রাসূল সা:-এর আদর্শে গড়তে হবে ব্যভিচারমুক্ত সমাজ
- আসাদুজ্জামান আসাদ
- ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মানবতার মহানায়ক মুক্তির দূত হজরত রাসূল সা: বিশ্ববাসীর জন্য রাহমাতুল্লিল আলামিন। তাঁর আচার-আচরণ, আমল-আখলাক, চিন্তাচেতনা, চলন-বলন প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে অনন্ত প্রশান্তি ও রহমত। তিনি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রসহ সর্বক্ষেত্রে শান্তির মহাদূত। তিনি রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সমরনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, পরিবারনীতিসহ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মানুষের জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিলেন। সমাজ থেকে মদ, জুয়া, ব্যভিচার, জুুলুম-শোষণ, বৈষম্য দূর করেন। বিশ্বনবী সা: সমাজজীবন থেকে ব্যভিচার দূর করে জাতিকে সুখ-শান্তিপূর্ণ একটি সমাজ উপহার দিয়েছেন। ব্যভিচার একটি মরণব্যাধি। মহান আল্লাহর রহমত বন্ধ এবং গজব ও মহামারী হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ব্যভিচার। মহান আল্লাহ মানুষকে ব্যভিচার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে- ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না; নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সূরা ইসরা-৩২৯)
বিশ্বনবী সা: জন্মগ্রহণ করেন জাহিলি যুগে। যে সমাজ ছিল অন্ধকারে ভরপুর। তিনি সেই অন্ধকার সমাজকে নূরের আলোয় আলোকিত করেন। সমাজ থেকে ব্যভিচার দূর করেন। কোনো মেয়েকে ব্যভিচার করা কিংবা পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা, পাচার করা হারাম কাজ। যেহেতু ব্যভিচার একটি জঘন্যতম অপরাধ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর, কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হবে।’ (সূরা মুমিনুন : ৫-৭) ব্যভিচারের শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন- ‘ব্যভিচারী নারী ব্যভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে ১০০ করে বেত্রাঘাত করো।’ (সূরা নূর-২) বিশিষ্ট সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস রা: ১০০ কশাঘাতের শাস্তিকে অবিবাহিত পুরুষ ও নারীর জন্য নির্দিষ্ট করে বলেন, ‘সেই পথ ও ব্যভিচারের শাস্তি এই যে, বিবাহিত পুরুষ ও নারী এ অপরাধ করলে ১০০ কশাঘাত করা হবে।’ হজরত আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি যিনি সাক্ষ্য দেন যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তিন তিনটি কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। যথা- প্রাণের বদলে প্রাণ, বিবাহিত ব্যভিচারিণী, আর আপন দ্বীন পরিত্যাগকারী মুসলিম বিছিন্ন ব্যক্তি।’ আমরা মুসলিম জাতি। শরিয়তের বিধিবিধান অনুযায়ী বিয়ে ছাড়া নারীকে স্পর্শ করা সম্পূর্ণভাবে হারাম। হাদিস শরিফে পরনারীকে র্স্পশ করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। হজরত মাকিল ইবনে ইয়াসক রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘হালাল নয় এমন নারীকে স্পর্শ করার চেয়ে তোমাদের কেউ নিজের মাথায় লোহার সুই দিয়ে আঘাত করা উত্তম।’ ব্যভিচার ঈমানের সাথে কখনো একত্রিত হয় না। হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘ব্যভিচারী ব্যক্তি ব্যভিচার করা অবস্থায় মুমিন থাকে না’।
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেন, ‘যখন বান্দা ব্যভিচার করে, তখন তার থেকে ঈমান বেরিয়ে পড়ে এবং তার মাথার ওপর ছায়ার মতো উড়ন্ত থাকে। অতঃপর যখন সে এই অপকর্ম থেকে ফারেগ হয়ে যায়, তখন পুনরায় ঈমান ফিরে আসে।’ হজরত আনাস রা: বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলো- ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞানতার প্রসার ঘটবে, মাদকের বিস্তার ঘটবে এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।’ হজরত আবদুল্লাহ রা: বর্ণিত হাদিসে বিশ্বনবী সা: বলেন, ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে সমকক্ষ সাব্যস্ত করো অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। লোকটি বলল, এরপর কোনটি? তিনি বললেন তারপর হলো- তুমি তোমার সন্তানকে এ ভয়ে হত্যা করো যে, সে তোমার সাথে আহার করবে। লোকটি বলল এরপর কোনটি? তিনি বললেন, তারপর হলো তুমি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে জেনা করো। অতঃপর আল্লাহ এ কথার সত্যায়নে অবতীর্ণ করেন- ‘এবং তারা আল্লাহর সাথে কোনো ইলাহকে ডাকে না, আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে।’ (সূরা নিসা)
ব্যভিচার সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ থেকে শান্তি চলে যায়। পতিতাবৃত্তির মাধ্যমে টাকা উপাজন করে খাওয়া সম্পূর্ণভাবে হারাম। হজরত আবু মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: কুকুরের মূল্য, গণকের পারিশ্রমিক এবং বেশ্যার উপার্জন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’ হজরত আবু জুহায়ফা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: অভিসম্পাত করেছেন, উল্কি অঙ্কনকারিণী, উল্কি গ্রহণকারিণী, সুদগ্রহীতা ও সুদদাতাকে। আর তিনি কুকুরের মূল্য ও বেশ্যার উপার্জন ভোগ করতে নিষেধ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘কুকুরের মূল্য, গণকের পারিশ্রমিক এবং বেশ্যার উপার্জন গ্রহণ করা হালাল নয়।’
আমরা আধুনিক যুগের মানুষ। নারী-পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশা করি। নারীর নৃত্য প্রদর্শন, গানবাজনা, নাচানাচি ইত্যাদি ব্যভিচারের অন্যতম উপকরণ, যা ইসলামী বিধিবিধানে সম্পূর্ণভাবে হারাম। যদি বস্ত্রহীনভাবে নারীরা চলাফেরা করে, সেটি গর্হিত অপরাধ। মাহারম পুরুষ ব্যতীত সব মহিলার সমস্ত শরীর, সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা সব পুরুষের জন্য অবৈধ। তা ছাড়া নৃত্য প্রদর্শন, নাচানাচি, গানবাজনা করা হারাম। যেহেতু এসব উপকরণ ব্যভিচারের দিকে আহ্বান করে। মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- ‘নারীরা যেন সজোরে পদক্ষেপ না করে, যদ্দরুন আহ্বানকারীদের আওয়াজ ভেসে ওঠে এবং তাদের বিশেষ সাজসজ্জা পুরুষদের কাছে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।’ (সূরা নূর) এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ তায়ালা বেগানা পুরুষের কাছে সাজসজ্জা প্রকাশ করতে নারীদেরকে নিষেধ করেন। হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘এমন কিছু মহিলার আবির্ভাব ঘটবে, যারা কাপড় পরবে ঠিকই, তবে উলঙ্গের মতো দেখা যাবে। তারপর, পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে এবং নিজেদের দিকে পরপুরুষকে আকৃষ্ট করবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুগন্ধীও পাবে না। অথচ জন্নাতের সুগন্ধী ৫০০ বছরের দূরবর্তী ব্যবধানে পাওয়া যাবে।’ সুতরাং, প্রমাণিত হলো যে- নৃত্য প্রর্দশন ও নাচগান কোনোভাবেই বৈধ নয়। তা ছাড়া প্রত্যেক মুসলমানের উচিত নিজের অধীনস্থ মেয়েদেরকে পর্দা মেনে চলার জন্য ব্যবস্থা করা। যদি না করে সেসব পুরুষ দায়ুসের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবন ওমার রা: বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘তিন ব্যক্তির ওপর জান্নাত হারাম- মদ পানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, ওই দায়ুস যে নিজের পরিবারভুক্ত মহিলাদেরকে বেপর্দা চলার ব্যবস্থা করে।’ সমাজে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন পাপ বর্জন করো। যারা পাপ করে তাদেরকে অচিরেই তাদের পাপের সমুচিত শাস্তি দেয়া হবে।’ (সূরা আনআম)
সুতরাং, অপরাধমুক্ত সমাজ তৈরি ও দেশের উন্নয়ন, জাতির সুরক্ষার জন্য ব্যভিচারের মূলোৎপাটন করা প্রয়োজন। সমাজজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে রাসূল সা:-এর আদর্শকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। রাসূল সা:-এর আদর্শ নিয়ে ব্যভিচার, মদ, জুয়ামুক্ত সমাজ গঠন করার জন্য পরস্পর পরস্পরের সাথে ঐক্য পোষণ করা প্রয়োজন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও গ্রন্থকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা