‘ইভিএমে ভোট দিলাম; কিন্তু কাকে দিলাম বুঝিনি’ (ভিডিও)
- শামছুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিন সুমন কাঞ্চন থেকে ফিরে
- ২৬ জুলাই ২০১৯, ০৬:৪৭
রাজধানী ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে সলিমউদ্দিন চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আবেদা বেগম। কিন্তু কাকে ভোট দিলেন বুঝতে পারেননি তিনি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) তার ভোট দেয়ার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ব্যালটে ভোট দিয়ে আসা ষাটোর্ধ্ব এই নারী ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। পরে পোলিং অফিসার গোপন কক্ষে গিয়ে তাকে ভোট দিতে সহযোগিতা করেন। একই পরিস্থিতি দেখা যায় অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে।
সরেজমিন বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পুরুষের চেয়ে নারী ভোটাররা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিতে গিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। রানীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার আফসানা বেগম বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এর আগে এ সিস্টেমে ভোট দেইনি, এ জন্য বুঝতে সমস্যা হয়। অনেকগুলো বোতামে চাপ দিতে হয়। এ জন্য সময় বেশি লাগে। পোলিং অফিসাররা অবশ্য এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন।
ওই কক্ষে আনজুয়ারা বেগম ভোট দিতে আসেন। কিন্তু তার আঙুলের ছাপ মেলাতে হিমশিম খান সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। তিনি বলেন, ভোটের কয়েক দিন আগে থেকেই এলাকার মানুষকে ইভিএমে ভোট দেয়ার পদ্ধতি শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তেমন কাজ হয়নি। বয়স্কদের আঙুলের ছাপ মেলাতে দেরি হচ্ছে। এ জন্য ভোটে ধীরগতি হয়ে যায়। কথা হয় আরেক নারী ভোটার আনিকার সাথে। তিনি বলেন, আমি ইভিএমে কোনো সময় ভোট দেই নাই। তাই কেন্দ্রের স্যারদের সহযোগিতা নিয়ে ভোট দিয়েছি। আগে ভোট দিছি সিল দিয়ে। এখন ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোট দিতে সমস্যা হচ্ছে।
কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ভোটার একা ভোট দিতে পারছেন না। ভোট দেয়ার গোপন কক্ষে ভোটারের সাথে ঢুকছেন পোলিং এজেন্টও। পাশাপাশি ভোটারের সাথে গোপন কক্ষে প্রার্থীদের লোকজনও ঢুকছেন। এই ভোটকেন্দ্রের একজন পোলিং এজেন্ট রমা রানী সূত্রধর। ভোটারদের সাথে নিয়ে তাকে একাধিকবার গোপন কক্ষে ঢুকতে দেখা যায়। গোপন কক্ষে ভোটারের সাথে কেন ঢুকছেন জানতে চাইলে রমা রানী সূত্রধর বলেন, বেশির ভাগ ভোটার একা একা ইভিএমে ভোট দিতে পারছেন না। তাই কর্তৃপক্ষের আদেশে তিনি ভোটারদের ভোট দিতে সহায়তা করছেন।
একই কক্ষে আরেক পোলিং এজেন্ট হলেন নাদিরা সুলতানা। তিনিও ভোটারদের সাথে নিয়ে গোপন কক্ষে ঢুকছেন। ভোট দেয়ার পর গোপন কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসছেন।
কাঞ্চন ভারতচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে ভোটারের লম্বা সারি। উপস্থিতি ব্যাপক হলেও ধীরে চলছে ভোট গ্রহণ। অনেকের ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলছে না। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভোট নেয়া হচ্ছে।
কাঞ্চন ভারত বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ওমর ফারুক বলেন, অনেকে ভুল ভোটার স্লিপ নিয়ে আসছেন, বোতাম বুঝতে দেরি হচ্ছে। তাই সময় লাগছে, সবাইকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে।
বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া গতকাল রাজধানীর পার্শ্ববর্তী রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। এখানে সব কয়টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয়। তবে ইভিএম এখানকার ভোটারদের কাছে একেবারেই নতুন হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছে অনেকে। ভোট দেয়ার ব্যাপারে তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল, তবে নাস্তানাবুদ হয়েছে ইভিএম পদ্ধতির সাথে অপরিচিতির কারণে। অনেক ভোটারের সাথে পোলিং এজেন্ট গোপন কক্ষে প্রবেশ করেছে। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটারদের দেখানো হয়েছে ভয়ভীতি। এ ছাড়া অনেক কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার নিজেই বলে দিয়েছেন কিভাবে কোন মার্কাতে ভোট দিতে হয়।
দুপুরে বিরাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো: জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তাতে জনগণ আশ্বস্ত হয়েছে। এই ভোটে যেন জনগণের রায় প্রতিফলিত হয়, এটা আমরা চাই।’
ইভিএমের বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটাররা আগেই বলেছিলেন, এই প্রক্রিয়ার সাথে তারা পরিচিত না। এ জন্য পরিচিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন তারা বুঝতে পেরেছে, এটা সহজ বিষয়। এখন তারা যদি কাক্সিক্ষত ফলও পেয়ে যায়, তাহলে এই শ্রদ্ধা আরো বেড়ে যাবে।
লাল মাহমুদ হাফিজিয়া মাদরাসাকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেখা যায়, ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অলিউল্লাহ খান বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে তার কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে। সব প্রার্থীর প্রতিনিধি ভোটকেন্দ্রে হাজির আছেন। কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ইভিএমে ভোট নিচ্ছেন এই প্রথম। আগেই তাদের প্রশিক্ষণ হয়েছে।
কাঞ্চন পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী চারজন। তাদের মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন পৌর যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মেয়র ও কাঞ্চন পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবুল বাশার, পৌরসভার প্রথম মেয়র ও পৌর বিএনপির সহসভাপতি মজিবর রহমান ও জেলা যুবদলের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, কাঞ্চন পৌরসভায় মোট ভোটার ৩৫ হাজার ৬৮০ জন। এর মধ্যে নারী ১৭ হাজার ৪৮৪ জন এবং পুরুষ ১৮ হাজার ১৯৬ জন। ১৭টি কেন্দ্রে ১১৮টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হয়। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, ‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এই পৌরসভায় মেয়র পদে লড়েছেন চারজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পৌর যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বর্তমান মেয়র ও কাঞ্চন পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবুল বাশার, পৌরসভার প্রথম মেয়র ও পৌর বিএনপির সহসভাপতি মজিবর রহমান এবং জেলা যুবদলের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা