খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কঠোর নয় সরকার
- জাকির হোসেন লিটন
- ২২ জুন ২০১৯, ০৬:১৮
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আগের মতো কঠোর অবস্থানে নেই সরকার। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আদালতে জামিন পেলে মুক্তির ক্ষেত্রে আপাতত হস্তক্ষেপ করার চিন্তাও নেই সরকারের নীতিনির্ধারকদের। সে ক্ষেত্রে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ঈদুল আজহার আগে বা পরে যেকোনো সময়ই মুক্তি মিলতে পারে খালেদা জিয়ার। তবে মুক্তির পর তাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে চলে যেতে হতে পারে। সরকারের একাধিক সূত্র এমন আভাস দিয়েছে।
তবে অন্য একটি সূত্র জানায়, জামিন হয়ে গেলে খালেদা জিয়া দেশের যেকোনো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন। তাকে কোনো অবস্থায়ই দেশের বাইরে যেতে দেয়া হবে না। তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হওয়া ৩৬টি মামলার মধ্যে দু’টি ছাড়া সব কয়টিতেই জামিন হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
সূত্রগুলো জানায়, সরকারের দমন-পীড়নসহ নানা কৌশলের কারণে বর্তমানে বিরোধীদের রাজনীতি চরম কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। শুধু তাই নয়, জোটের মধ্যে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে সরকারের শরিকরাও। এ অবস্থায় বেশ আত্মবিশ্বাসী সরকার। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে রাজনীতিতে আপাতত বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে দেশ-বিদেশে সরকারের ইমেজ আরো উজ্জ্বল হবে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকেরা। সে জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের।
আইন ও রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি খালেদা জিয়ার দুই মামলায় জামিনের বিষয়টি সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের ফল। সরকার হস্তক্ষেপ করলে শেষ পর্যন্ত এ দু’টি মামলাতেও জামিনের সম্ভাবনা কম ছিল। ওই দু’টি মামলার সর্বশেষ শুনানির একদিন আগেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আদালত জামিন দিলে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।’ পরদিন খালেদা জিয়ার জামিনের পরই তিনি বলেন, ‘আদালত স্বাধীন বলেই জামিন হয়েছে, সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। বাকি মামলাগুলোতে জামিন হলেও সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।’ সরকারের অন্যতম শীর্ষ এ নীতিনির্ধারকের এমন বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের সুশীলসমাজ ও রাজনীতিক দলগুলো। সরকার এমন অবস্থানে থাকলে খালেদা জিয়া শিগগিরই মুক্তি পাবেন বলে আশাবাদী তারা।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে শুরুর দিকে দেশ-বিদেশে নানা ধরনের সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। শেষ পর্যন্ত সরকার রাজনীতির বাইরে গিয়ে তার আইনি যুক্তি তুলে সে অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। খালেদা জিয়াকে কারাবন্দীর সাথে সাথেই মুক্তি দেয়া হলে তার জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যেত বলে ওই সময় মনে করা হয়। এ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও চাঙ্গা ভাব আসত। আর নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে সরকারের জন্য তা বুমেরাং হতো বলে মনে করছিলেন নীতিনির্ধারকেরা। ফলে অন্তরালে নানাভাবে তার জামিনে বাদ সাধে।
কিন্তু সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নানা কৌশলে শেষ পর্যন্ত তাকে মাইনাস করে এবং কারাবন্দী রেখেই নির্বাচন সেরে ফেলে সরকার। এই নির্বাচন নিয়ে এখন বিতর্ক থাকলেও সরকার ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রত্যাখ্যান করে আবার সংসদেও যোগ দিয়েছে। সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য মনোনয়ন দিয়েও সংসদে পাঠানো হয়েছে। দমন পীড়নে কোণঠাসা বিরোধীদের এমন মনোভাবকে বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়েও বেশ নমনীয় অবস্থানে রয়েছেন তারা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের তিনজন নেতা জানান, দেশে আপাতত রাজনৈতিক অস্থিরতার তেমন সুযোগ নেই। কোণঠাসা অবস্থায় বিএনপিও বেশ ইতিবাচক রাজনীতি করছে। তাহলে খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে লাভ কী? আদালত চাইলে তার অন্য মামলাগুলোতেও জামিন হবে।
একজন নেতা জানান, ‘জামিনের পর খালেদা জিয়াকে হয়তো দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য চলে যেতে হবে। তার রাজনীতিও সীমাবদ্ধ করে দেয়া হতে পারে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়।’