দুইজনের যাবজ্জীবন, সাবেক এমপিসহ ১০ জন খালাস
- মালেক আদনান, টাঙ্গাইল
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫২
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে প্রত্যেককেই আরো এক বছর বিনাশ্রাম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মামলার অন্যতম আসামি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১০ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক মো: মাহমুদুল হাসান চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি মামলায় যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাখেন বিচারক।
দণ্ডিত আসামিরা হলেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বিসিক তারুটিয়া গ্রামের মরহুম মোখলেছুর রহমানের ছেলে কবির হোসেন কবির এবং টাঙ্গাইল শহরের দক্ষিণ কলেজ পাড়ার মোহাম্মদ রমজান ড্রাইভারের ছেলে মোহাম্মদ আলী। তারা দুজনেই পলাতক রয়েছেন।
খালাসপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন বাবু ওরফে দাঁতভাঙ্গা বাবু, আলমগীর হোসেন চান, নাসির উদ্দিন নুরু, ছানোয়ার হোসেন ছানু, মাসুদুর রহমান ও ফরিদ আহাম্মেদ।
রায় ঘোষণার সময় সহিদুর রহমান খান মুক্তি, বাবু ওরফে দাঁতভাঙ্গা বাবু ও নাসির উদ্দিন নুরু আদালতে হাজির ছিলেন। এর মধ্যে মুক্তি অন্য একটি মামলায় জেলহাজতে থাকায় সেখান থেকে তাকে আদালতে আনা হয়। রায় ঘোষণার পর আবার তাকে জেলহাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি দু’জন জামিনেই ছিলেন।
খালাসের পর সহিদুর রহমান খান মুক্তি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। এজন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান স্বপন বলেন, এ মামলায় ২৭ জন সাক্ষি আদালতে সাক্ষ্যপ্রদান করেন। গত ৫ আগস্টের পর যুক্তিতর্কের পর্যায়ে মামলাটি আমার হাতে এসেছে। রাষ্ট্র পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। বিজ্ঞ আদালত রায়ে দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ জনকে খালাস দিয়েছেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়ার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার তিন দিন পর ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
২০১৪ সালের অগাস্টে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই আমানুর রহমান খান রানা, সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান খান কাকন ও সানিয়াত খান বাপ্পার নাম উঠে আসে। তখনই তারা আত্মগোপনে চলে যান। একপর্যায়ে আমানুর রহমান খান রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিন বছর পর জামিনে মুক্ত হন। গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি আবার আত্মগোপনে চলে যান। এছাড়া তার অপর দুই ভাই কাকন ও বাপ্পা ২০১৪ সাল থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।
২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল ডিবির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফীজুর রহমান চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। বিচার চলাকালে দুই আসামি আনিছুর রহমান ওরফে রাজা এবং মোহাম্মদ সমির কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। মামলা চলাকালে বাদি নাহার আহমেদও মারা যান।