০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, empty
`

ট্রেনে হারিয়ে যাওয়া হাসি ১৮ বছর পর পেল মায়ের খোঁজ

হারিয়ে যাওয়ার ১৮ বছর মাকে খুঁজে পেল হাসি আক্তার - ছবি : নয়া দিগন্ত

১৮ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া হাসি আক্তারকে (২২) তার মা ও অন্যান্য স্বজনদের খুঁজে পেয়েছে। শনিবার দুপুরে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হাসিকে তার নানী জাহানারা বেগমসহ স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

এ সময় তাদের হাতে উপহার তুলে দেন, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম ও পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএমসহ আগত অতিথিরা। এদিকে হাসিকে ১৮ বছর পর কাছে পেয়ে আনন্দে দিশেহারা তার মা, নানা, নানী ও এলাকাবাসী।

হাসি গাইবান্ধা সরকারী শিশু পরিবারের (বালক) অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। হাসির মাত্র একমাস আগে নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার চেঁওখালী গ্রামের আব্দুল জলিল প্রামাণিকের ছেলে ও বেসরকারী কোম্পানীতে চাকরিরত রায়হান হাসান তুষারের সাথে বিয়ে হয়েছে।

এদিকে, শনিবার বিকালে হাসি তার স্বামীকে নিয়ে যখন তার নানা বাড়ী রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের মল্লিকপাড়া গ্রামের নানা মৃত খলিল মিয়ার বাড়ীতে পৌঁছান সে সময় এলাকার শত শত মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য ভীড় করে। সন্ধ্যার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রাম থেকে সেখানে এসে পৌঁছান হাসির মা খাদিজা বেগম। এ সময় এক অপরের জড়িয়ে ধরে আনন্দের কান্নায় মুর্ছা যায়। যা দেখে উপস্থতি অন্যান্যদেরও চোখেও আনন্দশ্রু।

হাসির মা খাদিজা বেগম জানান, ছোট সময় ৫ বছর বয়সে হাসিকে হারিয়ে কোথাও খুঁজে পায়নি। আজ ১৮ বছর পর তাকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেছেন। সেই সাথে তার পরিবার ও এলাকাবাসী অনেক খুশি।

হারিয়ে যাওয়া হাসি আক্তার বলেন, ছোট সময় হারিয়ে সে রাজশাহী ও গাইবান্ধার সরকারী শিশু পরিবার (বালিকা) এতিমখানায় বড় হন। সেখান থেকে পড়াশোনা করে তিনি এইচএসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং গাইবান্ধা সরকারী শিশু পরিবারে (বালক) অফিস সহকারী হিসেবে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। তবে ১৮ বছর পর তার স্বামীর সহযোগীতায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার নানার বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুরে আসতে পেরেছেন। এখানে তার মা, নানা-নানী ও আত্মীয় স্বজনদের পেয়ে আনন্দিত।

হাসির স্বামী রায়হান হাসান তুষার বলেন, হাসির মুখে খানখানাপুর নাম শুনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্চ করে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের নাম খুজে পান। তখন রাজবাড়ীর এক সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে হাসির বাড়ির খোঁজ পান। তারপর বিভিন্নভাবে যোগাযোগ ও সত্যতা যাচাই করে অবশেষে গতকাল শনিবার রাজবাড়ীতে হাসিকে নিয়ে তার নানার বাড়িতে আসেন। 

জাহাঙ্গীর আরিফ বলেন, হাসির ছোট বেলা থেকেই তার পরিচয়। হারিয়ে যাওয়া হাসি পড়াশোনা শেষে এখন চাকরি করছে। গত মাসে তার বিয়ে হয়। সেই সুবাদে তার স্বামীর সাথে তার ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়ার কথা আলোচনা করেন। তার স্বামী রায়হান হাসান তুষার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম দিয়ে হাসির ছোটবেলার বেড়ে ওঠা ও তার আত্মীয় স্বজনদের পরিচয় পান রাজবাড়ীর সদর উপজেলার খানখানাপুর এলাকার মল্লিক পাড়ায়। 

উল্লেখ্য, ৫ বছর বয়সে হাসি তার দাদীর সাথে ট্রেন যোগে রাজশাহীতে থাকা বাবা হাসেম আলীর বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ট্রেনের মধ্যে সে ঘুমিয়ে যায় এবং ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার দাদী নেই। তার কান্না দেখে হৃদবান এক রেলওয়ে কর্মচারী হাসিকে রাজশাহীর সরকারী ছোটমনি নিবাসে রেখে আসেন। এক বছর পর তাকে নেয় হয় গাইবান্ধা সরকারী শিশু পরিবারে (বালিকা)। সেখানে থেকেই এইচএসি পরীক্ষায় উত্তীণ হন এবং গাইবান্ধা সরকারী শিশু পরিবারে (বালক) অফিস সহকারী হিসেবে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। একমাস আগে তার বিয়ে হয় রায়হানের সাথে। ১৫ দিন আগে হাসির স্বামী রায়হান রাজবাড়ীর সাংবাদিকদের সহযোগিতায় সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের মল্লিকপাড়া গ্রামে থাকা হাসির নানা বাড়ী খুঁজে বের করতে সক্ষম হন।


আরো সংবাদ



premium cement