১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

ইসলামই একমাত্র মুক্তির পথ

-

ইসলামের শাব্দিক অর্থ আনুগত্য করা। পরিভাষায় একটি বিশেষ ধর্মের আনুগত্য করার নাম ইসলাম, যা আল্লাহ তায়ালা পয়গম্বরদের মানবজাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করেছেন। কেননা, সব পয়গম্বরের শরিয়তে ধর্মের মূলনীতি এক ও অভিন্ন।
এরপর ইসলাম শব্দটি কখনো উপরোক্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়, যা শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। কুরআনুল কারিমে উভয় প্রকার ব্যবহারই বিদ্যমান। পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণ নিজেকে ‘মুসলিম’ এবং নিজ নিজ উম্মতকে ‘উম্মতে মুসলিমাহ’ বলেছেন, এ কথাও কুরআন থেকেই প্রমাণিত। শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর উম্মতকে বিশেষভাবে ‘মুসলিম’ বলাও কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদের পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সঙ্কীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহিমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কুরআনেও, যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্য। সুতরাং তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।’
(সূরা : হজ : ৭৮)
মোট কথা, যেকোনো পয়গম্বর আল্লাহর যেসব ধর্ম নিয়ে জগতে এসেছেন, তাকেই ইসলাম বলা হয় এবং হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর উম্মতের বিশেষ উপাধি হিসেবেও এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এখন প্রশ্ন হয় যে, আলোচ্য আয়াতে ইসলাম শব্দ দ্বারা কোন অর্থ বোঝানো হয়েছে।
বিশুদ্ধ অভিমত এই যে, যে কোনো অর্থই বোঝানো হোক, পরিণামের দিক দিয়ে তাতে কোনো পার্থক্য হয় না। কেননা, পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণের ইসলাম একটি সীমিত শ্রেণীর জন্য এবং বিশেষ জমানার জন্য ছিল। ওই শ্রেণীর উম্মত ছাড়া অন্যদের জন্য তখনো সেই ইসলাম গ্রহণযোগ্য ছিল না। সেই নবীর পর যখন অন্য নবী প্রেরিত হন, তখন সে ইসলামও বিদায় নেয়। নতুন নবী যা নিয়ে আগমন করতেন, তাই হতো তখনকার ইসলাম। এতে অবশ্য মৌলিক কোনো পরিবর্তন হতো না, শুধু শাখাগত বিধি-বিধান ভিন্ন হতো। শেষনবী হজরত মুহাম্মাদ সা:-কে যে ইসলাম দেয়া হয়েছে, তা অপরিবর্তনীয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। উল্লেখিত নীতি অনুযায়ী তাঁর আবির্ভাবের পর পূর্ববর্তী সব ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। এখন পূর্বেকার ইসলাম আর ইসলাম নয়। বরং হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর মাধ্যমে যা পৃথিবীতে পৌঁছেছে, তাই হলো ইসলাম। এ কারণেই বিভিন্ন সহিহ হাদিসে মহানবী সা: বলেছেন, আজ যদি হজরত মুসা আ: জীবিত থাকতেন, তবে তাঁর পক্ষেও আমার অনুসরণ ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। অন্য এক হাদিসে বলেন, কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে হজরত ঈসা আ: যখন অবতরণ করবেন, তখন নবুওয়তের পদে সমাসীন থাকা সত্ত্বেও তিনি আমার শরিয়তেরই অনুসরণ করবেন।
অতএব এ আলোচ্য আয়াতে ইসলামের যেকোনো অর্থই নেয়া হোক, পরিণাম উভয়েরই এক। অর্থাৎ, শেষ নবীর আবির্ভাবের পর একমাত্র তাঁর আনীত ধর্মকেই ইসলাম বলা হবে। এ ধর্মই বিশ্ববাসীর মুক্তির উপায়। আলোচ্য আয়াতে এ ধর্ম সম্পর্কেই বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম অবলম্বন করে, তবে আল্লাহর কাছে তা গ্রহণীয় নয়।
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম : এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনুল কারিম থেকে কয়েকটি প্রসিদ্ধ আয়াত তুলে ধরছি। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম এবং যাদের প্রতি কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের কাছে প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশত যারা আল্লাহর নিদর্শনগুলোর প্রতি কুফরি করে তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত।’ (সূরা : আলে-ইমরান : ১৯)
কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে কি এরা আল্লাহ তায়ালার ধর্ম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম চায়? যখন আসমান ও জমিনের সব কিছু ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাবে।’ (সূরা : আল-ইমরান : ৮৩)
কুরআনুল কারিমে রয়েছে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে (ইসলামধর্ম) পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পন্ন করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সূরা : আল-মায়েদাহ : ৩)
কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসূল! যদি তারা তবুও আপনার সাথে কলহ দ্বন্দ্ব করে তবে আপনি বলে দিন যে, আমি ও আমার অনুসারীরা আল্লাহ তায়ালার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি আর যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে এবং যারা মূর্খ তাদেরও বলে দিন যে, তোমরাও কি আত্মসমর্পণ করেছ? এরপর তারা যদি মুসলমান হয় বা আত্মসমর্পণ করে তবে অবশ্যই হেদায়েত পাবে এবং যদি ফিরে যায়, তবে আপনার কর্তব্য ও দায়িত্ব শুধু আমার কথা তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি লক্ষ রাখেন। (সূরা : আলে-ইমরান : ২০)
আজকাল ইসলামের উদারতার নামে কুফর ও ইসলামকে এক করার চেষ্টা করা হয় এবং বলা হয় যে, সৎকর্ম সম্পাদন করলে ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হলে যেকোনো ধর্মাবলম্বীই মুক্তি পাবে। সে ইহুদি, খ্রিষ্টান অথবা মূর্তিপূজারী যাই হোক। আলোচ্য আয়াত এ উদ্ভট মতবাদের মূলোৎপাটন করে দিয়েছে। প্রকৃত প্রস্তাবে এভাবে ইসলামের মূলনীতি বিধ্বস্ত করা হয়। কারণ, এর সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, ইসলামের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। এটি একটি কাল্পনিক বিষয়, যা কুফরের পোশাকেও সুন্দর মানায়। কুরআনুল কারিমের অসংখ্য আয়াত পরিষ্কার বলে দিয়েছে যে, আলো ও অন্ধকার যেরূপ এক হতে পারে না, তদ্রƒপ অবাধ্যতা ও আনুগত্য উভয়টি আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় হতে পারে না। যে ব্যক্তি ইসলামের কোনো একটি মূলনীতি অস্বীকার করে, সে নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিদ্রোহী ও পয়গম্বরগণের শত্রু, প্রচলিত অর্থে সৎকর্ম বা নেক আমল ও প্রথাগত চরিত্রে সে যতই সুন্দর হোক না কেন, তাতে কিছু আসে যায় না। সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূলের আনুগত্যের ওপরই পরকালের মুক্তি নির্ভরশীল। যে ব্যক্তি এ থেকে বঞ্চিত, তার কোনো কর্ম ধর্তব্য নয়। কুরআনে এমন লোকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।
অর্থাৎ, ‘কিয়ামতের দিন আমি তাদের কোনো আমল ওজন করব না।’
পরিশেষে বলা হয়েছে : অর্থাৎ, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে, আল্লাহ দ্রুত তার হিসাব গ্রহণ করবেন। মৃত্যুর পর প্রথমত, কবর তথা বরযখ জগতে পরকালের পথে প্রথম পরীক্ষা নেয়া হবে। এরপর বিস্তারিত হিসাব-নিকাশ হবে কিয়ামতে। এ হিসাব নিকাশের সময়ই সব বিরোধের স্বরূপ ফুটে উঠবে। মিথ্যাপন্থীরা তাদের স্বরূপ জানতে পারবে এবং শাস্তিও আরম্ভ হয়ে যাবে।
লেখক : ইসলামী কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement
অপরাধ-বিতর্কিত ভূমিকায় জড়িত কর্মকর্তাদের ধরা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চীনের আরো ৩৭ কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার শেষ মুহূর্তে বিক্ষোভের মুখে বাইডেন, ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে স্লোগান পারিশ্রমিক নিয়ে টালবাহানা, রাজশাহীর ক্রিকেটারদের অনুশীলন বয়কট গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ রয়েছে : কাতার গলাচিপায় ‘তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালা ফ্যাসিবাদ ঠেকানোর দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে : দুদু জামায়াত আমিরের সাথে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ আনিসুল-দীপু মনি-পলকসহ নতুন মামলায় ৯ জন গ্রেফতার ঘণ্টা চুক্তি ভাড়া নিয়ে কিশোর রিকশাচালককে হত্যা : গ্রেফতার ২

সকল