০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`

নববী আদর্শে সমাজ বিপ্লব

-

মানুষ সামাজিক জীব। তার জন্ম ও প্রতিপালন সমাজের বাইরে সম্ভব নয়। একজন নর ও নারীকে নিয়ে প্রথমে গঠিত হয় একটি পরিবার। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবারগুলোর সমন্বয়ে ধীরে ধীরে গঠিত হয় একটি সমাজ।
সমাজ ব্যক্তিদেহের মতো প্রাণশীল। ব্যক্তিদেহের যেমন উত্থান ও পতন রয়েছে। তেমনই রয়েছে একটি সমাজের। সমাজবিজ্ঞানীরা একটি সমাজ জন্ম ও সৃষ্টির মৌলিক তিনটি কারণ নিশ্চিত করেন। ১. অর্থনৈতিক সঙ্কট। ২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ৩. আদর্শিক বিপ্লব। অর্থনৈতিক সঙ্কট, প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেমন নতুন সমাজ সৃষ্টি ও জন্মের সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই সম্ভাবনা রয়েছে একটি সুশৃঙ্খল বিপ্লবে। যে বিপ্লব হবে আদর্শভিত্তিক।
যেমন আজ হতে পনের শ’ বছর আগে এক তাওহিদী আদর্শিক বিপ্লবের মাধ্যমেই আরবের বেদুইন অশিক্ষিত-অসভ্য সমাজ থেকে সৃষ্টি করে এক নতুন সভ্য- সুশিক্ষিত সমাজ।
মহানবী সা: সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক। তিনিই সে বিপ্লবী আদর্শের প্রাণপুরুষ। গোটা পৃথিবীর সমগ্র যুবককে অনুসরণে প্রতিমূর্তি ও প্রতিকৃতি। ধরণীর সংস্কারকদের জন্য তিনি রেখে গেছেন উত্তম আদর্শ। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব ৩৩/২১) বাস্তবেই ইহজগতের সর্বসাধারণের জন্য সার্বিক ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ রেখে গেছেন তিনি।
সমাজ উন্নয়নের সর্বাপেক্ষা মহত্তপূর্ণ শর্ত হলো ব্যক্তি গঠন। কেননা কোনো আদর্শ যতই সুকুমার আর শোভনীয় হোক! সে অনুপাতে আদর্শবান ব্যক্তি গঠন করা না হলে, তার ভিত্তিতে সমাজ গঠন অকল্পনীয়।
তা ছাড়া শান্তি-মুক্তি পেতে নৈরাজ্যমুক্ত সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব গড়তে হলে মানুষের ব্যক্তিজীবনে আনতে হবে ইসলাহ ও সংশোধনের চূড়ান্ত বিপ্লব। যেহেতু ব্যক্তি-জীবনে শান্তিই পর্যায়ক্রমে আনয়ন করে পারিবারিক, সামজিক, রাষ্ট্রিক ও আন্তর্জাতিক জীবনযাত্রায় শান্তি ও মুক্তি। তাই মহানবী সা: মানুষের অন্তরে তাকওয়া, খোদাভীতি, পরমতসহিষ্ণুতা, সাম্য ও সামজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের প্রধান কার্য সম্পাদন করতে লাগলেন।
সমাজবিজ্ঞানের জনক ইবনে খালদুন বলেন; সমাজ একটি প্রাণবান সত্তা। এ সত্তাকে জীবন্ত রাখে সামাজিক ঐক্য সংহতি। যত দিন এ সামাজিক ঐক্য-সংহতি বিনষ্ট না হয়, তত দিন সমাজ বেঁচে থাকে এবং যেদিনই তা বিনষ্ট হবে সেদিনই সমাজ ভেঙে পড়বে এবং তার অপমৃত্যু ঘটবে। (সমাজবিজ্ঞান ও ইসলাম : ই. ফা. পৃ: ৪৩)
ইবনে খালদুন আরো বলেন, সভ্যতা সংস্কৃতি ও বাস্তব জীবনে প্রাচুর্যময় এবং সামজিক ঐক্য-সংহতিতে বলিষ্ঠ সমাজ, তুলনাতীতভাবে সভ্যতা-সংস্কৃতি ও বাস্তব সম্পদে প্রবল, কিন্তু ঐক্য-সংহতিতে দুর্বল সমাজকে পরাভূত করে থাকে।
মহানবী সা: সংস্কারমুখী বিপ্লবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে, শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ, ধনী-গরিব, শাসক-শাসিত, মালিক-শ্রমিক, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার সমানাধিকার নিশ্চিত করেন। স্থাপন করেন সাম্য, উদারতা আর পরমতসহিষ্ণুতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
রহমতে আলম সা: বর্বরতার যুগে অধিকারবঞ্চিত, নির্যাতন আর নিপীড়নের বুলডোজারে নিষ্পেষিত নারী সমাজকে দান করেন অধিকার। তাদের আসীন করেন মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের আসনে। শ্রমিক শ্রেণীর সাথে সৃষ্ট হওয়া বৈষম্য আর জাতিভেদ দূর করে তাদের ভূষিত করেন এক মর্যাদাশীল নাগরিক হিসেবে।
তিনি এ বৈষম্য আর অসাম্যের মাথায় কুঠারাঘাত করে বলেন, অনারবের ওপর আরবের এবং আরবের ওপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে। যার মধ্যে তাকওয়া প্রবল, সে তাকওয়ায় দুর্বল ব্যক্তি হতে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান।
মহানবী সা: এ ‘সংস্কারমুখী আন্দোলন ও বিপ্লবে জাহিলিয়াতের অথৈ সমুদ্রে ডুবে থাকা, পথভ্রষ্ট, লক্ষ্যচ্যুত, আদর্শচ্যুত, দিশেহারা একটি জাতি কুরআনি শিক্ষায় শিক্ষিত, আধ্যাত্মিক দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠে এক সভ্য ও সুশৃঙ্খল জাতি যারা পরবর্তীদের জন্য সত্য ও সততার মাপকাঠি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ন্যায়নীতি আর সাম্যনীতিতে সুখসমৃদ্ধ দৃষ্টান্তহীন সমাজ। অথচ এক সময় সে সমাজে জুলুম-শোষণ অত্যাচার-উৎপীড়ন আর খুনাখুনিতে টইটম্বুর ছিল। ভয় আতঙ্ক আর ত্রাসের রাজত্ব ছিল সর্বত্র। ন্যায়নীতি আর ন্যায়বিচার তো রীতিমতো আকাশকুসুম কল্পনা ছিল।
অধঃপতন আর ধ্বংসের শেষ প্রান্তে দাঁড়ানো একটি সমাজকে রক্ষা ও উন্নয়নে নবী সা: যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। তাঁর এ সংস্কারমুখী কার্যক্রমে পরিশোধিত হয়েছে মানুষের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, সভ্যতা-সংস্কৃতি আর শিক্ষাব্যবস্থা। এক কথায় সব কিছুতেই সংস্কারের বৃষ্টি বর্ষণ হয়। প্রস্ফূটিত হয় সৌন্দর্যের সুশোভিত পাপড়ি।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, আজকের এ সঙ্ঘাতময় পৃথিবীতে, অশান্ত রাষ্ট্রে, নৈরাজ্যপূর্ণ সমাজ ও কলহপূর্ণ পরিবারে এবং নিরাপত্তাহীন ব্যক্তিজীবনে শান্তি ও মুক্তি আনতে হলে, সভ্যতা সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটাতে হলে, মহানবী সা:-এর রেখে যাওয়া অমর নীতিমালার ভিত্তিতেই এগুতে হবে আমাদের। তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ আজও আমাদের সামনে পরিবর্তন ও বিবর্তনহীনভাবে উজ্জ্বল হয়ে রশ্মি ছড়াচ্ছে, যা আমাদের প্রদর্শিত করবে এমন পথ, যে পথ হবে সৌহার্দ্যপূর্ণ, ভীতিহীন ও কল্যাণকর।
লেখক : প্রাবন্ধিক


আরো সংবাদ



premium cement
মেট্রোরেলের সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি হেসেখেলেই সিলেটকে উড়িয়ে দিলো রংপুর মেরুদণ্ডহীনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রেখে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয় অগ্নিনির্বাপণকর্মী নয়নের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দিলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র সমাবেশ মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরকে বড় লক্ষ্য দিলো সিলেট ম্যানইউর সাথে ঘরের মাঠে ড্র করল লিভারপুল মোসাদ্দেককে দলে ভেড়ালো ঢাকা, এসেছেন সাইদ আজমলও শৈলকুপায় ফুলকপি বিক্রিতে লোকসান, হতাশা চাষিরা চিকিৎসক-নার্সসহ বিএসএমএমইউয়ের ১৫ জন বরখাস্ত বর্ষীয়ান আলী আকবর হারিয়ে গেছেন, তথ‌্য দি‌য়ে সহায়তার আহ্বান

সকল