২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সন্তানের মৃত্যুতে পিতা-মাতার পুরস্কার

-


সন্তান দাম্পত্য জীবনে পাওয়া এক বিশেষ নিয়ামত। মহান আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে এটি দান করেন। প্রত্যক পিতা-মাতার চোখেমুখে ফুটে ওঠে কৃতজ্ঞতার নিদর্শন। কলিজার টুকরা সন্তান নিয়ে সব মা-বাবা আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু কখনো কখনো প্রিয় সন্তান শৈশব-কৌশোরেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যায়। সঙ্গত কারণে তখন পিতা-মাতা ডানা ভাঙা আহত পাখির মতো ছটফট করতে থাকেন। সন্তানের লাশ কাঁদে বহন করার চেয়ে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে? তবে এ ক্ষেত্রে হা-হুতাশ না করে ধৈর্য ধারণ করতে পারলে পিতা-মাতা সফল বলে গণ্য হবে। পাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ বিশেষ পুরস্কার।

মৃত সন্তানদের জান্নাতে অবস্থান : শৈশবে ইন্তেকাল করা শিশুরা জান্নাতে সুরক্ষিত অবস্থায় আছে। সেখানে তাদের লালনপালন করা হয়। অন্যদের সাথে ইবরাহিম আ:-এ দায়িত্ব পালন করেন। হজরত সামুরা ইবনে জনদুব রা: থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদিসে রাসূল সা: মিরাজের ঘটনা বর্ণনায় বলেছেন, ‘আমরা চলতে চলতে একটি সজীব শ্যামল বাগানে এসে পৌঁছলাম। তাতে বসন্তের বিচিত্র ফুলের সমাহার আছে। বাগানের মধ্যে দীর্ঘকায় একজন পুরুষকে দেখলাম। তবে তাঁর মাথা আমি দেখছিলাম না। তাঁর চারপাশে বিপুলসংখ্যক ছেলে-মেয়ে দেখলাম। এত বেশি ছেলে-মেয়ে আমি কখনো দেখিনি। আমি ফেরেশতাদের বললাম, ওনি কে? আমাকে বলা হলো, ইনি ইবরাহিম আ:। আর তাঁর আশপাশের ছেলে-মেয়েরা ওইসব শিশু, যারা শৈশবের নিষ্পাপ অবস্থা মারা গেছে।’ (বুখারি-১৩০৩)

সন্তানের মৃত্যুতে বিশেষ বাড়ি উপহার : প্রিয় কলিজার টুকরা সন্তানের মৃত্যুতে পিতা-মাতা জান্নাতের বিশেষ বাড়ি উপহার লাভ করবে। তার নাম হবে বায়তুল হামদ। হজরত আবু মুসা আল-আশআরি রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দার সন্তান মারা যায় তখন আল্লাহ তায়ালা ফিরিশতাদের বলেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তান কবজ করে নিয়ে এলে? তারা বলে, হ্যাঁ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা তার হৃদয়ের ফল কবজ করে নিয়ে এলে? তারা বলে হ্যাঁ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলে, আপনার হামদ করেছে এবং ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করো এবং তার নামকরণ করো বায়তুল হামদ বা প্রশংসালয়।’ (তিরমিজি-১০২১)

জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তার ঢাল : মৃত সন্তানরা স্বীয় পিতা-মাতার জন্য ঢালের ভূমিকা পালন করবে। চতুর্পাশে অবস্থান করে তাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করবে। হজরত আব্দুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তিনটি নাবালক সন্তান আগাম পাঠায় (মারা যায়) তার জন্য তারা হবে জাহান্নামের মজবুত ঢালস্বরূপ। তখন হজরত আবু জার রা: বললেন, আমি দু’টি সন্তান আগাম পাঠিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, দু’টি হলেও। সায়্যিদুল কুররা উবাই ইবনে কাব রা: বললেন, আমি একটি সন্তান আগাম পাঠিয়েছি। তিনি বললেন, একটি হলেও।’ (ইবনে মাজাহ-১৬০৬)

মা-বাবাকে টেনে জান্নাতে পৌঁছাবে : মৃত সন্তানরা আল্লাহর কাছে আবদার করে পিতা-মাতার জন্য জান্নাতে খাদেম হবে। আর এটিই তো ছোট সন্তানদের স্বভাব। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- এক ব্যক্তি তাকে বলল, আমার একটি পুত্র-সন্তান মারা গেছে। তার জন্য আমি অত্যন্ত শোকার্ত হয়ে পড়েছি। আপনি কি আপনার দোস্ত মুহাম্মদ সা:-এর কাছে এমন কিছু শুনেছেন, যা আমাদিগকে সান্তনা দিতে পারে? তিনি উত্তর করলেন, হ্যাঁ, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, মুসলমানদের ছোট সন্তানরা বেহেশতের কার্যকারক হবে। তাদের কেউ আপন পিতাকে পাবে, আর তার কাপড় পাশ ধরে টানতে থাকবে এবং তা থেকে পৃথক হবে না, যতক্ষণ না তাকে বেহেশতে নিয়ে পৌঁছায়।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ-১৭৫২)

গর্ভপাতজনিত সন্তানের বাদানুবাদ : কোনো শিশু গর্ভপাতজনিত সমস্যায় ইন্তেকাল করলে জন্মদাত্রী মাকে অনেক কথা শুনতে হয়। সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ তাকে বাঁকা চোখে দেখে। এটি মোটেও ঠিক নয়। গর্ভপাতজনিত সন্তান একদিন মুক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। হজরত আলী রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, গর্ভপাতজনিত সন্তান, তার পিতা-মাতাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাতে দেখে, তার রবের সাথে বাদানুবাদ করবে। তখন বলা হবে, হে রবের সাথে বাদানুবাদকারী গর্ভপাতজনিত সন্তান; তোমার পিতা-মাতাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। ফলে জান্নাতে প্রবেশ করানো পর্যন্ত তারা তাদেরকে টানতে থাকবে।’ (ইবনে মাজাহ-১৬০৮)
লেখক : প্রবন্ধকার

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement