১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসলামের দৃষ্টিতে ইতেকাফ

-

রোজা ফারসি ভাষার শব্দ। আরবি ভাষায় রোজাকে সাওম বলা হয়। সাওম ইসলামের মৌলিক স্তম্ভের অন্যতম। তাই প্রতিটি মুসলিমের জীবনে রমজান মাস ও সাওমের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, এই মাসে মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রত্যেক মুমিনের জন্য ক্ষমা, রহমত লাভ প্রভৃতির ঘোষণা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই মাসের শেষ দশক ‘নাজাতের ১০ দিন’ হিসেবে স্বীকৃত। এই শেষ দশকে ফরজ ইবাদত ব্যতীত অন্যান্য যেসব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রয়েছে, তন্মধ্যে ইতেকাফ অন্যতম। ইতেকাফ আরবি শব্দ। আরবি ‘আকফুন’ মূল ধাতু থেকে ইতেকাফ শব্দটি গঠিত। যার অর্থ বিচ্ছিন্নতা, কোনো স্থানে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা প্রভৃতি। শরিয়তের পরিভাষায়, ‘বিশেষ শর্তসাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মসজিদে অবস্থান ও আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে ব্যস্ত রাখাই হচ্ছে ইতেকাফ।’
পবিত্র কুরআনেও ইতেকাফ শব্দটির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী ও ইতেকাফকারী এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো’ (সূরা বাকারা-১২৫)। এ ছাড়া, আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের শরীর স্পর্শ করবে না, যখন তোমরা মসজিদে ইতেকাফরত থাকো’ (সূরা বাকারা-১৮৭)।
ইতেকাফের সময়সীমা : রমজান মাসের এই ইতেকাফের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে, যা হাদিসে নববী সা: স্বীকৃত। যেমন- নবীজী সা:-এর সহধর্মিণী হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- নবীজী সা: রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। তাঁর মৃত্যুকাল পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল (বুখারি-২০২৬)।
এ ছাড়া, রাসূলুল্লাহ সা:-এর ওফাতের বছরে ২০ দিন ইতেকাফ করার ব্যাপারে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন- আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- প্রতি বছর নবীজী সা: রমজানে ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর তিনি ২০ দিন ইতেকাফ করেন (বুখারি-৪৯৯৮)।

অর্থাৎ ইতেকাফের বিধিসম্মত সময় হচ্ছে, ২০ রমজান সূর্যাস্ত যাওয়ার কিছু আগে থেকে শুরু করে ২৯ অথবা ৩০ রমজান তারিখে অর্থাৎ ঈদের চাঁদ আকাশে উদিত হওয়ার সময় পর্যন্ত নির্ধারিত। এ জন্য ইতেকাফকারী ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগেই মসজিদে পৌঁছাবে এবং মসজিদের কোণে অবস্থান নেবেন। ইতেকাফকারী কুরআন তিলাওয়াত থেকে শুরু করে তাসবিহ পাঠসহ যাবতীয় জিকির-আসকার করতে পারেন।
ইতেকাফের শর্ত : তবে ইতেকাফে পূর্ণাঙ্গরূপে মনোনিবেশ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। তন্মধ্যে রোজা রাখা, মসজিদে অবস্থান করা প্রভৃতি অন্যতম, যা একজন ইতেকাফকারীর জন্য অবশ্যই পালনীয়। যেমন- হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ইতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হলো- ‘সে কোনো রোগী দেখতে যাবে না, জানাজায় অংশগ্রহণ করবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না, তার সাথে সহবাস করবে না এবং অধিক প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবে না, রোজা না রেখে ইতেকাফ করবে না এবং জামে মাসজিদে ইতেকাফ করবে (আবু দাউদ-২৪৭৩)।
শুধু তাই নয়, পুরুষদের পাশাপশি মহিলারাও ইতেকাফে বসতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তাদের জন্য উত্তম হচ্ছে- নিজ ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট স্থানে অথবা ঘরের যেকোনো পবিত্র স্থানে। যেমন হজরত আয়েশা রা: বলেন, ‘অতঃপর তাঁর সহধর্মিণীগণও (সে দিনগুলোতে) ইতেকাফ করতেন’ (বুখারি-৪৯৯৮)।

প্রসঙ্গত, বিবাহিত নারীর জন্য ইতেকাফে মনোনিবেশ করতে হলে অবশ্যই স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায়, নারীর জন্য ইতেকাফ বৈধ হবে না। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্বামীর উচিত, তার স্ত্রীকে ইতেকাফের অনুমতি দেয়া।
ইতেকাফের ফজিলত : ইতেকাফের বহুবিধ ফজিলত অর্থাৎ তাৎপর্য রয়েছে। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আল্লাহর ঘরের মেহমান হিসেবে অবস্থান এবং ইবাদতে মগ্ন থাকতে পারে। এমনকি গুনাহ মাফের পাশাপাশি অসংখ্য নেকি অর্জনেরও সুযোগ রয়েছে। যেমন- হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইতেকাফকারী সম্পর্কে বলেন, ‘সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সব নেকি তার জন্য লেখা হয়’ (ইবনে মাজাহ-১৭৮১)।
এ ছাড়া ইতেকাফের মাধ্যমে আরেকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদর বা শবেকদরের রাত অনুসন্ধান করা। কেননা, রাসূলুল্লাহ সা:-এর হাদিস দ্বারা স্বীকৃত যে, লাইলাতুল কদরের রাত রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতের যেকোনো একটি হবে। যেমন- নবীজী সা: বলেন, ‘তোমরা উহা (লাইলাতুল কদর) শেষ দশকে তালাশ করো এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ করো’ (বুখারি-২০২৭)।
এ জন্য ইতেকাফকারী রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকার মাধ্যমে সহজেই কদরের রাত লাভ করতে পারে। কেননা, এই রাতকে উত্তম রাত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম’ (সূরা কদর-৩)।

ইতেকাফের হুকুম : তবে ইতেকাফের হুকুম কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন- ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল প্রভৃতি। এ ক্ষেত্রে রমজান মাসের ইতেকাফের হুকুম হচ্ছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। শরিয়তের আলোকে এর বিধান হচ্ছে- এই জাতীয় বিধান এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে যেকোনো একজনকে অবশ্যই আদায় করতে হবে। সবাই আদায় করা জরুরি নয়। তবে কেউই যদি আদায় না করে, তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। এ জন্য নির্ধারিত সময়ের আগেই অন্যদের ইতেকাফে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যেন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একজন হলেও ইতেকাফে মনোনিবেশ করেন।
জেনে রাখা আবশ্যক, অর্থ বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ইতেকাফ করা জায়েজ নেই। ইসলামী শরিয়তে কঠোরভাবে এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামও একমত পোষণ করেছেন। তাই, এহেন কার্যাবলি থেকে সবার বিরত থাকা আবশ্যক। অন্যথায়, গুনাহগার হতে হবে।
লেখক : তরুণ গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে ৫৩ নাগরিকের উদ্বেগ ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে দুর্নীতি কে প্রশয় দেয়া হবে না : জাতীয় নাগরিক কমিটি ফতুল্লা থেকে অপহৃত ২ শিশু বরিশাল থেকে উদ্ধার মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করা শিক্ষককে চাকরিচ্যুতের দাবি টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি ট্রাম্প আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য দিবসে রিকের র‌্যালি ও মানববন্ধন অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল চুয়েটে র‌্যাগিংয়ের দায়ে ১১ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ঢাকায় উচ্চমাত্রার হর্ন ব্যবহার না করতে ডিএমপির নির্দেশনা তামিমের ঝড়ে জয় পেল চট্টগ্রাম তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা, কর্মকর্তা প্রত্যাহার

সকল