২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সন্তানের প্রতি পিতার কর্তব্য

-

আমরা সবসময় একটা বিষয় পড়ে ও শুনে আসছি তা হলো পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। পক্ষান্তরে এর আগে আরেকটা বিষয় রয়েছে যা আমরা খুব কমই আলোচনা করি। তাহলো সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার কর্তব্য। সন্তান মহান আল্লাহ তায়ালার এক মহা নেয়ামত তা যার সন্তান হয়নি তিনি সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করে থাকেন। অন্য দিকে পিতা-মাতাও সন্তানের জন্য মহা নেয়ামত, যার পিতা-মাতা অথবা দু’জনের একজন জীবিত নেই তার জন্য বিশাল এই পৃথিবী সঙ্কীর্ণ মনে হয়, বিশেষ করে যারা ছোট বেলায় তাদের দু’জনকে অথবা দু’জনের একজনকে হারায় কেবল তারাই বেশি উপলব্ধি করতে পারে পিতা-মাতা মহান প্রভুর মহা নেয়ামত। সন্তান লালন-পালনে পিতা-মাতার বিশেষ করে পিতার যে হকগুলো রয়েছে বাবা দিবসে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
১. কানে আজান দেয়া : সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার কানে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের বাণী পৌঁছে দেয়া পিতার কর্তব্য। যাতে করে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে না পারে। রাসূলুল্লাহ সা: হাসান ইবনে আলী রা: এর কানে আজান দিয়েছেন। (আবু দাউদ : ৫১০৫)
২. তাহনিক করা: তাহনিক অর্থ খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় কিছু চিবিয়ে সন্তানের মুখে দেয়া। আয়েশা রা: বলেন : ‘রাসূল সা:-এর কাছে শিশুদেরকে আনা হতো। তিনি তাদের জন্য বরকতের দোয়া করতেন এবং তাহনিক করতেন।’ (মুসলিম : ১০৬৯)
৩. সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখা : অর্থবহ নাম হওয়া নামের সৌন্দর্য। কেননা নাম জীবন চলার পথে প্রভাব ফেলতে পারে। রাসূল সা: বলেন : ‘তোমরা যখন আমার কাছে কোনো দূত পাঠাবে তখন সুন্দর চেহারা ও সুন্দর নামবিশিষ্ট ব্যক্তিকে পাঠাবে।’ (তিরমিজি : ২৮৩৯)
৪. আকিকা করা : রাসূলুল্লাহ সা: বলেন : প্রত্যেক নবজাতক তার আকিকার সাথে আবদ্ধ। জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে জবেহ করা হবে। ঐ দিন তার নাম রাখা হবে। আর তার মাথার চুল কামানো হবে। (আবু দাউদ : ২৮৩৮)
৫. কুরআন ও সুশিক্ষা দেয়া : ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিতে হবে। কুরআন শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম কাজ আর নেই। পাশাপাশি সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে। সন্তানকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে পারলেই উভয় জগতে পিতা-মাতার কল্যাণে আসবে।
৬. সালাত শিক্ষা দেয়া : সন্তানকে ছোট থেকেই ইবাদত পালনে অভ্যস্ত করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘তুমি তোমার পরিবারকে সালাতের আদেশ দাও এবং তুমি এর ওপর অবিচল থাকো। (আল কুরআন, ২০:১৩২) রাসূলুল্লাহ সা: বলেন : ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে সালাতের নির্দেশ দাও। আর আট বছর বয়সে সালাতের জন্য মৃদু প্রহার করো এবং শোয়ার স্থানে ভিন্নতা আনো। (আবু দাউদ:৪৯৫)
৭. আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া : পিতা-মাতার অন্যতম কর্তব্য হলো সন্তানকে আদব শিক্ষা দেয়া। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন : তোমরা নিজেদের ও পরিবার পরিজনদের আল্লাহ ভীতির ব্যাপারে উপদেশ দাও এবং শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।’ (বুখারি : ২৮১) ওমর রা: জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন : ‘তোমার সন্তানকে আদব শিক্ষা দাও। কারণ তুমি তোমার সন্তানের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে যে, তুমি তাকে কী আদব শিখিয়েছ, তুমি তাকে কী শিক্ষাদান করেছ? (বায়হাকি : ৪৮৭৭)
৮. সক্ষম করে তোলা : সন্তানদের এমনভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা, তারা যেন উপার্জন করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘তোমরা সন্তানদের সক্ষম ও স্বাবলম্বী করে রেখে যাওয়া, অভাবী ও মানুষের কাছে হাতপাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। (বুুখারি : ১২৯৫)
৯. বিয়ে দেয়া : সন্তানের উপযুক্ত সময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করা। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘নিশ্চয় পিতার ওপর সন্তানের হকের মধ্যে রয়েছে, সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তকে বিয়ে দিবে।’
১০. সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা : সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূলুল্লাহ সা: এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন : ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো। (বুখারি :২৫৮৭)
মা-বাবা হওয়া সহজ হলেও দায়িত্বশীল মা-বাবা হওয়া সহজ নয়। সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারলে সন্তানের কারণে উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। তাই আমাদের সন্তানের জন্য দোয়া করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি তাদের মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (আল কুরআন, ২৫:৭৪)। আমিন।
লেখক : হেড অব ডিপার্টমেন্ট, মানার এডুকেশন কমপ্লেক্স, ঢাকা

 


আরো সংবাদ



premium cement