সাহাবায়ে কেরামের রাসূলপ্রেম
- মুন্সি আব্দুল কাদির
- ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ইসলাম চির শান্তির, চির স্বস্তির, চির নির্ভরতার, চির কল্যাণের, চির তৃপ্তির। এই চির তৃপ্তি আর স্বস্তি আসে নির্ভরতা থেকে। যার নির্ভরতা তথা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল যত মজবুত সে তত উদ্বেগহীন, পরোয়াহীন। দুঃখ নামক কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করে না। দুঃখ নামক কোনো কিছুই তার অনুভবকে কাবু করতে পারে না। দুঃখের মধ্যে শান্তি খুঁজে পায়, খুঁজে নেয়। দুঃখের অনুভূতি তার একেবারে ভোঁতা হয়ে যায়। তাদের দৃষ্টি শক্তি অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আধ্যাত্মিকতার উঁচু মার্গে তারা অবস্থান করে। এক কথায় তারা হয় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ।
হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়ে গেল। সাহাবিদের মধ্যে অস্থিরতা। আপাত দৃষ্টিতে সন্ধির শর্তগুলো মুসলমানদের জন্য অবমাননাকর মনে হয়। কিন্তু মহান রব একে ফাতহে মুবিন বলেছেন। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ছাড়া তা অনুধাবন করা কঠিন। অনেক সাহাবির মধ্যে হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্তে বিচলতা থাকলেও হজরত আবু বকর রা: ছিলেন নির্বিকার। রাসূল সা:-এর ভালোবাসা, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা তাকে বিচলিত হতে দেয়নি। তিনি বিশ্বাস করেছেন, যে কাজ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে রাসূল সা: করেছেন, তার মধ্যেই রয়েছে সমূহ কল্যাণ। আবু রকর রা: বলতেন, হুদায়বিয়া থেকে বড় বিজয় ইসলামে আর একটিও ছিল না। কিন্তু সন্ধির দিন মানুষজন এই মহাবিজয়ের নিগূঢ় বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারেনি। মানুষ সবসময় তাড়াহুড়ো করে। কিন্তু মহান রব তাড়াহুড়ো করেন না।
আবু বকর রা: বলেন, আমি বিদায় হজের দিন হজরত সুহাইল রা:-কে দেখলাম, কোরবানির উটগুলো রাসূল সা:-এর দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন আর রাসূল সা: উটগুলো কোরবানি করছেন। এরপর রাসূল সা: মাথার চুল কর্তনকারীকে ডেকে মাথা মুণ্ডন করেন। আমি দেখলাম সুহাইল প্রিয়নবী সা:-এর বরকতময় চুলগুলো নিয়ে চোখে লাগাচ্ছেন অথচ এই সুহাইলই হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন চুক্তিপত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখতে বাধা প্রদান করে এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ লেখার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। তিনি কোনোভাবেই এ দু’টি বিষয় মানতে রাজি হননি। পরে তা না লিখেই সন্ধি স্থাপিত হয়। আমি সুহাইলের বর্তমান অবস্থা দেখে মহান রবের শুকরিয়া আদায় করি। যিনি তাকে ইসলামের সুমহান ছায়াতলে আশ্রয় দিয়ে ধন্য করেছেন।
দুঃখের ঘটনা ঘটলে কে এমন আছে যে দুঃখ পায় না। কমবেশি সবাই দুঃখ বোধ করে। কাউকে দুঃখ কাবু করে হতাশার অতল তলে ডুবিয়ে দেয়। আবার কেউ দুঃখ পেলেও হতাশ না হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। ভেঙে পড়ে না। আবু বকর রা: ছিলেন এমন ব্যক্তি। অন্যদিকে যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের সন্তুষ্টিকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছে। দুঃখ তো পরোয়া নেই। তার আদরের ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর তায়েফের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই যুদ্ধে তিনি তীরের আঘাতে আহত হন। এই আহত হওয়াই তার মৃত্যুর কারণ হয়। রাসূল সা:-এর ওফাতের ৪০ দিন পর আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকরের মৃত্যু হয়। তার ওপর নিক্ষিপ্ত তীরটি আবু বকর রা:-এর কাছে ছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকরের মৃত্যুর পর আবু বকর রা: তায়েফের বনু সাকিফ গোত্রের কাছে যান। তারপর তিনি এই তীরটি দেখিয়ে বলেন, তোমরা কি কেউ এই তীরটি চিন? তখন সাইদ বিন ওবায়েদ রা: বললেন, আমি এই তীরটি নিক্ষেপ করেছিলাম। তখন আবু বকর রা: বলেন, এই তীরের আঘাতে আমার ছেলে আব্দুল্লাহ শাহাদাতবরণ করেছে। প্রশংসা শুধু সেই মহান আল্লাহর যিনি তোমার হাতে তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দিয়েছেন। তুমি তার হাতে কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করোনি। অর্থাৎ পরবর্তীতে তুমিও মুসলমান হয়ে গেছ। আল্লাহর দয়া দু’জনের প্রতিই রয়েছে।
তাবুক যুদ্ধ। কঠিন গরমের সময়। পিপাসায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। হজরত ওমর রা: বলেন, এই কঠিন গরমের সময় আমরা তাবুকে রওনা হলাম। পথিমধ্যে আমরা এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করি। আমাদের পিপাসা এত বেশি লেগেছিল যে, মনে হয়েছিল, শরীরের সব শক্তি শেষ হয়ে গেছে। আমরা আর চলতে পারব না। তখন আবু বকর রা: রাসূল সা:-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তায়ালা আপনার সব দোয়া কবুল করেন। আপনি আল্লাহর কাছে পানির জন্য দোয়া করুন। রাসূল সা: আবু বকর রা:-কে বললেন, তুমি কি এটি পছন্দ করো। আবু বকর রা: জবাব দিলেন, হ্যাঁ আল্লাহর রাসূল সা:। তারপর রাসূল সা: দুটো হাত উঠালেন। হাত নামানোর আগেই আকাশে মেঘ দেখা গেল। প্রচুর বৃষ্টি হলো। সাহাবিদের সাথে যেসব পাত্র ছিল সব পাত্র পানিতে পূর্ণ করে নিলেন তারা।
আবু বকর রা:-এর দূরদৃষ্টি অনেকদূর পর্যন্ত প্রসারিত। তিনি অনেক দূরে চিন্তা করতেন। খায়বার যুদ্ধ। ইহুদিরা খুব পাকাপোক্ত হয়ে খায়বারে অবস্থান করছে। কেল্লা খুব মজবুত। খায়বারের পাশে তাদের খেজুর বাগান। মুসলমানরা খায়বার অবরোধ করে বসে আছে। কেল্লা জয় করা একটু কঠিন বৈকি। কিন্তু রাসূলে আরাবির বিজয় নিশ্চিত। যদিও একটু বিলম্ব হয়। শেষের দিকে কয়েকজন সাহাবি পরামর্শ দিলেন। তাদের খেজুর বাগানগুলো জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য।
রাসূল সা: তাদের পরামর্শ গ্রহণ করলেন। সাহাবিদের বললেন, গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য। সাহাবিরা দ্রুত গাছগুলো কাটতে লাগলেন। এমতাবস্থায় আবু বকর রা: রাসূল সা:-কে গাছগুলো না কাটার পরামর্শ দিলেন। আবু বকর রা: বলেন, শক্তি প্রয়োগ কিংবা সন্ধি- যেকোনোভাবেই খায়বার বিজিত হোক। তাতে এই গাছগুলো কাটা মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে মনে হয়। কেননা, এগুলো বিজয়ী মুসলামানদের সম্পদ। তখন রাসূল সা: সাহাবিদের গাছ কাটা বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
আল্লাহ এবং রাসূলের প্রতি ভালোবাসা যার যত মজবুত তার অন্তর্দৃষ্টি তত প্রখর। তার প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা, চিন্তাশীলতা তত প্রখর। এগুলোতে হজরত আবু বকর রা:-কে ছাড়িয়ে যেতে পারে মুসলমানদের মধ্যে এমন কেউ নেই।
লেখক : প্রাবন্ধিক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা