দুটি সেতুই পাল্টে দিয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিত্র
- হাসান মাহমুদ রিপন সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ)
- ২৭ মে ২০১৯, ০৯:২৬, আপডেট: ২৭ মে ২০১৯, ০৯:৩১
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মেঘনা ও মেঘনা-গোমতি সেতুর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। নেই চিরচেনা যানজটে আটকে থাকা শত শত যানবাহনের দীর্ঘ সারি। যেখানে হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে গলদগর্ম সময় কাটাত সেখানে হাইওয়ে বা ট্রাফিক পুলিশ নীরবে-নিভৃতে দাঁড়িয়ে আছে। নেই কোনো ব্যস্ততা বা বাঁশির আওয়াজ।
মহাসড়কের আষাঢ়ীয়ার চর ব্রিজে বেলা ২টা। সড়কে নেই কোনো যানজট। নেই কোনো বাধা। বাধাহীনভাবে চলছে যানবাহনগুলো। হাইওয়ে পুলিশের মধ্যেও যানজট নিরসনের তৎপরতা নেই। সোনারগাঁওয়ের দ্বিতীয় মেঘনা ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য গত শনিবার উন্মুক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতু দুটি উদ্বোধন করেন।
সরেজমিন মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, সেতু উদ্বোধনের পর পাল্টে গেছে মহাসড়কের দৃশ্যপট। যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে যাত্রী ও যানবাহন চালকদের, সেখানে বাধাহীনভাবে চলছে গাড়ি। উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনে চিরচেনা যানজটের দৃশ্য আর নেই। ফলে সহজেই গন্ত্যব্যে পৌঁছাতে পারছেন যাত্রীরা। মেঘনা সেতু মাত্র ৬ মিনিটে পার হওয়া যাচ্ছে বলে পরিবহন চালক ও যাত্রীরা জানিয়েছেন। এ দিকে সেতু দুটি খুলে দেয়ায় এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকে ভিড় জমিয়েছেন সেতু দুটিতে। অনেকে সেতুতে এসে সেলফি তুলছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন এসে আগে উঠত এক লেন বিশিষ্ট সেতুতে। তা ছাড়া পুরাতন সেতু বেশি ঢালু হওয়ায় ধীরগতিতে যান চলাচল করত। ফলে সরকারি ছুটির দিনে গাড়ির চাপ বেশি হলে তীব্র যানজট লেগে থাকত। তা ছাড়া মাল বোঝাই ট্রাক বিকল হলে তো কথাই নেই। যানজটে আটকা পড়ে দীর্ঘ সময় চলে যেতো। এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হতো যাত্রী ও চালকদের। কিন্তু এবার ঈদের আগে দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু খুলে দেয়ায় মানুষের ভোগান্তি কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মেঘনা ও মেঘনা গোমতী সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক শওকত আহমেদ মজুমদার জানান, এক হাজার ৪১০ মিটার দৈঘ্য ও ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থ দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু ১৬টি পিয়ার ও দু’পাশে দুটি অ্যাপাটমেন্টের উপর নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া পুরাতন মেঘনা-গোমতী সেতু পুনসংস্কারের জন্য ব্যয় হবে ৪০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর দৈঘ্য ৯৩০ মিটার। ১১টি পিয়ার ও দুটি অ্যাপাটমেন্টে জয়েন্টের উপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণে ব্যায় হয়েছে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পুরাতন মেঘনা সেতু সংস্কারে ব্যয় হবে আরো ৪০০ কোটি টাকা। মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা।
সেতুর ঢাকা প্রান্তে প্রায় এক কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম প্রান্তে এক কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং পশ্চিম পাশে সেতুর নিচে দিয়ে ৫০৭ মিটার দৈঘ্য সার্ভিস রোড নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ এবং পুরাতন তিনটি সেতুর সংস্কারসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। প্রায় সাত মাস আগে নতুন তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো বড় প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের আগে সম্পন্ন হয়েছে। ব্যয়ও সাশ্রয় হয়েছে। এটি বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি মাইফলক হয়ে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ‘এটি সম্ভব হয়েছে দুটি কারণে। প্রথমত, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনিটরিং দ্বিতীয়ত জাপানের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও তাদের কর্মদক্ষতার কারণেই সম্ভব হয়েছে।