২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রাজপথে বিবস্ত্র হওয়া যুব মহিলা লীগের সেই আয়েশা মারা গেছেন ধুঁকে ধুঁকে

অন্যের সহায়তায় হয়েছে দাফন
পুলিশী নির্যাতনের শিকার আয়েশার দিন কাটতো অন্যের সহায়তায় - ফাইল ছবি

২০০৬ সালে রাজপথে বিবস্ত্র হওয়া তরুণীর ছবিটি সেই সময় আলোচিত হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য পুলিশকে বিব্রত করতে এমন কাজটি করেছিলেন সেই সময়ের মহিলা লীগ কর্মী আয়েশা আক্তার।

তার এহেন কাণ্ডে স্বামী তাকে তালাক দিয়েছিল। কিন্তু দমে যাননি তিনি। তবে যে দলের হয়ে আয়েশা আক্তার তার জীবনের বেশি সময় কাটিয়েছেন সেই দল আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। তবে তার জন্য কিছুই করেনি। চিকিৎসার অভাবে অবশেষে মারা গেলেন আওয়ামী লীগের সেই নিবেদিত কর্মী আয়েশা আক্তার।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের চানমারি বাবার বাসায় মারা গেছেন তিনি। রাত ১০টার দিকে মাসদাইর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আয়েশা আক্তারের ভাই মোক্তার হোসেন জানান, ‘সোমবার শারীরিক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল তার বোন আয়েশা। বলতে লাাগলো, ভাই আমারে নিয়ে হাসপাতালে চল। যন্ত্রণায় কান্না করতেছিল। পরে তাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যাই। ডাক্তার বললো তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে। কিন্তু আমি কিভাবে নিবো, আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। একসময় বোনকে যারা হেল্প করতো তাদের অনেককে ফোন দেই, কেউই আমার ফোন ধরেনি।’

চোখের পানি মুছতে মুছতে মোক্তার হোসেন জানান, ‘টাকার অভাবে বোনের চিকিৎসা না করাতে পেরে বাসায় নিয়ে আসি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে আমার বোন আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যায়।’

তিনি জানান, ‘আমার আরেক দুলাভাই এবং একজন অ্যাডভোকেট আমার মৃত বোনের দাফন কাপড়ের খরচ বহন করে।’

মোক্তার হোসেন জানান, ‘আমার বোন রাজনীতি করতো তাই তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তার একমাত্র কন্যা সন্তান তৃষাকে নিয়ে আমাদের কাছে ছিলো। আমাদের আটজনের সংসার। আমি আগে ঘুরে ঘুরে পান-সিগারেট বিক্রি করতাম। করোনার কারণে এখন আর করতে পারি না।’

আয়েশার মা রহিমা বেগম জানান, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি কইরা মাইয়্যা মাইর খাইছে। জামাইয়ে ছাইরা দিছে। তিন বছর অসুস্থ হয়ে ভুগে মারা গেছে। তার চিকিৎসা হয় নাই টাকার অভাবে। আমার মেয়ে কিছুই পায় নাই।’

আয়েশার বড় বোন ময়না আক্তার জানান, শেষ সময় আয়েশার বাঁচার জন্য খুবই আকুতি ছিল। কিন্তু টাকার অভাবে আমরা চিকিৎসা করাতে পারিনি। আওয়ামী লীগের জন্য আমার বোন অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে।’

পরিবারের অভিযোগ, ২০০৬ সালে পুলিশি নির্যাতনে মাথায় আঘাত পান আয়েশা। সেই থেকে প্রায়ই যন্ত্রণায় ছটপট করতেন। এছাড়া কিডনি সমস্যা, চোখে ছানি পড়েছিল তার।


আরো সংবাদ



premium cement