৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ইসলামে নারীর মর্যাদা ও নারীবাদ

-

গত দিনের পর

ইসলামে নারীর মর্যাদা
মরুভূমিতে অন্ধকারের বুক চিরে আলোর সঞ্চার। শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে রাসূল সা:-এর আগমনে মরুভূমি স্বর্গোদ্যানে পরিণত হয়। যুগে যুগে অবমানিত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, নির্যাতিত, ভোগের উপকরণ, মৌলিক অধিকারহারা নারীর সম্মান, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষা করেছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষের সমতা ও মর্যাদার মাপকাঠি কুরআনে স্পষ্ট ঘোষণা করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়াম পালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সূরা আহজাব-৩৫) এ ছাড়াও তিনি কুরআনের নিসা (অর্থ নারী) নামের সূরা নাজিল করেন। বিধবা নারীর সম্মান ও অধিকার এবং কন্যা, স্ত্রী, মা, বোন হিসেবে মর্যাদা ও অধিকার সুস্পষ্ট বর্ণনা দেন।

কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান
জাহেলিয়াতের যুগে নারীরা সবচেয়ে অবহেলিত ছিল। সমাজে নারীদের কোনো সম্মান ছিল না এবং তাদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করা হতো। বিশেষ করে কন্যা সন্তান জন্মকে লজ্জা মনে করে এবং জীবন্ত কবর দেয়া হতো। আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়; তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওম থেকে আত্মগোপন করে। আপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখো, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ।’ (সূরা নাহল : ৫৮-৫৯) ইসলাম কন্যাদের সুউচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। ইমাম শাফেয়ি রহ: বলেন, সন্তানরা আল্লাহর নিয়ামত। আর মেয়ে সন্তানরা পুণ্য। মহান আল্লাহ নিয়ামতের হিসাব নেন, আর পুণ্যের প্রতিদান দেন। রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সাথে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড় (প্রতিবন্ধক) হবে।’ (তিরমিজি-১৯১৩)।

স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান
ইসলাম স্ত্রী হিসেবে নারীদেরকে পরিবারে রানীর সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। আর নারী-পুরুষ একে অপরের আবরণস্বরূপ। মানুষ খাঁটি সোনা যাচাই-বাছাই করতে স্বর্ণকারের কাছে ছুটে। আর উত্তম চরিত্রের পুরুষ যাচাই-বাছাই করে সত্যায়িত করবেন তার স্ত্রী। রাসূল সা: বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম চরিত্রের অধিকারী, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি, মিশকাত-৩২৫২)
নারীদের প্রতি দাসত্বের মনোভাব এখনো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে আছে। নারীদের ওপর কর্তৃত্ব করতে অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হয়। যাকে অনধিকার চর্চা হিসেবে নারীরা বুলি আওড়ায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘নারীদের রয়েছে বিধি মোতাবেক অধিকার। যেমন আছে তাদের ওপর (পুরুষদের) অধিকার।’ (সূরা বাকারা-২২৮)

মা হিসেবে নারীর সম্মান
নারীদের মা হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। কেননা, মা কষ্ট করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে এবং দুধ পান করান। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তাই আল্লাহ তায়ালা মায়ের সাথে সবসময় উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদের ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো।’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৩)

বিধবা হিসেবে নারীর সম্মান
বিধবা নারীদের পরিবার ও সমাজে নিচু চোখে দেখা হতো এবং পুরুষদের কাছে তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হতো। এমনকি সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। ইসলাম বিধবা নারীদের নিরাপত্তা ও জান-মালের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। রাসূল সা: বলেন, ‘যারা বিধবা নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ইসলাম নারীদের ঘোর অমানিশা থেকে মুক্ত করে সম্মানের সাথে বাঁচার অধিকার দিয়েছে। অন্য ধর্ম ও সভ্যতা নারীদের অবমাননা করেছে। তাই নারীদের সম্মান ও মর্যাদা অনুধাবন করতে পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। আর বর্তমান সমাজে জাহেলিয়াতের প্রেতাত্মা সর্বত্র বিরাজমান। তাই মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব হলো নারীদের সচেতন করা, সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করা।

লেখক : প্রাবন্ধিক


আরো সংবাদ



premium cement