১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

দোয়ার মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন

-

আল্লাহ তায়ালা অসীম দয়ালু। আমরা তাঁর কাছ থেকে অসংখ্য নিয়ামত পাচ্ছি প্রতিদিন। তার মধ্যে অন্যতম হলো দোয়া কবুল হওয়া। দোয়া হলো ইবাদতের মগজ। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত’। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মানুষের প্রয়োজনীয় অনেক কিছু মানুষ না চাইতেই আল্লাহর কাছ থেকে পেয়ে থাকেন, এটি আল্লাহর অশেষ রহমত। আর মানুষের প্রয়োজনীয় এমন অনেক কিছু আছে যার জন্য মানুষকে আল্লাহর কাছে সর্বদা চাইতেই হয়, এই চাওয়ার নামই হচ্ছে দোয়া। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে অনেক বিপদ-আপদ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়, যার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে। এই দোয়া হাত তুলে করতে হবে এমন কোনো কথা নেই, যখন যা দরকার ছোট-বড় সব প্রয়োজনের জন্য আল্লাহর কাছে একাগ্রচিত্তে চাওয়াই দোয়া। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা আমার কিছয চাও আমি তোমাদেরকে দেবো।’
আল্লাহর কাছে বান্দা কিছু চাইলে আল্লাহ তাতে খুশি হন, হাদিসে আছে- ‘আল্লাহর কাছে দোয়া অপেক্ষা অধিক প্রিয় জিনিস আর কিছুই নেই।’ অতএব দোয়া থেকে বিরত থাকা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তার কাছে সব ক্ষমতাই আছে বান্দার সব প্রয়োজন মেটানোর। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ^াস করে মনে-প্রাণে তার প্রতি ঈমান এনে খুব আর্জির সাথে মন দিয়ে কাতর স্বরে জড়োসড়ো হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলে আল্লাহ তাকে খালি হাতে ফেরান না। চাইলেই যে সব পাওয়া যায় তা ঠিক নয়, মানুষের চাওয়ার মধ্যে অনেক ভুল আছে। যখন মানুষ রাগান্বিত, ক্রোধে খারাপ চায়, তখন সে বান্দা চাইলেই আল্লাহ তাকে তা দেবেন না। আবার অনেক সময় দুনিয়ার প্রয়োজন এমন জিনিসের জন্য কিছু চাইলে তা বান্দার জন্য কখনো উপকারী হয়, আবার কখনো অপকারীও হয়, কিন্তু বান্দা তা জানে না। সে গায়েবানা শুধু আল্লাহ তায়ালার আছে, তাই উপকারী হলে তা বান্দাকে দান করেন, অপকারী হলে নয়।
আমরা দোয়া করার ক্ষেত্রে নানা অবহেলা ও বাহানা করে থাকি বা দোয়া করার জন্য নির্দিষ্ট করে নামাজের পরের সময়টিই বেছে নিয়েছি। কিন্তু আল্লাহ বলেন- ‘আমার কাছে দোয়া চাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। যখন যে মুহূর্তে যার যা প্রয়োজন হবে তোমরা তাই আমার কাছে চাইবে। দোয়ার প্রকৃত হাকিকত কী? দোয়ার প্রকৃত হাকিকত হলো বান্দার প্রয়োজনে একাগ্রচিত্তে এক ধ্যানে, এক মনে আল্লাহর ওপর বিশ^াস রেখে (যে একমাত্র আল্লাহই প্রয়োজন মেটানোর মালিক) আল্লাহর কাছে মনে মনে বা মুখে কিছু চাওয়া, এরকম দোয়া করিয়া দেখ আল্লাহ দেন কি না। হাদিসে আছে- রাসূল সা: বলেন, ‘দোয়া সর্বাবস্থায় উপকারে আসে, সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা খুব বেশি করে দোয়া করো।’ রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কাছে বান্দার দোয়া কবুল হয়, যদি গুনাহ বা আত্মীয়তা ছেদনের দোয়া না করা হয় এবং সে তাড়াহুড়ো না করে।’ হুজুর সা:-এর কাছে আরজ করা হলো, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ তাড়াহুড়ো অর্থ কী? হুজুর সা: ফরমাইলেন, ‘তাড়াহুড়ো অর্থ এই যে, দোয়া করার পর দোয়াপ্রার্থী বলে যে, কতবার দোয়া করলাম কিন্তু দোয়া কবুল হতে দেখলাম না, এরূপ বিরক্ত হয়ে দোয়া করা থেকে বিরত থাকা।’ এই হাদিসে বুঝা যায়, যদিও দোয়া কবুল হচ্ছে না বলে মনে হয় তবু রীতিমতো দোয়াতে মশগুল থাকা চাই, কখনো দোয়া থেকে বিরত থাকা উচিত নয়।
