বিএনপি ছাড়া জনগণের হাতে কোনো বিকল্প নেই : খন্দকার মোশাররফ
- আব্দুস সালাম, মুন্সীগঞ্জ
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:০৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনা নিজেই তার দলকে হত্যা করেছে। মাঠে এখন আ’লীগ নাই। এখন যদি নির্বাচন হয়, তাহলে জনগণের একমাত্র বিকল্প হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে মুন্সিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সড়কে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপির এই প্রবীণ নেতা বলেন, এখন যে সরকার চলছে সেটি কারো নির্বাচিত সরকার নয়। এ দেশের জনগণের সবচাইতে প্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। আর দ্বিতীয়তে ছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এই দেশে ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। সে কারণে তাদের নেত্রী পালিয়ে গেছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা ও পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলার দাবিতে সমাবেশটি আয়োজন করে মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ছাত্রজনতা ফ্যাসিস্ট সরকারকে পতন ঘটিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। যেন এই সরকার জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে পারে। আর জনগণের সবচেয়ে বড় অধিকার ভোটের অধিকার। তাই জনগণের প্রত্যাশা যত দ্রুত সম্ভব, এ দেশের মানুষের ভোটের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে একটি সংসদ নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করা।
বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, এই সরকার, এই সরকারের গোষ্ঠী বা এই সরকারের সমর্থিতরা নানাভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাদের কেউ কেউ দাবি করছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক। আর জনগণের দাবি হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
তিদনি আরো বলেন, যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করে তাদের বলতে চাই, স্থানীয় সরকারের কাজটা কী, এলাকার উন্নয়নের কাজ করে। ইউনিয়নের উন্নয়নে কাজ করে এবং অন্যান্য কাজকর্ম করে। মেম্বার হয় কারা, যারা ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ তারা। তাদের দায়িত্ব কিন্তু জাতীয় কোনো দায়িত্ব না। জাতীয় দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় সংসদের দায়িত্ব। আগে যখন জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, তখন যারা নির্বাচন করেছেন, তারা জনগণকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা যদি ক্ষমতায় যেতে পারেন, জনগণের জন্য, দেশের জন্য কী করবেন সেটা বলেছেন।
সংস্কারের বিষয় উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, আগে সংস্কার করবে, পরে নির্বাচন। এটা হয় না। কোনোদিন কোনো অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংস্কার করতে পারে না। জনগণের নির্বাচিত সরকার যেকোনো সংস্কার কাজ সেটা সম্পাদন করতে পারে। আমরা এই সরকারকে সমর্থন করেছি সংস্কারের জন্য। কিন্তু ছয় মাস হয়ে গেছে তারা তেমন কোনো কিছু করতে পারেনি। তাই আগামী নির্বাচনে যারা সরকার গঠন করবে, তারা সংস্কার করবে। তাই দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করা, দিন-তারিখ ঘোষণা করা।
তিনি বলেন, যে দিন থেকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়ে যাবে, জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে। তখন কোনো ষড়যন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি, টাকা লুটের কারণে এ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দাম বেড়েছিল। জনগণ আশা করেছিল এই সরকার এসে লাগাম ধরবে। কিন্তু সরকার পারেনি। যদি পারতো তাহলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন হতে পারতো না। ঢাকা ও চট্টগ্রামে যা ঘটেছে তা ঘটত না।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা এখনো ক্ষমতায় বসি নাই অনেকেই মনে করে আমরা বুঝি ক্ষমতায় বসে গেছি। আওয়ামী লীগ সরকার যেসব অপকর্ম করেছে আমাদের অনেকে আছে এমন অপকর্ম করতে চান। এই রকম কোনো ভাবে করা যাবে না। সবাইকে অনুরোধ করছি এই দেশের মানুষ যেন বলতে না পারে আওয়ামী লীগ সরকার যা করেছে আপনারাও তাই করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মিজানুর রহমান সিনহা বলেন, আমি তারেক রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে বলতে চাই- জোর দিয়ে বলতে চাই, মুন্সিগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসনই ধানের শীষকে জয়যুক্ত করে উপহার দেব।
মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সিনহার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো: উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য শেখ মো: আবদুল্লাহ, মোশাররফ হোসেন পুস্তি, শহিদুল ইসলাম মৃধা, আবদুল বাতেন, সৈয়দ সিদ্দিক উল্লাহ, আমিরুল হোসেনসহ যুবদল, ছাত্রসহ দলটির অঙ্গসংগঠনের শতশত নেতা-কর্মীরা।