বিশ্বমানের পাঠদান ও যুগোপযোগী শিায় উত্তরা ইউনিভার্সিটি
- ২৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০, আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ২৩:০৬
মাহমুদ কবীর
আলোর পথে যাত্রা শুরু
২০০৩ সালে ঢাকা শহরের উপকণ্ঠে উত্তরায় উচ্চশিার পাদপীঠ হিসেবে উত্তরা ইউনিভার্সিটির যাত্রা শুরু। স্বল্প ও সাশ্রয়ী খরচে মানসম্পন্ন শিা দেয়াই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ল্য। শুরুতে দু’টি স্কুল বা অনুষদের অধীনে দু’টি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি স্কুল বা অনুষদের অধীনে ১৪টি ডিপার্টমেন্ট চালু আছে। শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রফেশনাল ও জব ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব জব ওরিয়েন্টেড ও প্রফেশনাল প্রোগ্রাম চালু করেছে সেগুলো হলোÑ আইন শিক্ষা, শারীরিক শিা, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাশন ডিজাইন ও ইইই প্রোগ্রাম। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিার্থীরা যাতে নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে ও চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিজেকে চৌকস প্রমাণ করতে পারে, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরু থেকে বিশ্বমানের কারিকুলাম ও পাঠদান পদ্ধতি অনুসরণ ও মানসম্পন্ন শিার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা
শিাবিদ ও শিানুরাগী এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ড. এম আজিজুর রহমান দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে শিার আলো প্রসারের ল্েয একটি ট্রাস্ট গঠন করে ইউনিভার্সিটিসহ অন্যান্য শিাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি হচ্ছেন এ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং এ ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর। শিাবিদ ও সুলেখক প্রফেসর ড. ইয়াসমীন আরা লেখা হচ্ছেন এ ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান।
ভিশন ও মিশন এবং আলোকিত মানুষ
গড়ার স্বপ্ন
এ ইউনিভার্সিটির ভিশন বা সুদূরপ্রসারী ল্য বা স্বপ্ন হচ্ছে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং এ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমিক, আদর্শ নাগরিক, বিবেকবান ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। উত্তরা ইউনিভার্সিটি জীবনঘনিষ্ঠ শিাদানে একনিষ্ঠ। শুধু জ্ঞানই আদর্শ নাগরিক তৈরি করতে পারে না। তাই উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ সম্পর্কেও শিা দেয়া হয়। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের মানসিক উৎকর্ষতা ও চারিত্রিক উšে§ষ সাধনও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার অন্যতম অংশ হিসেবে বিবেচিত।
গুণগতমানের শিা
বর্তমানে উত্তরা ইউনিভার্সিটি ১৪টি বিভাগে শিাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি উচ্চশিা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার কাজ পরিচালনা করাও অত্যাবশ্যক। সে কারণে উত্তরা ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর রিসার্স অ্যান্ড ট্রেনিং প্রতিষ্ঠা করেছে। শুরু থেকেই মানসম্পন্ন শিাকে সামনে রেখে এ ইউনিভার্সিটির শিাকার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) গঠনের মাধ্যমে শিার গুণগতমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদপে গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এ ইউনিভার্সিটি থেকে এ পর্যন্ত ১৯ হাজার শিার্থী ডিগ্রি অর্জন করে দেশ-বিদেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যাংক, বীমা, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, এনজিওতে কর্মরত আছে। উত্তরা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ পাঁচটি সফল সমাবর্তনের মাধ্যমে ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিার্থীদের ডিগ্রি দিয়েছে, যার তিনটিতেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি উপস্থিত ছিলেন। আগামী ৩০ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে ইউনিভার্সিটির ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বিভাগভিত্তিক গবেষণা ও প্রকাশনা কার্যক্রম
উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রতিটি বিভাগই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফ্যাকাল্টিদের গবেষণা প্রবন্ধ বর্তমানে দেশী ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষদ থেকে নিয়মিত জার্নাল প্রকাশ করা ছাড়াও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থেকে বিজনেস রিভিউ, আইন বিভাগ থেকে ল জার্নাল নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
কো-কারিকুলার কার্যক্রম
জ্ঞান ও নৈতিকতা অর্জন করতে হলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকরে পাশাপাশি শ্রেণিবহির্ভূত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হয়। উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিবহির্ভূত এ ধরনের কো-কারিকুলার কার্যক্রম যেমনÑ কাব, বিজ্ঞানমেলা, গণিত অলিম্পিয়াড, খেলাধুলা, অভিনয়, বিতর্ক ও সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন আনন্দের সাথে শিক্ষা গ্রহণ করে তেমনি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নিজেকে উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারে।
বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক
বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা ও সহযোগিতার জন্য বর্তমানে উত্তরা ইউনিভার্সিটি যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ড শ্যায়ার ইউনিভার্সিটি ও অরচেস্টার ইউনিভার্সিটির সাথে সহযোগিতার স্মারক স্বার করেছে। কর্তৃপ কানাডার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেও সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন
উত্তরা ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এসব আন্তর্জাতিক সেমিনার বা সম্মেলন বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, আসাম ও কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য সম্মেলন হলো বিজনেস কনফারেন্স, রবীন্দ্র শিক্ষা ভাবনা, নজরুল সম্মেলন। এ সম্মেলগুলোতে আমেরিকা, জাপান ও ভারতসহ দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে।
সম্মাননা ও সাফল্য
মানসম্পন্ন শিাকার্যক্রম পরিচালনার স্বীকৃতি হিসেবে এ ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি বেশ কিছু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাডুকেশন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১২ (দিল্লি), এশিয়াস বেস্ট বিজনেস অ্যাওয়ার্ড সিঙ্গাপুর ২০১৩, এশিয়ান সিইএফ বিজনেস স্কুল অ্যাওয়ার্ড ২০১৪ (মুম্বাই), ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড ২০১৪ ও ২০১৫ (আইন বিভাগ) অন্যতম। শিক্ষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য এমটিসি গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ অর্জন করেছেন উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ইয়াসমীন আরা লেখা। এ ছাড়া, ষষ্ঠ জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থী দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু
উত্তরা ইউনিভার্সিটির উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শুরু করা। শিা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের ল্েয ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিভাগগুলো স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। উত্তরা মডেল টাউনের থার্ড ফেইজ সংলগ্ন এবং ১৬ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন ভাটুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ চলছে এবং এখন পর্যন্ত ৬টি বিভাগ স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে ।
সবার জন্য উচ্চশিা
শিার আলো জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর কাজে উত্তরা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। তাই সাশ্রয়ী খরচে মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী শিাকার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ সমাজের মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিার সুযোগ নিশ্চিত করেছে। উত্তরা ইউনিভার্সিটি এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উচ্চশিার একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজের ভূমিকা বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
শিক্ষার্থীদের সাফল্য
উত্তরা ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগের ছাত্ররা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট গণিত অলিম্পিয়াড ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে অংশগ্রহণ করে সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় একাধিকবার প্রথম, তৃতীয়, চতুর্থ ও সপ্তম স্থান অর্জন করেন। শারীরিক শিা বিভাগের কৃতী ছাত্রী মাহফুজা খাতুন শীলা জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা ২০১৬ তে জোড়া স্বর্ণপদক পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। শারীরিক শিা বিভাগের আরেক শিার্থী মিনাতা সপ্রিয়া মিজান এপি ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সপ্তম আন্তর্জাতিক কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৬-তে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিার্থী আতিকুর রহমান শরীফ তেল ও গ্যাসবিহীন একটি মোটরযান উদ্ভাবন করেছেন, যা সোলার এনার্জিতে মাত্র ১০ টাকা খরচে সারা দিন চালানো যায়।
বিশ্বমানের শিক্ষা কারিকুলাম ও দ মানবসম্পদ গড়া এবং সৃজনশীল কার্যক্রম
প্রায় সব অনুষদ এবং বিভাগের শিক ও শিার্থীদের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী নানা সৃজনশীল কার্যক্রম ল করা যায়। এসব সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শিার পরিবেশকে আনন্দঘন পরিবেশে পৌঁছে দিয়েছে উত্তরা ইউনিভার্সিটির দ প্রশাসন এবং নিষ্ঠাবান শিক ও মেধাবী শিার্থীরা। বিভিন্ন বিপর্যয় দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করে উত্তরা ইউনিভার্সিটি চেষ্টা করছে দেশের মধ্যে দ মানবসম্পদ গড়ে তোলার। উত্তরা ইউনিভার্সিটি শুধু ডিগ্রি দেয়ার জন্যই শিাকার্যক্রম পরিচালনা করছে না, বরং ইউনিভার্সিটি প্রশাসন এবং শিক্ষকেরা বিশ্বমানের শিক্ষা কারিকুলাম ও পাঠদান পদ্ধতির মাধ্যমে মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী শিা দিয়ে শিক্ষার্থীদের দ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন।