজা না রাখার জন্য অনুরোধ করেন; কিন্তু কবি তাতে একটুও রাজি হননি। খাদ্য গ্রহণের শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তবুও প্রায় না খেয়েই পরবর্তী রোজাগুলো রাখলেন। জ্বর তখনো লেগেই আছে। পরিবারের সদস্যরা তাদের ঘরে যা মজুদ ছিল- সে অর্থ-সামর্থ্য দিয়ে কবির চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু তার স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি হলো না। রোজার শেষ দিন ইফতারির পর কবি আবার সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। জীবন বাজি রেখে ফররুখ ৩০টি রোজা রাখলেন। কিন্তু আফসোস! পবিত্র ঈদের দিন তার পক্ষে ঈদের জামাতে শরিক হওয়া সম্ভব হলো না। সংজ্ঞাহীন স্বাস্থ্যের অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে চলে গেল।
ফররুখের অন্তিম অসুস্থতাকালীন অবস্থার কিঞ্চিৎ বর্ণনা পাওয়া যায় কবি মুহাম্মদ হাবীবুর রহমানের এই সংক্ষিপ্ত বিবরণে। তিনি কবির এক আত্মীয়ের জবানিতে বলেন- ফররুখের মৃত্যুর আগে জ্বর হয়েছিল। শেষ ক’বছর অসম্ভব অর্থাভাব ছিল, ফলে যথাযথ চিকিৎসা হয়নি। ঈদের পরদিন বিকেলবেলা আমি সস্ত্রীক ফররুখ ভাইয়ের ইস্কাটন গার্ডেন রোডের সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের বাসায় গেলাম। সামনের কামরার দোরগোড়ায় পা দিতেই একটি ছেলে ব্যস্তভাবে এসে খবর দিলো : চাচা, আপনি এসে ভালো করেছেন। আব্বার শরীর খুব খারাপ। আমি কালবিলম্ব না করে চলে গেলাম। ফররুখ ভাইয়ের দিকে নজর পড়তেই আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল। তার বাকশক্তি তখন সম্পূর্ণ রুদ্ধ, স্মৃতিশক্তিও লুপ্ত। গোটা শরীর যেন একটা জীবন্ত কঙ্কাল, বিছানায় শুয়ে তিনি অস্থিরভাবে এপাশ-ওপাশ করছেন। কখনো কখনো উঠে বসার চেষ্টা করছেন। একবার তাকে ধরে বসিয়ে দিলামও কিছুক্ষণের জন্যে। কিন্তু কিছুতেই তিনি স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কী যেন বলতে চাইলেন। চোখ-মুখের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো, হঠাৎ যেন তিনি আমার চেহারা শনাক্ত করে ফেলেছেন। তাই ব্যগ্র হয়ে কিছু বলতে চাইছেন। কিন্তু না, কিছুই তিনি বলতে পারলেন না। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তার মুখের ভাবভঙ্গি আবার পাল্টে গেল।... [শেষ মুহূর্ত, মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান]
অনুজ বন্ধুপ্রতিম কবি আবদুস সাত্তার ঈদের দিন সন্ধ্যায় অনেক চেষ্টা করেও তাকে হাসপাতালে নিতে ব্যর্থ হলেন। ভাগ্নে ড. হাসান জামান পরদিন ১৯ অক্টোবর ১৯৭৪ সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর ডা: গোলাম মোয়াজ্জমকে (অধ্যাপক গোলাম আযমের ছোট ভাই) নিয়ে এলেন ফররুখের বাসায়।
ডাক্তার কবির শিয়রে বসে রোগ নির্ণয় আর স্বাস্থ্যপরীক্ষায় ব্যস্ত। ঠিক সে সময় ইস্কাটন গার্ডেন কলোনির মসজিদের মিনার থেকে ভেসে এলো চিরপরিচিত সে স্বর্গীয় আহ্বান : এসো সালাতের পানে। এসো কল্যাণের পানে। ‘হাইয়া আলাস্-সালাহ্, হাইয়া আলাল ফালাহ।’
না; প্রতি সন্ধ্যার মতো কবি দ্রুত পায়ে ছুটে আসেননি মসজিদ পানে। বরং মুসল্লিরা যখন মাগরিব নামাজ সেরে সবেমাত্র মসজিদ আঙিনায় পা রাখলেন, ঠিক তখনই শুনতে পেলেন পাশের ফ্ল্যাটের তিনতলার বাসা থেকে গুমরে উঠছে প্রিয় বঞ্চিত কান্নার রোল- নেই, নেই আর নেই....।
চির সংগ্রামী ইসলামী রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ মাত্র ৫৬ বছর বয়সে পাড়ি জমালেন অনন্তের পথে, বিশ্ব প্রভুর মহান সান্নিধ্যে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ ফররুখের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে তার বাসায় (কবিপুত্র আহমদ আখতারের সহযোগিতায়) ‘শেষে’ নামে একটি কবিতার খাতা খুঁজে পান। আশ্চর্য, সেই কবিতার খাতার শেষ কবিতাটি যেন আল্লাহর ডাকে প্রশান্ত মনে দুনিয়ার কোলাহল ছেড়ে কবরে যেতে পারেন তারই প্রতিবিম্ব : কোনো একসময়ে মৃত্যুচিন্তা মনে এলে কবি ডায়েরিতে লিখেছিলেন-
যেদিন আমার কাজ ফুরোবে/সেদিন আমায় ডাকে যেন মাটি, / মায়ের মত মেলেছে সে/কোমল স্নেহে যেথায় শীতলপাটি। / সেই ধুলিতে মায়ের সাথে/মিশবো আমার মায়ের শ্যামল দেহে, / মাটি হয়ে মিশবো মাটির/গভীর বুকের অতল মধুর স্নেহে। / রইবে পড়ে এই পারের/তুফান ঝড়ের প্রবল কোলাহল, / মাটির মাঝে মিশবো যেদিন/মাটিতে মোর মিশবে তনুতল।
এক শিশি আতর
ফররুখ আহমদ ইন্তেকাল করেছেন। রেডিও ও টেলিভিশনে এ সংবাদ প্রচারের সাথে সাথে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক, আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী এবং মুক্তিযোদ্ধাসহ সমাজের সর্বস্তরের অগণিত লোক তার বাসভবনে এসে ভিড় জমালেন। প্রাণ ভরে সবাই দেখলেন মৃত মুমিনের ঠোঁটের ডগায় লেগে আছে জান্নাতি হাসি। কপাল থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে নূরের আভা।
প্রশ্ন উঠল, কবিকে কোথায় কবর দেয়া হবে?
প্রখ্যাত সাংবাদিক আসফউদ্দৌলা রেজাসহ কবির অনেক গুণগ্রাহী চেষ্টা চালালেন কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল মসজিদ সংলগ্ন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবরের পাশে সমাহিত করতে। এ ব্যাপারে রেজার আগ্রহ ও প্রচেষ্টা ছিল প্রাণান্তকর। কারণ- একবার কী এক অসুবিধায় দৈনিক ইত্তেফাকের কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করে দেয়া হলো। সতীর্থ বন্ধু ও অনুজপ্রতিম সিরাজুদ্দীন হোসেন ও আসফউদ্দৌলা রেজার কথা চিন্তা করে কবি ফররুখ শঙ্কিত হলেন। কারণ এ দু’জনের পারিবারিক সদস্য সংখ্যা ছিল বেশি। তাই তিনি দু’জনের নামে পরিচিত একজন লোক দিয়ে দুটো খাম পাঠিয়ে দিলেন। তারা খাম খুলে দেখেন প্রত্যেক খামে দুটো করে এক শ’ টাকার নোট এবং সাথে ছোট্ট দু’টি চিঠি। তাতে লেখা- ‘তোমাদের প্রয়োজনের তুলনায় খুব সামান্য এই উপহার। আশা করি, এই বিপদের মুহূর্তে প্রত্যাখ্যান করবে না।’ এ ছাড়া ২৫ মার্চ, ১৯৭১ গভীর রাতে পাক হানাদার বাহিনী দৈনিক ইত্তেফাক ভবন উড়িয়ে দিলে ফররুখ বিপদগ্রস্ত ওই সাংবাদিকদের গোপনে বহু সাহায্য করেন।
অনেক তদবির করেও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবরের পাশে কবিকে সমাহিত করার সরকারি অনুমতি পাওয়া গেল না। দুঃখজনক ও নিন্দনীয় যে, ভাষাসৈনিক, বাংলা একাডেমি ও একুশেপদক প্রাপ্ত এ মহান কবির মৃত্যুতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান তো দূরের কথা, একজন মন্ত্রী পর্যন্তও পত্রিকায় একটি বিবৃতি দিয়ে শোক প্রকাশ করেননি। শুধু কি তাই? কবির মৃত্যুর পর সীমাহীন কষ্টে পতিত কবির ছেলেমেয়ে-স্ত্রীকে সমবেদনা জানানোর জন্যও উচ্চপদস্থ কোনো সরকারি কর্মকর্তা তার বাসায় যাননি। কার্জন হল মসজিদের পাশে কবিকে কবর দিতে না পারায় সবাই হতাশ হলেন। শেষ পর্যন্ত বাংলার অপ্রতিদ্বন্দ্বী এ কবিকে আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো আজিমপুর গোরস্থানে কবর দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু বাদ-সাধলেন ফররুখের আজীবন সুহৃদ বন্ধুকবি বেনজীর আহমদ। তিনি উপস্থিত সবার কাছে প্রস্তাব দিয়ে বললেন, “যদি কারো আপত্তি না থাকে, বিশেষ করে যদি কবি-পতœী সৈয়দা তৈয়বা খাতুন লিলি অনুমতি দেন, তাহলে আমার ভাই ফররুখকে আমার শাহজাহানপুর ডেরায় নিয়ে যাব। তাকে আমার জন্য নির্দিষ্ট কবরের পাশেই কবর দেবো।” আবেগাপ্লুত অশ্রুসজল কণ্ঠে তিনি আরো বললেন, “ফররুখের বন্ধুত্বের দাবি নিয়েই আমি এ প্রস্তাব দিচ্ছি।” উপস্থিত সবাই বৃদ্ধ কবি বেনজিরের এই বদান্যতায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। পরিশেষে সিদ্ধান্ত হলো কবিকে বেনজির আহমদের শাহজাহানপুরস্থ আ¤্রকুঞ্জের ছায়া-ঢাকা, পাখি-ডাকা, শান্ত-স্নিগ্ধ কবরগাহে সমাহিত করা হবে।
এ দিকে কবিকে গোসল দিয়ে কাফনের আয়োজন চলছে। হঠাৎ একটা চঞ্চল উত্তেজনা সবার মধ্যে লক্ষ করা গেল। খবর নিয়ে জানা গেল, কাফনের সবকিছু আনা হয়েছে কিন্তু আতর আনার কথা কারো মনে ছিল না। আবার ব্যস্ততা, আবার অস্থিরতা।
এমন সময় একজন আতরের একটি ছোট্ট শিশি এনে বলল, ‘এই যে আতর। মক্কা থেকে কবির এক গুণগ্রাহী ভক্ত কবির জন্য পাঠিয়েছেন।’ কিন্তু সুদূর মক্কা থেকে কে এই আতর বয়ে নিয়ে এলো? আর কে-ই বা তার জন্য আতর পাঠাল? খবর নিয়ে জানা গেল, একজন সফেদ শ্মশ্রুমণ্ডিত সাদা আলখেল্লা পরিহিত দরবেশের মতো মানুষ এখানে এসে কবি ফররুখের খোঁজ করছিলেন। তিনি যা বলেছেন, তার মর্মার্থ হলো, তিনি যখন মক্কায় গিয়েছিলেন তখন কবির একজন ভক্ত তাকে এই আতরের শিশিটি নিজ হাতে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন। তারও কবির সাথে পরিচিত হওয়ার আগ্রহ ছিল বহু দিন থেকে। তাই এই আতরের কল্যাণে কবির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন ভেবে আজ তিনি আতরের শিশিটি অতি আনন্দের সাথেই বহন করে এনেছেন। কিন্তু নানা রকম ঝামেলায় এতদিন তার পক্ষে এই আতর আর কবিকে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আজ তিনি কবির কাছে সেই আতর পৌঁছাতে পেরে বড় আনন্দ বোধ করছেন। কিন্তু কবির নামাজে জানাজার পর যখন সেই আতর বহনকারীর খোঁজ করা হলো, তখন আর তাকে খুঁজে পাওয়া গেল না। এমনকি যিনি আতরের শিশি এনে বলেছিলেন, ‘এই যে আতর’ তাকেও আর সেই হাজার লোকের ভিড়ে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কবির কোনো এমন ভক্ত পবিত্র মক্কায় ছিলেন, যিনি শুধু শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ এই ছোট্ট এক শিশি আতর পাঠিয়েছিলেন? তিনি কে? আর তিনিই বা কে, যিনি ঠিক কবির কাফনের সময় সেই আতর নিয়ে হাজির হয়েছিলেন? কারা তারা? না, সে পরিচয়ের আজ আর কোনো প্রয়োজন নেই।
তার মৃত্যুতে
১৯ অক্টোবর ১৯৭৪ এই সত্যনিষ্ঠ কবির মহাপ্রয়াণে বাংলাদেশের তৎকালীন স্বল্প পরিসরের গণমাধ্যম ও সংবাদপত্রে তীব্র ক্ষোভ ও সমবেদনার ঝড় উঠেছিল। সে সময়ের বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন কবির মৃত্যু সংবাদ বারবার প্রচার করেছিল। বিশেষত বাংলাদেশ বেতারে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তাকে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করেন। তার বিখ্যাত কবিতাসমূহ স্মরণানুষ্ঠানে আবৃত্তি করা হয়।
সে সময়ে প্রকাশিত প্রতিটি সংবাদপত্রে তার সংবাদ প্রকাশ পায়। দৈনিক আজাদ, দৈনিক বাংলা, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক জনপদ, দৈনিক গণকণ্ঠ, দৈনিক ইত্তেফাক, The Bangladesh Observer সাপ্তাহিক চিত্রালী, ঢাকা ডাইজেস্ট, মাসিক মদীনা প্রভৃতি পত্রিকায় কবি ফররুখের গৌরবোজ্জ্বল জীবন ও কর্মের ওপর সম্পাদকীয়-উপ সম্পাদকীয়, ফিচার প্রকাশিত হয়। তাতে ফুটে ওঠে তার সংগ্রামী জীবনের নানা দিক। এখানে মাত্র একটি সাংবাদপত্রের সম্পাদকীয়ের কিয়দংশ উল্লেখ করছি : অকস্মাৎ শরতের সুনীল আকাশের বুক চিরে বজ্রপাত হলো। আমরা জানলাম বাংলার কাব্যাঙ্গন থেকে সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রদীপটি নিভে গেল। কবি ফররুখ আহমদ চিরনিদ্রার কোলে ঢলে পড়লেন। সাত সাগরের মাঝি বহু ক্লান্তির সমুদ্র পার হয়ে এসে অনন্ত বিশ্রামের নিবিড়ে আচ্ছন্ন হলেন। হয়তো একদিন ‘আবার’ পর্দা পেরিয়ে ভোর হবে, নারঙ্গী বনে সবুজ পাতা কাঁপবে প্রাণরসে থির থির করে। সাত সাগরের উত্তাল কলরোল এসে আঘাত হানবে দুয়ারে, কিন্তু মাঝির ঘুম আর ভাঙবে না। ফররুখ আহমদ আজ নেই। অন্ধকার এসে গ্রাস করেছে আলোকের উদ্দাম বিহঙ্গকে। যে বিহঙ্গের কণ্ঠে নিয়ত ধ্বনিত হয়েছে পুঁথি পাঠ, গান কবিতা ছড়া আর সনেট। যে কণ্ঠে শুনেছি শিশুর মতো সরল হাসি, সে কণ্ঠ আজ স্তব্ধ হয়ে গেছে। আর কোনোদিনও কাকলিমুখর হয়ে উঠবে না। (দৈনিক আজাদ, ২২ অক্টোবর, ১৯৭৪)
মরণশীল মানুষের নিকট মৃত্যু কোনো বড় কথা নয়। তবুও কোনো কোনো মৃত্যু এত বড়, এত বিরাট মনে হয় যে, তার নিকট জীবনও তুচ্ছ হয়ে পড়ে। ফররুখ আহমদের মৃত্যুতে আজ শুধু এই সান্ত¡নাই আমরা খুঁজছি যে, মরণেও তার মুখে হাসির একটা আভা প্রস্ফুটিত ছিল। বজুর্গ ব্যক্তিগণ প্রায়ই বলে থাকেন, ‘মোমিনের মৃত্যুর প্রধান লক্ষণ এই যে, মরণেও তার মুখে হাসির ঝলক লেগে থাকবে।’ হেরার রাজ তোরণের স্বপ্নদ্রষ্টা কবি জান্নাতের পথে পা বাড়ালেন হাসি মুখেই। তিনি চিরঞ্জীব রইবেন বাংলা সাাহিত্যে, বাচিক শিল্পীর কণ্ঠে এবং রাজপথ কাঁপানো সংগ্রামী তরুণদের স্লোগানে-মিছিলে।


আরো সংবাদ



premium cement
গজারিয়ায় বজ্রপাতে স্ত্রীর মৃত্যু, স্বামী আহত ‘ক্ষমতায় থাকার জন্য হাসিনা এত মানুষ হত্যা করেছে, যা ইতিহাসে নেই’ আমি রেজাল্ট চাই না, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই : শহিদ সবুজ মিয়ার মা ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জয়খরা ঘুচাল পাকিস্তান যেভাবে শহিদ হন ইয়াহিয়া সিনওয়ার অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ হতে পারে নতুন মুখ! শুক্রবার ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ ছাত্র অসন্তোষের জেরে পাঞ্জাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাশিয়াকে সমর্থন প্রশ্নে বেইজিংকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে চীনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া মানে অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়া : ভারতকে রিজভী রিপাবলিকান-সমর্থিত নির্বাচনী বিধি বাতিলের রায় জর্জিয়ার বিচারকের

সকল