২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গামের্ন্ট শ্রমিক সংহতির বিবৃতি

সাভারে এক পোশাক শ্রমিকসহ দেশব্যাপী ১৯৭ হত্যাকাণ্ড ও গ্রেফতার-মামলার নিন্দা প্রতিবাদ

- ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার এবং সহ-সভাপ্রধান অঞ্জন দাস এক যৌথ বিবৃতিতে সারাদেশে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড, হামলা, মামলা ও গ্রেফতার-নির্যাতন ও হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের তথ্য তুলে ধরে তারা বলেন, বর্তমানে প্রায় ১৯৭ জন গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছে, গ্রেফতার ২ হাজার ৬৫৭, প্রায় ৭৫ হাজারের বিরুদ্ধে মামলা এবং সেনাবাহিনী নিয়োগের মধ্য দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে মত প্রকাশের অধিকার দমন করা হচ্ছে। ইন্টারনেট-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধসহ মিছিল-মিটিং এবং মত-প্রকাশের ওপর নিষেধাঙ্গায় জনগণের গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। একইসাথে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় জনগনের তথ্য প্রাপ্তির অধিকারও দারুণভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। দেশে ফ্যাসিবাদী দু:শাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষণই এ সমস্ত নিপীড়ন নির্যাতন।

তাসলিমা আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এই ধরনের নির্যাতনমূলক-ভীতিকর পরিবেশের মুখোমুখি আগে হতে হয়নি কখনো।’

তারা আরো বলেন, সাভারে শুভ শীল নামে পোশাক শ্রমিকের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বুধবার শুভশীল (২৪) নামে পোশাকশ্রমিক সাভার এনাম মেডিক্যাল হাসপাতালে মারা যান। একইসাথে সারাদেশে তরুণ ছাত্র আবু সাঈদসহ বহু ছাত্র-জনতার পুলিশের গুলিতে মৃত্যু সারাদেশে জনমনে আতঙ্ক এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষোভ নির্যাতন করে সুরাহা হবে না। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তারা অবিলম্বে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ এবং নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধর দাবি জানান। শুভ শীলসহ এ পর্যন্ত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

তারা আরো বলেন, গত ১৯ জুলাই তারিখ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিকে মগবাজারে কমিউনিটি হাসপাতারের ভেতর থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ যেভাবে লাঠি-সোটা অস্ত্রসহ ভয়াবহ হামলা-নির্যাতন চালায় এবং একইসাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম এবং ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক সৈকত আরিফসহ বহু আন্দোলনকারীর ওপর নির্বাচারে হামলা করা হয় তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

তারা বলেন, প্রায় চার দিন পর পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং হাতে অর্থ না থাকা, কারখানা বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোশাক শ্রমিক, দিনমজুরসহ ও শ্রমজীবিরা। বিকাশ, ব্যাংক, বুথ এমনকি গ্যাস-বিদ্যুত প্রিপেইড ও মোবাইল ব্যবহার ও রিচার্জের সুযোগ ব্যাহত হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে জনগনকে। এই অবস্থায় আজ ও গতকাল (বুধবার) থেকে কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা মজবুত করার জন্য আহ্বান জানান।

তারা আরো যুক্ত করেন, পোশাক শ্রমিকরা তাদের মজুরির বাইরে ওভার টাইমের ওপর নির্ভরশীল। অথচ এ কয়দিন কারখানা বন্ধ হওয়ায় তাদের সঙ্কট আরো বৃদ্ধি পেলো। সামনে বেতন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে নেতারা কোনোভাবে শ্রমিকদের বেতন না কাটার দাবি জানান। জুলাই মাসে পূর্ণ মজুরি পরিশোধ করার যথা সময়ে পরিশোধের আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, গাজীপুরে টিআরজেড, আনোয়ার কম্পোজিট, সিজন ড্রেসেসসহ বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই ও লেঅফ চলছিলো। এই সমস্ত কারখানায় শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করতে হবে। দেশের এই বিপদকালে কোনো কারখানায় ছাঁটাই না করার আহ্বান জানান নেতারা।

তারা বলেন, শুভ শীলের মতো আর একটি প্রাণ যেন না হারায় তার জন্য শ্রমিকদের সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নজিরবিহীন দমন-পীড়ন বন্ধ করে স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিতের আহ্বান জানান নেতারা।


আরো সংবাদ



premium cement