২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বৃহন্নলা

-

গতকাল রাতেই এখানে দুটো হাত নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম
দুটো পা’ও ঠিকঠাক ছিলো, মুখ-চোখসমেত আমি একদম
পুরোদস্তুর আমি ছিলাম। এমনকি বিশেষায়িত পুরুষ ছিলাম
এই আমি। মানুষের মতো করে লাফালাফি করেছিলো
আমার বুকের বাম পাঁজর।

সকালে ঘুম থেকে জেগেই দেখি সকল অঙ্গ অসার
আমার। আমার হাত অসার, আমার পা অসার
আমার বুকের ধুঁকপুকানি বন্ধ, মুখের ভাষা বন্ধ
চোখের চাহনি অন্ধ, আমার মস্তিষ্কের সকল ক্রিয়া নিশ্চল।
আশ্চর্যের সংবাদ ছিলো- তবুও নাকি বেঁচে আছি আমি!
আমার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একদম জাগ্রত-
আমার রসনা লালায়িত হচ্ছে, আমার কামনার শরীর
একদম চাঙ্গা; কুমারী চেতনায় উদ্বাহু আমার, উত্তোলিত
জাগ্রত পুরুষ- কে বলবে অসার এই আমি।

তবু কেন হাত নড়ছে না আমার, পাযুগল দৌড়াচ্ছে না
আমার মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে না একটিও উচ্চকিত
স্লোগান; আমার শির উন্নত হচ্ছে না। তবে কি আজ আমি
পিঠে জোয়াল নিয়ে নেতিয়ে পড়া বলদে পরিণত হয়েছি!

এই আমি আমাকেই খুঁজে পাচ্ছি না মানুষের ভিড়ে
মনে হচ্ছিলো মৃতদের রাজ্যে হয়তো পাবো নিজেকে
না সেখানেও কোনো অস্তিত্ব নেই; তবে মড়ার ভাগাড়ে-
যেখানে আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলা লাশগুলো ঘৃণার
থুতু নিয়ে পড়ে আছে, সে নর্দমায়ও নিজেকে তল্লাশি
ভয়ে ভয়ে; সেথাও নেই আমি।

যেখানে আবু সাঈদ বুক পেতে দেয়, যেখানে আমার
বোনেরও চোখ উপড়ে নেয় হায়েনা বুলেট, হায়েনা
হায়েনা আর হায়েনা ওরা সব হায়েনা- ওদের
আঙুল হায়েনা, ওদের চোখ হায়েনা, ওদের
কামনায় ঘোরে বিষধর কোবরা কিংবা ভাইপার।

সাঈদের বুকের পাঁজরেও নিজের অস্তিত্ব খুঁজে
পাই না, রাজপথে লেপ্টে থাকা তাজা রক্তের বিন্দুতেও
নেই আমি, নেই আমি হায়েনা বুলেটেও, নেই টিয়ার শেলে।
শেষে গায়েবি আওয়াজ পেলাম- তুই বৃহন্নলা।


আরো সংবাদ



premium cement