গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ ও ভাঙচুর
- মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর
- ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:০৪
নারী-পুরুষ শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য দূর করে সমহারের ভিত্তিতে আরো পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাটাই বন্ধ, চাকরি স্থায়ীকরণ, বকেয়া পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরে কয়েকটিস্থানে বেকার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহানগরের ভোগড়া, নাওজোর, সালনা, কোনাবাড়ী, জিরানীবাজার এলাকায় তারা বিক্ষোভ করে। পরে তারা ভোগড়া, জিরানীবাজার এলাকায় এবং সালনা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় অন্তত অর্ধশত কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিক, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে বেশ কিছু বেকার শ্রমিক চাকরির জন্য বাসন থানাধীন ভোগড়া এলাকার ব্রাদার ফ্যাশন লিমিটেড, ক্রাউন সোয়েটার ও ইউরো ফ্যাশন কারখানায় যায়। কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে তারা হৈ চৈ শুরু করে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে নারী-পুরুষ শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য দূর করে সমহারের ভিত্তিতে আরো পুরুষ শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এসে অবরোধ করে। পরে তারা ওই কারখারনাগুলোর গেইট ভাঙচুর করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এক কারাখানা থেকে ল্যাপটপসহ বিভিন্ন মালামাল সড়কে এনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ পরিস্থিতিতে আশেপাশের কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। কারখানা ছুটির পর কিছু শ্রমিক রাস্তায় বেরিয়ে এসে আন্দোলনরতদের সাথে যোগ দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরে বৃষ্টি শুরু হলে শ্রমিকরা এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, সালনা এলাকার ক্লোটেক্স অ্যাপারেলস কারখানার সামনে দুই শতাধিক বহিরাগত যুবক আরো পুরুষ শ্রমিককে চাকুরি দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে সড়কের উভয়দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে যুবকরা কারখানায় ঢুকে ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পরে কারখানার শ্রমিকরা ধাওয়া দিলে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে যুবকরা এলাকা ত্যাগ করে।
অপরদিকে, প্রায় একই দাবিতে কাশিমপুর থানার জিরানী বাজার এলাকায় উত্তরা নিটিং কারখানার শ্রমিকরা দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দিলে ঘণ্টাখানেক পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
এছাড়াও কোনাবাড়ির বিসিক শিল্প এলাকার বিভিন্ন নিটিং কারখানার শ্রমিকরা সকাল হতে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন কারখানার গেইটে যায় এবং তাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য ওইসব কারখানা থেকে শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা চালায়। এতে পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় স্থানীয় রেজাউল অ্যাপারেলস, আই আর লিঃ, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, কাদের স্পিনিং লিঃ, লাইফ টেক্স লিঃসহ আশেপাশের অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশের এসআই হাসনা হেনা জানান, ভোগড়া এলাকায় পোশাক কারখানাগুলোতে পুরুষ ও নারীদের সমহারে শ্রমিক নিয়োগ, বেতনভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, মহানগরীর সালনা এলাকায় পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে বহিরাগত যুবকরা মহাসড়ক অবরোধ করে এবং কারখানায় ঢুকে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। কারখানার শ্রমিকরা তাদের ধাওয়া দিলে বহিরাগতরা এলাকা ত্যাগ করে।
কাশিমপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, জিরানী বাজার এলাকায় বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে প্রায় একঘন্টা পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
শিল্পপুলিশের এএসপি মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, কোনাবাড়ি বিসিকের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতনভাতা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা গত দুই দিন ধরে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে। শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা