আগে গণহত্যার বিচার, তারপর অন্যকিছু : জামায়াত আমির
- জি এ এম আশেক উল্লাহ ও গোলাম আজম খান
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:২৯, আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:৪৯
![](https://www.dailynayadiganta.com/resources/img/article/202502/19690804_183.jpg)
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলছেন, ‘চব্বিশের গণহত্যার অবশ্যই বিচার হতে হবে। আগে বিচার, তারপর অন্যকিছু। বিচার না হলে শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি হবে এবং সেটা দেখতে চাই না। যারা বুক চেতিয়ে দেশ পুণঃস্বাধীন করেছে জামায়াতে ইসলামী তাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করতে পারে না।’
আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে কক্সবাজার জেলা জামায়াত আয়োজিত বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন জনসভায় পরিণত হয়।
এ সময় তিনি দেশের মানুষকে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা ১৫ বছর আন্দোলন করেছি, কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। দেশের যুবকেরা জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। ৫ আগস্টের এক দিন আগেও কেউ জানতো না পরের দিন দেশে কী হচ্ছে। এখন বলা হচ্ছে অমুক ভাই অমুক নেতা আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড আমরা বিশ্বাস করি না। আন্দোলনে আল্লাহর বিশেষ রহমত ছিল। ১৮ কোটি মানুষ আন্দোলনে ছিল, আর জীবন বিলিয়ে নেতৃত্বে ছিল ছাত্ররা।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের জনগণ মনে করেছিলেন, তাদের জুলুম ও দুঃশাসন থেকে রক্ষা পেয়েছেন। কিন্তু না, তিনি দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিতে চান না। এ দেশের হাজার হাজার মানুষ খুন-গুম করে, পঙ্গু করে পালিয়ে গিয়ে যদি উসকানি দেন, এটা কি বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ মেনে নেবেন? উসকানির কারণে যত পরিবেশের সৃষ্টি হবে, এর দায় উস্কানিদাতাকেই নিতে হবে।’
জামায়াত আমির পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা শাপলা চত্বরের গণহত্যাকারী বেনজিরের ফাঁদে পা দেবেন না, তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করুন।’
ডা. শফিকুর রহমান দেশের মানুষের প্রতি আইনশৃঙ্খলা হাতে তুলে না নিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী দুর্বৃত্তদের ধরে জেলে দেবে আর পরের দিন ছেড়ে দেবেন তা আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই জেলে রেখে তাদের বিচার।’
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘যতগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ছিল, তারা সব ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারা পার্লামেন্ট, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগসহ সবগুলোকে ধ্বংস করেছে।’
গত ১৫ বছরে দেশ থেকে ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলতেন। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মগোপন ও জেলে ঢোকায় তাদের অবৈধ সম্পদের খনি বের হয়ে আসছে। সরকারের কাছে আমাদের স্পষ্ট দাবি, জনগণের কাছ থেকে চুরি করে পাচার করা টাকা উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে।’
গত ৫৪ বছরে জাতিকে বিভিন্নভাবে ভাগ-বিভক্ত এবং টুকরা টুকরা করে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সুকৌশলে এটি করেছে। আমরা সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু বিশ্বাস করি না। ইসলাম ধর্ম কারো ওপর জোর খাটায় না। সত্যিকারের কোনো ধর্ম কোনো ধর্মের ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয় না। আমরা অহিংস ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই।’
চাঁদাবাজি, দখলদারি, ঘুষ-দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারেও নাকি এর থেকে বাদ নেই। ৫ আগস্টে এতগুলো প্রাণ দেয়ার পর কেন অপকর্ম হবে? আমাজনের জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসা কোনো প্রাণী তো আর চাঁদাবাজি দখলবাজি করছে না। যারা এই অপকর্ম করছে তারা চিহ্নিত। মানুষকে স্বস্তিতে বাঁচতে দেন। এসব ধান্দাবাজি থেকে সরে না এলে তরুণ প্রজন্ম কিন্তু আপনাদের ছেড়ে দেবে না।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতে চাঁদাবাজির কোনো সুযোগ নেই। অপকর্মের সাথে আমাদের সহকর্মীরা জড়িত নয়। কারণ আদর্শিকভাবে জামায়াত এগুলো বিশ্বাস করে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ হয়নি, কেবল শুরু হয়েছে। দেশে সকল বৈষম্য দূর করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এবং মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য হলো দূর্নীতি দুঃশাসনমুক্ত একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।’
তিনি জামায়াতের ওপর নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘জামায়াত নেতাদের ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। তবুও আমাদের নেতারা পালিয়ে যাননি। জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে প্রতীকও কেড়ে নিয়েছে, শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে কিন্তু জামায়াত শেষ হয়ে যায়নি।’
তিনি কারাগারে আটক জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করে বলেন, ‘সম্পূর্ণ অন্যায় অবিচার করে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। আমাদের দাবি, তিনি যে নির্দোষ ছিলেন সেটি ঘোষণা করে তাকে অবিলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে।’
তিনি কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন, ‘কক্সবাজার কী সৎ মায়ের এলাকা যে এত পিছিয়ে থাকবে?’
শফিকুর রহমান কক্সবাজারে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এই সরকার কক্সবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করবে, প্রয়োজনে নির্বাচিত সরকার এসে উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজ শেষ করবেন।’
জামায়াত আমির কক্সবাজারের চারটি সংসদীয় আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের জন্য ভোট চেয়ে বলেন, ‘সুশাসন মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের জন্য দেশে সৎ মানুষের শাসনের বিকল্প নেই।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীদের বিচার না হলে ছাত্র জনতা আবারো রাস্তায় নামবে। ক্ষমতা পাল্টালে শুধু হবে না, সৎ মানুষদের শাসন দরকার। জামায়াত সেই লক্ষ্যে কাজ করছে।’
অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই ফ্যাসিবাদ কায়েম করে দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। পলাতক শেখ হাসিনা এখন ভারতে বসে নানা ষড়যন্ত্র ও বাংলাদেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। কারণ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’
কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ বলেন, ‘শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়কে সুসংহত করতে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহ জাহান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে জামায়াতের ওপর যত নির্যাতন হয়েছে আর কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর তা হয়নি। তা সত্ত্বেও জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি, যাবে না।’
কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক এমপি অধ্যাপক এনামুল হক মঞ্জু, কক্সবাজার হিন্দুকল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি পরিমল কান্তি শীল, মাওলানা হাবিব উল্লাহ, জেলা সেক্রেটারি জাহেদুল ইসলাম, শহর আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক, শহীদুল আলম বাহাদুর, অ্যাডভোকেট সলিমুল্লাহ বাহাদুর, সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, শিবিরের জেলা সভাপতি সালমান নূরী, কক্সবাজার সদর উপজেলা আমির অধ্যাপক খুরশীদ আলম আনসারী প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা