জুমার দ্বিতীয় আজান প্রচলনের ইতিহাস
- ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
- ২৭ মে ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ২৭ মে ২০২৪, ০৫:১৯
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় আজান একবার দেয়া হলেও জুমার আজান দুবার দেয়া হয়। দ্বিতীয় আজানের ইতিহাস তুলে ধরা হলো।
প্রথম যুগে জুমার আজান
আল্লাহর রাসূল সা: এবং হজরত আবু বকর ও হজরত উমর রা:-এর জমানায় জুমার দিন মাত্র একটি আজান ও ইকামত প্রচলিত ছিল। হজরত সায়িব ইবনে ইয়াজিদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, মদিনার অধিবাসীদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন জুমার দিন দ্বিতীয় আজান যিনি চালু করলেন, তিনি হলেন হজরত উসমান ইবনে আফফান রা:। নবী করিম সা:-এর সময় জুমার জন্য একজন মোয়াজ্জিন ছিল এবং জুমার দিন আজান দেয়া হতো, যখন ইমাম বসতেন অর্থাৎ মিম্বরের ওপর খুতবার আগে। (বুখারি-৮৬৭)
দ্বিতীয় আজানের প্রচলন
হজরত উসমান রা:-এর খিলাফতকালে দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। বহু এলাকা মুসলমানদের খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন তিনি সবাইকে জুমার নামাজ সম্পর্কে জানানোর জন্য সাহাবায়ে কেরামের সম্মতিতে দ্বিতীয় আজানের প্রচলন করেন। হজরত সায়িব ইবনে ইয়াজিদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী করিম সা: হজরত আবু বকর রা: এবং হজরত উমর রা:-এর সময় জুমার দিন ইমাম যখন মিম্বরের ওপর বসতেন তখন প্রথম আজান দেয়া হতো।
দ্বিতীয় আজান সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত
দ্বিতীয় আজানের প্রবক্তা হজরত উসমান ইবনে আফফান রা: হওয়ার কারণে তাকে বিদয়াত বলা কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত, উম্মতের জন্য অনুসরণীয়। হজরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রা: বলেন, একদিন ফজরের নামাজের পর রাসূলুল্লাহ সা: আমাদেরকে এমন এক নসিহত করলেন যে, তাতে আমাদের চক্ষু থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে লাগল এবং অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তখন এক ব্যক্তি বললেন, এ তো বিদায়ী ব্যক্তির মতো নসিহত-ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমাদের ওপর কি ওসিয়ত করে যাচ্ছেন? তিনি বললেন, ‘তোমাদের আমি আল্লাহকে ভয় করার ওসিয়ত করছি, যদি এ হাবশি গোলামও আমির নিযুক্ত হয়, তবুও তার প্রতি অনুগত থাকবে। তার নির্দেশ শুনবে। তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা বহু বিরোধ প্রত্যক্ষ করবে। তোমরা সাবধান থাকবে নতুন নতুন বিষয়ে লিপ্ত হওয়া থেকে। কারণ তা হলো গোমরাহি। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ওই যুগ পাবে তার কর্তব্য হলো- আমার সুন্নত এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নতের ওপর অবিচল থাকা। এগুলো তোমরা চোয়ালের দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকবে।’ (সুনানে আবু দাউদ-৪৫৫২)
জুমার আজানের পর যেসব কাজ করা যাবে না
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা জুমার আজানের পর যে বেচাকেনা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন, তা মূলত জুমার দ্বিতীয় আজান। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করো।’ (সূরা জুমুআ-৯)
আলেমগণ বলেন, জুমার দ্বিতীয় আজানের পর সব ধরনের পার্থিব কাজকর্ম করা হারাম। এতে কারো দ্বিমত নেই।
আর প্রথম আজান সম্পর্কে ফকিহরা বলেছেন, প্রথম আজানের পরও জুমার প্রস্তুতিমূলক কাজ যেমন- গোসল, অজু, টয়লেট, কাপড় পরিধান ইত্যাদি ছাড়া অন্য কোনো কাজ করাও নাজায়েজ।
জুমার দিন জুমার খুতবা শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো ধরনের কথা বলা নিষেধ এবং চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা ওয়াজিব। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, “জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ করো’ বলো সেটিও অনর্থক।” (বুখারি-৮৯২, মুসলিম-২০০৫)
হাদিস দ্বারা সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়, খুতবার সময় নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শোনা ওয়াজিব ও কথাবার্তা বলা হারাম। অনুরূপ খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হবেন, তখন নামাজ পড়বে না, কথাও বলবে না।’ (মিশকাত, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪৩২)
জুমার দ্বিতীয় আজানের জবাবের বিধান
আজান শোনা ও আজানের উত্তর দেয়া সুন্নত। শ্রবণকারীরা আজানের উত্তর মৌখিকভাবে দিতে হয়। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা: হাদিসে বলেন, ‘যখন তোমরা আজান শুনবে, তখন জবাবে মুয়াজ্জিনের মতো তোমরাও তা বলবে।’ (বুখারি-৬১১)
অনেকে জানতে চান, জুমার দ্বিতীয় আজান অর্থাৎ খুতবার আজানের উত্তর দেয়া ও দোয়া পড়া জায়েজ আছে কি না? এ বিষয়ে আলেমদের মতামত হলো- ফেকাহবিদদের নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী, জুমার দ্বিতীয় আজানের সময় যখন খতিব মিম্বরে বসা থাকেন, তখন এ আজানের উত্তর মৌখিক না দেয়াটা উত্তম। তা সত্ত্বেও কেউ দিতে চাইলে মনে মনে জবাব দিতে পারে। (আদ্দুররুল মুখতার-১/২৯৯, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-২/৫৮)
সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ: বলেন, ইমাম খুতবার জন্য বের হলে নামাজ পড়া যাবে না আর ইমাম খুতবা শুরু করলে কথা বলা যাবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা-৫৩৪২)
খুতবার সময় যেহেতু চুপ থাকা ও মনোযোগসহকারে খুতবা শোনা ওয়াজিব তাই আজানের পরপরই ইমাম খুতবা শুরু করে দিলে আজানের দোয়া পড়া যাবে না। কিন্তু যদি ইমাম খুতবার জন্য দাঁড়াতে বিলম্ব করেন তবে এ সময় আজানের দোয়া পড়া যাবে। (ফাতহুল বারি-২/৪৬০, ইলাউস সুনান-২/৮০, আসসিআয়াহ-২/৫৩, হাশিয়াতুত তহতাবি আলাল মারাকি-২৮২, আততাজরিদ-২/৪৭৭, আলমুগনি, ইবনে কুদামা-৩/২০০) ওই সময় হাত তুলে মুনাজাতের রীতি ভিত্তিহীন। এটা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা