০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ৯ শাবান ১৪৪৬
`

ছাত্রদের উপর হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা সারজিসের

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ছাত্রদের উপর হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

তিনি বলেন, গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় পরিকল্পিতভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সন্ত্রাসীরা এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের যোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ইন্টেলিজেন্স যদি আজকে রাতের মধ্যে গতকালের হামলায় জড়িত খুনি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে না পারে, তাহলে আমাদেরকে তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোথাও আমাদের কোনো সহযোদ্ধার গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করলে পুরো বাংলাদেশ আবার নতুন করে জেগে উঠবে। আমরা প্রয়োজনে যেমন ঢাকায় নামতে পারি, যেমন গাজীপুরে আসতে পারি, আমরা প্রয়োজনে দেশের প্রত্যেকটি জেলায় জেলায় যেতে পারি। আমরা অভ্যুত্থানে দেখিয়েছি, এ দেশের ছাত্র-জনতা সঠিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে ধৈর্য ধরেছে। কিন্তু ধৈর্যের একটা বাঁধ আছে। এই দেশে প্রশাসন থেকে শুরু করে যারা কাজ করছে, তারা যদি আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলে, তাহলে দেশে নতুন আরেকটি বিপ্লব দেখাতে হবে।

গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে গাজীপুর শহরের রাজবাড়ি সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন তারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখনো তার দোসররা আমাদের আশপাশে রয়েছে। সমাবেশ চলাকালেও আমাদের ভাইদের ওপর হামলা করছে। প্রশাসনের অনেকের এ বিপ্লবের প্রতি আনুগত্য নেই। আমাদের সংযমের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। কোনোভাবেই বিশৃঙ্খলা করা যাবে না।’

এ সময় হামলাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আলী নাসের, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিম, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত শিক্ষার্থী নাবিল প্রমুখ।

এর আগে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে শুক্রবার রাত ৩টার দিকে তারা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম। খোঁজখবর নিয়ে হামলার সঠিক বিচার হবে বলেও তারা আশ্বাস দেন।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও আহত শিক্ষার্থীরা বলছেন, ধানমন্ডিতে ভাঙচুরের পর আমরা গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেছি যে কোথাও ভাঙচুর হলে আমাদের জানাতে। শুক্রবার রাতে আমাদের কাছে খবর আসে, ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হচ্ছে। এটি শোনার পর প্রতিহত করতে আমাদের শিক্ষার্থীরা রওনা হয়। দ্রুত ১৫ জন ঘটনাস্থলে চলে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, লুটপাট হচ্ছে। এতে বাধা দিলে পেছন থেকে হুট করে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। মুখ ঢাকা কিছু লোক রাম দা হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। অন্য শিক্ষার্থীরা আসার আগেই ওই ১৫ জনকে ছাদে নিয়ে বেধড়ক পেটায় ও কুপিয়ে জখম করে। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও পেটায়। পুলিশকে জানানো হলে তারা দুই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করে। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীও আসে।


আরো সংবাদ



premium cement