আল্লাহর প্রতি বিরক্ত বোধ হলে (নাউজুবিল্লাহ) তার ঈমান চলে যাওয়ার ভয়ও রয়েছে। সুতরাং আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দোয়া কবুল করার জন্য বিভিন্ন রকম সুযোগ খোঁজেন। যারা সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে সর্বাবস্থায় দোয়ার হাত সম্প্রসারিত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের খালি হাত ফিরিয়ে দেন না। সে জন্য দিন-রাতের কিছু মুহূর্ত ঠিক করে রেখেছেন যখন দোয়া কবুল হয়। যেমন- আজান ও ইকামতের সময়- হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত- হজরত মুহাম্মদ সা: বলেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না’ (তিরমিজি-১৯৬) রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া কবুল হয়। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, ‘প্রত্যেক দিন রাতের শেষে তৃতীয়াংশে আল্লাহ সবচেয়ে নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকছ, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছ, আমি তাকে তা দেবো। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো।’ (মুসলিম-১২৬৩) শেষ রাতে, সাহাবি হজরত জাবের রা: থেকে বর্ণিত) হজরত মুহাম্মদ সা: ইরশাদ করেন, ‘শেষ রাতের যেকোনো সময় কোনো মুসলিমের এমনটি হয় না যে, সে পৃথিবী বা পরকালের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইল আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটি প্রতিটি রাতেই ঘটে।’ (মুসলিম-১২৫৯)
জমজমের পানি পান- মহানবী সা: বলেন, ‘জমজমের পানি যে নিয়তে পান করা হবে তা কবুল হবে।’ (ইবনে মাজাহ-৩০৫৩) রাতে ঘুম থেকে জেগে- সাহাবি হজরত উবাদা বিন সামিত রা: থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ সা: বলেন, যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে; ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। সুবহানাল্লাহি ওয়া আলহামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে, ‘আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) অথবা আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করে, তাহলে কবুল করা হবে।’ (বুখারি-১০৮৬)
সেজদার সময়- হজরত মুহাম্মদ সা: বলেন, ‘যে সময়টিতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থায় থাকে তা হলো সেজদার সময়। ‘তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশি চাও।’ (মুসলিম-৭৪৪) ফরজ নামাজের পর- সাহাবি হজরত আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত- হজরত মুহাম্মদ সা:-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি বলেন, ‘রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পরে।’ (তিরমিজি-৩৪২১) বৃষ্টি ও আজানের সময়- হজরত মুহাম্মদ সা: বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া ও বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া।’ (আবু দাউদ-২১৭৮) তাই কুরআনে ও হাদিসে আল্লাহ আমাদের এমন অনেক দোয়াই শিখিয়ে দিয়েছেন যা আমাদের প্রতিদিন পড়তে হয়, এসব দোয়া দ্বারা দুই ধরনের উপকার হয়- যেমন দোয়া চাওয়াতে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন, অন্যটি হলো দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর শোকরানা আদায় হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া কবুলের যে সুযোগ দিয়েছেন সেটি অনেক বড় প্রাপ্তি। আমাদের সেটি কাজে লাগানো উচিত।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement