২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

পুরস্কার চাইলে তিরস্কার জোটে

-

প্রাচুর্যের আধিক্যে মানুষ তার মানবিকতা হারিয়ে অহঙ্কারী হয়ে যায় এবং পাশবিক রূপ ধারণ করে। তখন সে সত্য ও ন্যায়ের পথ ছেড়ে তলিয়ে যায় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য পঙ্কিলতার অন্ধকার অতল গহ্বরে। অহঙ্কারী এসব লোকের বোধবুদ্ধি যারপরনাই লোপ পায়। কখন কার সাথে কী আচরণ করতে হবে সেই মাত্রাজ্ঞান অবশিষ্ট থাকে না। এভাবে একসময় সমাজ সংসারে সে অপাঙ্ক্তেয় অনাকাক্সিক্ষত অভিশপ্ত ও অথর্ব হয়ে যায়। এসব দুর্বৃত্ত দুরাচার দুষ্কর্মের সীমালঙ্ঘন করে একসময় মহান স্রষ্টা মহীয়ান গরিয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আর যায় কোথায়; আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় তারা আল্লাহর বান্দাদের ক্রোধের শিকার হয়ে চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়। তাদের অস্বাভাবিক চাওয়া পাওয়া পুরস্কারে উচ্চাভিলাষ পর্যবসিত হয় ঘৃণিত তিরস্কারে। তখন তারা তালবেতালে ঘুরতে থাকে গ্লানি আর গঞ্জনার ঘূর্ণিপাকে। তাদের বুকের ভেতর তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা তৈরি হয়। তখন তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আবোলতাবোল বকতে থাকে।
এসব অর্বাচীনের ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেন- ‘তারা আরো বলে, আমরা এ দুনিয়ায় ধনেজনে (তোমাদের চেয়ে) সমৃদ্ধশালী এবং (পরকালে) আমাদের কখনোই আজাব দেয়া হবে না। (হে নবী,) তুমি বলো, আমার মালিক যাকে ইচ্ছা করেন রিজিক প্রশস্ত করে দেন, (যাকে ইচ্ছা) সঙ্কুচিত করে দেন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই (এটা) বোঝে না।’
(হে মানুষ,) তোমাদের ধনসম্পদ, তোমাদের সন্তান-সন্ততি এমন কোনো বিষয় নয় যে, এগুলো তোমাদের আমার নৈকট্য লাভ করতে সহায়ক হবে, তবে যে ব্যক্তি ঈমান এনেছে এবং (সে অনুযায়ী) নেক কাজ করেছে (সে এ নৈকট্য লাভ করতে পারবে), এ ধরনের লোকদের জন্যই (কেয়ামতে) দ্বিগুণ পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে, তারা জান্নাতের (সুরম্য) বালাখানায় নিরাপদে অবস্থান করবে, কেননা তারা নেক আমল করেছে। (সূরা সাবা : ৩৫-৩৭)
সমস্যা সঙ্কটে ভরা এই দুনিয়ায় সবার মনে রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কেউই অমুখাপেক্ষী নয়।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘তিনি (আল্লাহ) মানুষের জন্য কোনো অনুগ্রহের পথ খুলতে চাইলে কেউই তার (সে) পথরোধকারী নেই, (আবার) তিনি যা কিছু বন্ধ করে রাখেন তারপর তা কেউই তার জন্য (পুনরায়) পাঠাতে পারে না, তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রবল প্রজ্ঞাময়।’
হে মানুষ, তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করো; আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কি তোমাদের আর কোনো স্রষ্টা আছে যে তোমাদেরকে আসমান ও জমিন থেকে রিজিক সরবরাহ করে; তিনি ছাড়া (তোমাদের) আর কোনোই মাবুদ নেই, তারপরও তোমরা কোথায় কোথায় ঠোকর খাচ্ছ?
(হে নবী,) যদি এরা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তাহলে উদ্বিগ্ন হয়ো না, কেননা, তোমার আগেও নবীদের (এভাবে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছিল; আর সবকিছু তো আল্লাহ তায়ালার কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।
হে মানুষ, (আখিরাত সম্পর্কিত) আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা অবশ্যই সত্য, সুতরাং দুনিয়ার এ জীবন যেন তোমাদের কোনো দিনই প্রতারিত করতে না পারে। কোনো প্রতারক যেন তোমাদের আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে কখনো ধোঁকায় ফেলতে না পারে (সে বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকবে)।
শয়তান হচ্ছে তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো; সে তার দলবলকে এ জন্যই আহ্বান করে যেন তারা (তার আনুগত্য করে) জাহান্নামের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারে;
যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করে তাদের জন্য এক কঠিন শাস্তি রয়েছে, (অপর দিকে) যারা (তাঁর ওপর) ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে (তোমার মালিকের) ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। (সূরা ফাতির : ২-৭)
ক্ষমাশীল পরম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-কে জগদ্বাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন।
জারির রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী কারিম সা: থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যাকে কোমলতা ও নম্রতা থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করা হয়।’ (মুসলিম)
ইসলামের সৌন্দর্য ও নীতি হচ্ছে- মুমিন কখনো অন্যের প্রতি অবিচার করতে পারে না। অন্যায়ভাবে পরের সম্পদ হস্তগত এমনকি কারো সম্মান ক্ষুণœ করতে পারে না। কেননা মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। আর একমাত্র ইসলামের মধ্যেই রয়েছে শান্তিপূর্ণ জীবনের শতভাগ গ্যারান্টি।
মুমিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেন-
‘মুহাম্মাদ আল্লাহ তায়ালার রাসূল; অন্য যেসব লোক তাঁর সাথে আছে তারা (নীতির প্রশ্নে) কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, (আবার তারা) নিজেদের মধ্যে একান্ত সহানুভূতিশীল, তুমি (যখনই) তাদের দেখবে, (দেখবে) তারা রুকু ও সাজদাবনত অবস্থায় রয়েছে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করছে, তাদের (বাহ্যিক) চেহারায়ও (এ আনুগত্য ও) সাজদার চিহ্ন রয়েছে; তাদের উদাহরণ যেমন (বর্ণিত রয়েছে) তাওরাতে, (তেমনি) তাদের উদাহরণ রয়েছে ইঞ্জিলেও, (আর তা হচ্ছে) যেমন একটি বীজ যা থেকে বেরিয়ে আসে একটি (ছোট্ট) কিশলয়, এরপর তা শক্ত ও মোটাতাজা হয় এবং (পরে) স্বীয় কাণ্ডের ওপর তা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে যায়, (চারাগাছটির এ অবস্থা তখন) চাষির মনকে খুশিতে উৎফুল্ল করে তোলে, (এভাবে একটি মুমিন সম্প্রদায়ের পরিশীলনের ঘটনা দ্বারা) আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের মনে (হিংসা ও) জ্বালা সৃষ্টি করেন; (আবার) এদের মাঝে যারা (আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের ওপর) ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য তাঁর ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ (সূরা ফাতাহ-২৯)
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক


আরো সংবাদ



premium cement