২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

নীলদরিয়ায় হজরত ওমর রা:-এর চিঠি

-


মহানবী সা: আমাদের সব ধরনের পাপ, অকল্যাণ ও গর্হিত কাজ থেকে সতর্ক করেছেন, যেন আমরা সেই অকল্যাণে পতিত না হই এবং আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ থেকে বেঁচে থাকতে পারি। এমনই এক গর্হিত কাজ হলো ইসলামপূর্ব যুগের কুসংস্কারে লিপ্ত হওয়া। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত : ১. যে ব্যক্তি হারাম শরিফে অন্যায় ও অপকর্মে লিপ্ত হয়; ২. যে ব্যক্তি ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের রেওয়াজ-প্রথার অনুসরণ করে ও ৩. যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে কেবল খুনখারাবির উদ্দেশ্যে কোনো মুসলমানের রক্তপাত কামনা করে’ (সহিহ বুখারি-৬৭৮২)। কুসংস্কার কুপ্রথার অনুসরণ করা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর কোনো কোনোটার বিশ্বাস মানুষকে কুফর পর্যন্ত নিয়ে যায়। এসব থেকে তাই বেঁচে থাকতে হবে পূর্ণাঙ্গরূপে। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সা:-এর পথনির্দেশ অনুযায়ী এসব অহেতুক কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতেন সম্পূর্ণভাবে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল হজরত ওমর রা:-এর শাসনামলে। ঘটনাটি নিম্নরূপ :
প্রাচীন মিসরের নীল নদ মাঝে মধ্যে শুকিয়ে যেত। বন্ধ হয়ে যেত পানিপ্রবাহ। মিসরের অধিবাসীরা জাহিলিয়াতের প্রথানুযায়ী তখন একটি সুন্দরী কুমারী মেয়েকে নদীতে বলি দিত। ফলে পুনরায় নীল নদে জোয়ার আসত।

দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক রা:-এর খেলাফতকালে মিসর বিজিত হয়। হজরত আমর ইবনুল আস রা: সেখানকার গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। সে সময়েও একবার নীল নদের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। রীতি অনুযায়ী লোকেরা কুমারী মেয়ে বলিদানের জন্য আমর ইবনে ইবনুল আস রা:-এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, এটি শরিয়তবিরোধী প্রথা। এমনটি করা যাবে না। আমি বরং এ ব্যাপারে খলিফার সাথে পরামর্শ করি। খলিফার কাছে পরামর্শ চেয়ে পত্র পাঠানো হলো। তিনি জবাবে দু’টি চিঠি পাঠালেন। একটি গভর্নর আমর ইবনুল আস রা:-এর কাছে। অপরটি নীল দরিয়ার উদ্দেশ্যে। গভর্নরকে আদেশ করলেন, তিনি যেন চিঠিটি নদীতে নিক্ষেপ করেন।

চিঠিতে লেখা ছিল- ‘আল্লাহর বান্দা ওমরের পক্ষ থেকে মিসরের নীল নদের প্রতি, হামদ ও সালাতের পর, হে নীল নদ! তুমি যদি নিজের পক্ষ থেকে প্রবাহিত হও, তাহলে প্রবাহিত হয়ো না। তোমার কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই। আর যদি এক আল্লাহর হুকুমে প্রবাহিত হও, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করে দেন।’
আমর ইবনুল আস রা: চিঠিটি নদে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে সেই যে পানির প্রবাহ শুরু হলো, আজ পর্যন্ত তা বন্ধ হয়নি (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৭/১১০)।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ, রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement