হোসেনপুরে রঙ্গিন ক্যাপসিকাম চাষে যুবকের বাজিমাত
- জাহাঙ্গীর আলম, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)
- ২৫ মে ২০২৪, ১১:৩১
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে রঙ্গিন ক্যাপসিকাম চাষে বাজিমাত করেছেন একজন বেকার যুবক। বলছি, উপজেলার পুমদী ইউনিয়নের নারায়ণ ডহর গ্রামের সবুজের কথা। তিনি ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে হতে চেয়েছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় মৎস্য বিভাগের পরামর্শে প্রথমে মাছের রেনু থেকে পোনা মাছ উৎপাদনের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এতে কাঙ্খিত সফলতা না পেয়ে স্থানীয় এক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে পরে রঙিন ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ চাষ শুরু করেন। অল্প দিনেই লাভজনক এ ফসলের বাম্পার ফলন পেয়ে তিনি এখন বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্যাপসিকাম চাষি সবুজ মিয়া ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় গত বছর পলিনেট হাউজ প্রর্দশনী বাস্তবায়নে উচ্চমূল্যের ফসল ক্যাপসিকাম আবাদ শুরু করেন। প্রথম ধাপেই তিনি সব খরচাদি বাদ দিয়ে লক্ষাধিক টাকার বেশি আয় করার পাশাপাশি সবাইকে তাক লাগিয়ে এলাকায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
সরজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে দেখা যায়, এখলাছ উদ্দিনের দৃষ্টিনন্দন পলিনেট হাউজে চাষকৃত প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল ও হলুদ রঙের দৃষ্টিনন্দন ক্যাপসিকাম। তাই আনন্দিত কৃষক সবুজ মিয়াও অধিক ফলনের আশায় তীব্র গরম উপেক্ষা করে ক্যাপসিকাম ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে তার নিয়মিত পরিচর্যা ও যত্নে ক্যাপসিকামের চারাগুলো যেন হয়ে উঠেছে আরো অধিক সতেজ ও হৃষ্টপুষ্ট।
এ সময় এখলাস উদ্দিন সবুজ জানান, ইতোপূর্বে তিনি আধুনিক প্রযুক্তিতে মার্চিং পেপার দিয়ে টমেটো চাষ করে সাফল্যের পর এবার উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পলিনেট হাউজ উপহার পেয়েছেন। এরপর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের সাথে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়ে ১০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম আবাদ করেন।
তবে, গত বছরের জুন মাসে শেড নির্মাণ শেষ করলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পানি সাপ্লাই, ফগার মেশিন ইত্যাদি উপকরণের সমন্বয় না করায় কিছুটা দেরিতে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে শেড চালু করেন তিনি। পরে বগুড়ার এগ্রো ওয়ান কোম্পানি থেকে প্রতিটি ২২ টাকা করে এক হাজার ১৪৫টি ক্যাপসিকাম চারা কিনে এনে শেডের ভেতরে চারাগুলো রোপণ করেন। রোপনের দুই মাস পর থেকেই গাছে গাছে ফল ধরতে শুরু করে।
তিনি আরো জানান, ক্যাপসিকাম চাষে তার জমি প্রস্তুত, শ্রমিকের মজুরি, সার, বালাইনাশক ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম ধাপেই তিনি ক্যাপসিকাম বিক্রি করেন দেড় লক্ষাধিক টাকা। তবে স্থানীয়ভাবে এর চাহিদা কম থাকায় আশপাশের বাজারগুলোতে ক্যাপসিকাম বিক্রি খুবই কম হয়। তাই এসব উৎপাদিত ক্যাপসিকাম বিক্রি করতে হয় ঢাকার কারওয়ান বাজারে। সেখানে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে বিধায় বর্তমানে জেলা শহরের সুগন্ধা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ বিভিন্ন অভিজাত রেস্তোরাঁয় বিক্রি করছেন তিনি। প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। ইতোমধ্যে তিনি দুই লাখ টাকার বেশি ক্যাপসিকাম বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। এখনো জমিতে যে পরিমাণ ক্যাপসিকাম রয়েছে, সেগুলোও প্রায় দুই লাখ টাকা বিক্রি হবে বলেও প্রত্যাশা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস.এম শাহজাহান কবির জানান, ক্যাপসিকাম একটি অধিক লাভজনক ও বৈশ্বিক সবজি। অঞ্চলভেদে এটিকে মিষ্টি মরিচ নামেও ডাকা হয়। বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটি বিদেশে রফতানির সম্ভাবনাও রয়েছে প্রচুর। কেননা সারা বিশ্বে টমেটোর পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি এখন ক্যাপসিকাম। পুষ্টিগুণের দিক থেকেও এটি অত্যন্ত মূল্যবান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মানব দেহের জন্যও খুবই উপকারী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা