৫ বছরেও খোঁজ মেলেনি শিশু মুরসালিনের
- কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) সংবাদদাতা
- ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৬, আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:১৩
জুমার নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হয় ৬ বছর বয়সী মুরসালিন। পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও আর বাড়ি ফেরেনি। সন্তানের ছবি বুকে নিয়ে এখনো অপেক্ষায় মা রুবিনা বেগম। এই বুঝি মুরসালিন এসে ‘মা’ বলে জড়িয়ে ধরবে। চোখের জলে সন্তান ফিরিয়ে পাবার আশায় পথ চেয়ে দিন কাটছে নিখোঁজ শিশু মুরসালিনের মা-বাবার।
মুরসালিন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল আমডাকুয়া গ্রামের মো: বাচ্চু সরদার-রুবিনা বেগম দম্পতির ছেলে।
২০১৯ সালের ২ আগস্ট নিখোঁজ হয় মুরসালিন। সে সাজাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্র। ওই দিনই কাশিয়ানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রুবিনা বেগম। ছেলে উদ্ধার না হওয়ায় ১৯ আগস্ট চারজনের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ এনে মামলা করেন বাচ্চু সরদার।
মামলায় আসামিরা হলেন, বেদেনা, রাসেল শেখ, আসাদ মুন্সী ও হারুন সরদার।
এজাহারে বলা হয়, ২ আগস্ট দুপুরে মুরসালিন বাড়ির পাশে মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। নামাজ শেষে সে বাড়ি ফিরছিল। পথে সাজাইল পুরানো ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের কাছে পৌঁছানোর পর সাদা একটি মাইক্রোবাসে মুরসালিনকে তুলে নেয় অজ্ঞাত পরিচয় পাঁচ থেকে ছয়জন। তারা দ্রুত গতিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দিকে চলে যায়।
রোববার সাজাইল আমডাকুয়া গ্রামে মুরসালিনের বাড়িতে কথা হয় মা রুবিনা বেগমের সাথে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। বেঁচে আছে, না তাকে হত্যা করা হয়েছে, কিছুই জানি না। অনেক জেলায় খুঁজেছি। পুলিশও আমার ছেলের খোঁজ দিতে পারেনি। আমার বুকের ধন, এক দিন আমার বুকে ফিরে আসবে আমাকে মা বলে ডাকবে, সেই আশায় আমি এখনো বুক বেঁধে আছি।’
যেকোনো কিছুর বিনিময়ে সন্তানকে ফিরে পেতে চান তিনি।
জানা গেছে, মুরসালিনকে অপহরণের অভিযোগে মামলা হওয়ার পর পুলিশ আসাদ মুন্সী (৬০) ও হারুন সরদার (৫৭) নামের দুই আসামিকে গ্রেফতার করে। তাদের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে কাশিয়ানী থানা পুলিশ। আদালত তাদের কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। পরে আদালত মামলাটি অধিক তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন। যদিও পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি পুলিশ। একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে।
বাচ্চু সরদারের ভাষ্য, গ্রেফতার আসামিরা জামিনে এসে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার ওপর হামলা করে। তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় নয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করেন। কিন্তু উল্টা আসামি পক্ষ ২০২০ সালের এপ্রিলে একটি হত্যা মামলায় তাকে আসামি করে।
বাচ্চু সরদারের অভিযোগ, তার ছেলে অপহরণে জড়িতদের হয়ে তৎকালীন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা কাজ করেন। তাদের চাপে মামলা নিতেও পুলিশ গড়িমসি করে।
এসব কারণেই তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো বিচার পাইনি। ক্ষমতাসীন নেতারা প্রভাব খাটিয়ে মামলাটি ভিন্নভাবে নেয়ার চেষ্টা করেছেন।’
তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে ন্যায়বিচারের প্রাপ্তির আশায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ওই মামলার তদন্ত কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো ক্লু পাইনি। পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয়া হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা