১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

মুমিনের দৈনন্দিন জীবন

-

মুমিন সারা বছরই আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। সারা বছর কিভাবে আমরা আমলের ধারা চালু রাখতে পারি সে বিষয়ে নিম্নে আলোকপাত করা হলো :

১. নফল রোজার অভ্যাস গড়ে তোলা : রমজান ছাড়াও অবশিষ্ট মাসগুলোতে বহু নফল রোজা রয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী সেসব রোজা রাখার চেষ্টা করা। যেমন- শাওয়াল মাসের ছয় রোজা, আইয়ামে বিজের রোজা, প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবারের রোজা, আরাফার দিনের রোজা, আশুরার রোজা, শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা ইত্যাদি। নিচে এগুলোর সংক্ষেপে বিবরণ দেয়া হলো-

ক. শাওয়াল মাসের ছয় রোজা : রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখল। এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।’ (মুসলিম- ১১৬৪)

খ. আইয়ামে বিজের রোজা : অর্থাৎ প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ এই তিন দিনের রোজা। আর শরয়ি পরিভাষায় এ দিনগুলো ‘আইয়ামে বিজ’ নামে পরিচিত। ‘বিজ’ আরবি শব্দ, এর অর্থ : সাদা, উজ্জ্বল। প্রত্যেক চান্দ্রমাসের এ দিনগুলোতে যেহেতু চাঁদের আলো পূর্ণ উজ্জ্বল থাকে এ জন্য এই তারিখগুলোকে ‘আইয়ামে বিজ’ বলা হয়। হাদিস শরিফে আছে, রাসূলুল্লাহ সা: একবার হজরত আবু জর গিফারি রা:-কে লক্ষ করে বলেন, ‘হে আবু জর! তুমি যদি মাসে তিন দিন রোজা রাখো তবে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রাখো।’ (জামে তিরমিজি-৭৬১)
অপর এক হাদিসে নবী কারিম সা: ইরশাদ করেন, ‘প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা এবং সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য।’ (মুসলিম-১১৬২)

গ. আরাফার দিনের রোজা : রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, (এর দ্বারা) বিগত বছরের এবং পরবর্তী বছরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (মুসলিম-১১৬২)

ঘ. আশুরার রোজা : হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আশুরার রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এর দ্বারা তিনি বিগত বছরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (মুসলিম-১১৬২)

ঙ. প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবারের রোজা : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, আমার আমল পেশ করা হোক এমতাবস্থায় যে, আমি তখন রোজাদার।’ (জামে তিরমিজি-৭৪৭)

চ. শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা : শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখা উত্তম। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে- উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা: বলেন, ‘আমি তাঁকে শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত অধিক রোজা রাখতে দেখিনি। তিনি (যেন) গোটা শাবান মাসই রোজা রাখতেন। তিনি সামান্য (কয়টি দিন) ব্যতীত পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন।’ (মুসলিম-৭৮১)

২. নফল নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
নফল নামাজ পড়ার অভ্যাস পুরো বছরই রক্ষা করা উচিত। আর তা হবে বিভিন্ন নফল নামাজের মাধ্যমে। যেমন- কিয়ামুল লাইল, সুন্নাতে রাতেবা, ইশরাক/চাশত, তাহিয়্যাতুল অজু, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ইত্যাদি নফল নামাজের মাধ্যমে। নিচে এগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

ক. সুন্নাতে রাতেবার অভ্যাস গড়ে তোলা : দৈনিক ফরজ নামাজের আগে ও পরে ১২ রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদাহ নামাজ আদায় করা। যথা- জোহরের আগে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পর দুই রাকাত, এশার পর দুই রাকাত এবং ফজরের আগে দুই রাকাত। নবী কারিম সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিবারাত্রিতে ১২ রাকাত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করবে, বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। (মুসলিম-৭২৮)

খ. কিয়ামুল লাইলের অভ্যাস গড়ে তোলা : কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদ নামাজ সারা বছরের নফল নামাজ। তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত প্রসঙ্গে নবীজি সা: বলেন, ‘ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম (নফল) নামাজ হলো- রাতের নামাজ তথা তাহাজ্জুদ।’ (মুসলিম-১১৬৩)

গ. ইশরাক/চাশতের অভ্যাস গড়ে তোলা : প্রতিদিন সকালে দুই-চার রাকাত ইশরাকের নামাজ পড়া। সূর্যোদয়ের প্রায় ২০ মিনিট পর থেকে এই নামাজ পড়া যায়। এর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি দিনের শুরুতে আমার জন্য চার রাকাত নামাজ আদায় করো, আমি পুরো দিন তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাব।’ (জামে তিরমিজি-৪৭৫)

ঘ. তাহিয়্যাতুল অজুর অভ্যাস গড়ে তোলা : দুই রাকাত করে তাহিয়্যাতুল অজুু ও দুখুলুল মাসজিদ নামাজ নিয়মিত আদায় করা যায়। অজু করার পর মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে বিলম্ব না করে দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব। এই নামাজকে ‘তাহিয়্যাতুল অজু’ বলা হয়। হাদিস শরিফে এই নামাজের অনেক ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজুু করবে, এরপর দেহ-মন (আল্লাহর দিকে) ধাবিত করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে, সে (যেন) নিজের জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে নিলো।’ (সুনানে আবু দাউদ-১৬৯)

ঙ. তাহিয়্যাতুল মাসজিদের অভ্যাস গড়ে তোলা : মসজিদে প্রবেশ করে সময় থাকলে বসার আগে এবং মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে অন্তত দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। রাসূলে কারিম সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, সে যেন বসার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে নেয়।’ (বুখারি-৪৪৪)

৩. কুরআন তিলাওয়াতের ধারা অব্যাহত রাখা
কুরআনে কারিমের তিলাওয়াত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাসম্বলিত একটি আমল। নবী কারিম সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করল, তার বিনিময়ে সে একটি নেকি লাভ করল। ওই একটি নেকি ১০টি নেকির সমতুল্য গণ্য করা হবে। আমি বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মিম’ একটি হরফ; বরং ‘আলিফ’ একটি হরফ, ‘লাম’ একটি হরফ এবং ‘মিম’ একটি হরফ।’ (জামে তিরমিজি-২৯১০)

৪. দোয়া ও দান-সাদকার অভ্যাস ধরে রাখা
দোয়া মুমিনের জীবনের অনেক বড় হাতিয়ার। এর মাধ্যমে সে আল্লাহর কাছ থেকে সব কিছুই আদায় করে নিতে পারে। সারা বছর দান-সাদকার আমলের দ্বার উন্মুক্ত। অতএব সামর্থ্য অনুযায়ী সারা বছরই দান-সাদকার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা উচিত। কেননা দান-সাদকার দ্বারা সম্পদ হ্রাস পায় না; বরং বৃদ্ধি হয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-সাদকাকে বৃদ্ধি করেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৬)
অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘দান-সাদকাহ সম্পদ হ্রাস করে না।’ (মুসলিম-২৫৮৮)

৫. জিকির ও দৈন্দিন আমলের ধারা অব্যাহত রাখা
হাদিস শরিফে বর্ণিত- বিভিন্ন সময় ও মুহূর্তে পঠিতব্য মাছুর দোয়া ও জিকির, নামাজের পরে ও সকাল-সন্ধ্যার ফজিলতপূর্ণ তাসবিহ ও জিকিরসমূহ নিয়মিত পাঠ করা।
লেখক : শিক্ষক, মাদরাসা আশরাফুল মাদারিস,
তেজগাঁও, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement
স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা মাথাচাড়া দিচ্ছে : তারেক রহমান সারাদেশে মডেল মসজিদ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা হবে : ধর্ম উপদেষ্টা আফগানিস্তানের তিনটি প্রদেশে মানুষসহ জীবন্ত কোনো প্রাণীর ছবি দেখানো নিষিদ্ধ ভ্যান হারিয়ে দিশেহারা বক্কারের মুখে হাসি ফোটাল জামায়াত তারেক রহমানের সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে : ডা. ইরান শেখ হাসিনার অহংকার আর ক্ষমতার দাপট তার পতনের কারণ : ড. রেজাউল ভারতের উপর কানাডা নিষেধাজ্ঞা জারি করলে কোন দেশের বেশি ক্ষতি হবে শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা গফরগাঁওয়ে ইঞ্জিন বিকল, প্রায় ৩ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ‘আ’লীগ মেগা প্রকল্পের নামে সীমাহীন দুর্নীতি করেছে’ ‘সন্তান নিতে ভয়ের’ কারণ খুঁজতে চীনে সমীক্ষা

সকল