০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবা রা:

-

আশরায়ে মুবাশশিরা বা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবি ছাড়াও আরো অনেকেই দুনিয়ায় থাকতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। যেমন- উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজাতুল কুবরা রা:, হজরত ফাতিমা রা:, হজরত হাসান ও হুসাইন রা:, হজরত বেলাল রা: তাদের অন্যতম। আশরায়ে মুবাশশিরাগণ হলেন- হজরত আবু বকর রা:, হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রা:, হজরত উসমান ইবনে আফফান রা:, হজরত আলী ইবনে আবু তালিব রা:, হজরত তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রা:, হজরত জুবাইর ইবনে আওয়াম রা:, হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা:, হজরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা:, হজরত সাঈদ ইবনে জায়িদ রা: ও হজরত আবু উবাইদা ইবনে জাররাহ রা:।
তাদের বাইরে সহিহ হাদিসে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: যাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন তারা হলেন :
১. উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা রা:। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সা:-এর সংগ্রামমুখর জীবন ও সুখ-দুঃখের একান্ত সাথী। খাদিজা রা: অত্যন্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ সম্মানিতা নারীদের অন্যতম। ইসলামে খাদিজা রা: মর্যাদা অন্য নারীদের চেয়ে অনেক উপরে। তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি। একটি হাদিসে নবী সা: বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম নারী মরিয়ম বিনতে ইমরান ও খাদিজা বিনতে খুওয়াইলদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তিনিই সুখে-দুঃখে ও চরম নির্যাতনে সাহসী নারীর ভূমিকায় রাসূল সা:-এর পাশে থেকেছেন, সাহস জুগিয়েছেন, নিজের ধন-সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে জিবরাইল আ: এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই তো খাদিজা আপনার কাছে একটি পাত্র নিয়ে আসছেন, যার মধ্যে কিছু তরকারি, খাদ্য ও পানীয় রয়েছে। তিনি যখন আপনার কাছে আসবেন তখন তাকে তার রবের এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম দেবেন। আর তাকে জান্নাতের একটি ঘরের সুসংবাদ দেবেন, যা এমন একটি মুক্তা দিয়ে তৈরি, যার ভেতর খোলা। যেখানে কোনো হইচই আর দুঃখ-কষ্ট নেই। (বুখারি-৬০৫৫, কিতাবু ফাজায়িলুস সাহাবা রা: বাবু ফাজায়িলি খাদিজা রা:)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি আলী রা:-কে কুফায় বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন, সে যুগে মরিয়ম বিনতে ইমরান, আর এ যুগে খাদিজা বিনতে খুওয়াইলদ।’ (বুখারি-৬০৫৩)
হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: খাদিজাকে জান্নাতের একটি ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন।’ (বুখারি-৬০৫৮)
২. ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ সা: ও বিনতে খাদিজা রা:। হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: অন্তিম পীড়িতাবস্থায় তাঁর কন্যা ফাতিমা রা:-কে ডেকে পাঠালেন। অতঃপর চুপিচুপি কী যেন বললেন। ফাতিমা রা: তা শুনে কেঁদে ফেললেন। অতঃপর আবার ডেকে চুপিচুপি আরো কী যেন বললেন। এতে ফাতিমা রা: হেসে উঠলেন। আয়েশা রা: বলেন, আমি হাসি-কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। (বুখারি-৩৬২৫)
হজরত উম্মু সালামাহ রা: বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ সা: ফাতিমাকে ডেকে তার সাথে চুপিসারে কথা বলেন। এতে ফাতিমা কেঁদে ফেলেন। তারপর তিনি কিছু কথা বললে ফাতিমা হাসেন। উম্মু সালামাহ রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:-এর ইন্তেকালের পরে আমি ফাতিমাকে তার হাসি-কান্নার কারণ প্রশ্ন করি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: আমাকে অবহিত করেন যে, অচিরেই তিনি মৃত্যুবরণ করবেন, তাই আমি কেঁদেছি। তারপর তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, মরিয়ম বিনতে ইমরান ব্যতীত আমি জান্নাতে নারীদের নেত্রী হবো, তাই আমি হেসেছি। (তিরমিজি-৩৮৭৩)
৩. হাসান-হুসাইন ইবনে আলী ও ফাতিমা রা:। হজরত হাসান ও হুসাইন রা: ছিলেন হজরত মুহাম্মদ সা:-এর দুই নয়ন। দ্বীন ইসলাম সংরক্ষণে শাহাদাত বরণ করেন দুই বীর সেনানী। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত যে- তাকে ইরাকের এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইহরাম অবস্থায় মশা-মাছি মারা যাবে কি? তিনি বললেন, ইরাকবাসী মশা-মাছি মারা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে অথচ তারা আল্লাহর রাসূল সা:-এর নাতিকে হত্যা করেছে। নবী সা: বলতেন, হাসান ও হুসাইন রা: আমার কাছে দুনিয়ায় যেন দু’টি ফুল। (বুখারি : ৩৭৫৩, ৫৯৯৪)
হজরত হুজাইফাহ রা: থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসের শেষে উল্লেখ করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এ রাতের আগে কখনো পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি আমাকে সালাম করার জন্য এবং আমার জন্য এ সুখবর বয়ে আনার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে অনুমতি চেয়েছেন : ফাতিমা জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা। (তিরমিজি-৩৭৮১)
হজরত আবু সাঈদ আল-খুদরি রা: থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল হাসান ও আল হুসাইন রা: প্রত্যেকেই জান্নাতি যুবকদের সরদার।’ (তিরমিজি-৩৭৬৮)
৪. ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হজরত বেলাল রা:। ইসলামের ইতিহাসে হজরত বেলাল রা:-এর ঈমান অত্যন্ত দাম দিয়ে কেনা। দিনের পর দিন তপ্ত বালিকায় বুকে পাথর চাপা দিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়, শর্ত ছিল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সা:-কে ত্যাগ করতে হবে। তিনি ছাড়েননি। তিনি ছিলেন স্পষ্টভাষী, বাগ্মী, সুমধুর ও সুউচ্চ কণ্ঠস্বরের অধিকারী। তিনিই ইসলামের সর্বপ্রথম আজান দেন, রাসূলুল্লাহ সা: তাকেই প্রথম আজান দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। প্রতি সালাত ও অন্যান্য সময়ে রাসূল সা:-এর নির্দেশে অত্যন্ত দরাজ গলায় ও আবেগঢালা সুরে তিনি আজান দিতেন। ইসলামে তার অবদান অবিস্মরণীয়।
হজরত আবু হুরায়ারা রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: একদা ফজরের সালাতের সময় হজরত বিলাল রা:-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বিলাল! ইসলাম গ্রহণের পর সর্বাধিক সন্তুষ্টিব্যঞ্জক যে আমল তুমি করেছ, তার কথা আমার কাছে ব্যক্ত করো। কেননা, জান্নাতে (মিরাজের রাতে) আমি আমার সামনে তোমার পাদুকার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। বিলাল রা: বললেন, আমার কাছে এর চেয়ে (অধিক) সন্তুষ্টিব্যঞ্জক হয় এমন কিছু তো আমি করিনি। তবে দিন রাতের যেকোনো প্রহরে আমি তাহারাত ও পবিত্রতা অর্জন করেছি, তখনই সে তাহারাত দ্বারা সালাত আদায় করেছি, যে পরিমাণ সালাত আদায় করা আমার তাকদিরে লিখা ছিল। (বুখারি-১১৪৯, মুসলিম-২৪৫৮, আহমাদ-৯৬৭৮, ইবনে খুজায়মা-১২০৮, সহিহ তারগিব-২২৬)
লেখক : প্রবন্ধকার ও গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
ইফার দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত ঢাকা ওয়াসার কেউ দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা : উপদেষ্টা আসিফ ২২ ফেব্রুয়ারি হাবের নির্বাচন রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে ২ জনকে হত্যা ৪২ লাখ টাকাসহ প্রতারক চক্রের সদস্য গ্রেফতার ডিএমপি কমিশনারের সাথে য্ক্তুরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ তারুণ্যের উৎসবে স্থান পাচ্ছে জুলাই আগস্টের তথ্যচিত্র মৃত্যুবার্ষিকী : রফিকুল ইসলাম আধুনিক অটোমোবাইলস জোন প্রতিষ্ঠার দাবি ওয়েলফেয়ার অব ড্রাইভারস্ এন্ড মেকানিক্সের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা অবমাননার অভিযোগ, আটক ৩ ১০ লাখ টাকার অনুদানের চেক শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর

সকল