পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বিচার চায় কিবরিয়া ও সবুজের পরিবার
- হারুন আনসারী, ফরিদপুর
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৩০
পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হলে সরকারের কাছে খুনের রহস্য উন্মোচন এবং জড়িতদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে খুনের শিকার এমভি বাকেরার মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী রোজি আক্তার (৪৬)। একইসাথে তার ননদ রিজিয়া বেগম অতি দ্রুত খুনিদের খুঁজে বের করতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
ময়নাতদন্ত শেষে গোলাম কিবরিয়া (৬০) ও তার বোনের ছেলে সবুজ শেখের (২৭) লাশ মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ফরিদপুরে পৌঁছায়। এরপর সদর উপজেলার জোয়াইর গ্রামের জোয়ারের মোড় জামে মসজিদ কবরস্থানে তাদের দুজনকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।
গত প্রায় ৪০ বছর ধরে জাহাজে চাকরি করেছেন গোলাম কিবরিয়া। অবসর নিয়ে দু-একদিনের মধ্যেই তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। বাড়িতে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছোট একটি ছেলে রয়েছে তার। ১০ জানুয়ারি তার মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করা হয়। কিন্তু বিয়ের আনন্দের বদলে সেখানে চলছে শোকের মাতম।
গোলাম কিবরিয়ার ভাগ্নে শেখ সবুজের (২৬) বাড়ির দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম। চলতি মাসেই মামার হাত ধরে জাহাজে লস্করের কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। জোয়ার গ্রামের মরহুম আতাউর রহমানের ছয় ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে সবুজ একজন। চাকরিতে যাওয়ার সময় তার মা ঢাকায় থাকায় শেষ দেখাটাও হয়নি এই মা-ছেলের।
‘তুমি তুমি দোয়া কইরো আমার জন্য। আমি তোমার কাছে টাকা পাঠায় দিবানি’, মাকে বলেছিলেন সবুজ মোবাইলে। ছেলের সেই স্মৃতি মনে করে কাতর হয়ে পড়ছেন রিজিয়া বেগম।
তিনি বলেন, ‘মাত্র তিন দিন আগেই আমার ছেলের সাথে কথা হইছে। আমারে বলেছে, মা আমি মামার সাথে বাড়ি আসতেছি। আমার ভাইর সাথেও আমার কথা হইছে। মেয়ের বিয়ে। আইজই আসার কথা ছিল।’
কান্নায় ভেঙে যাওয়া রিজিয়া বেগম বলেন, ‘ওরা মালছামানা সবকিছু নিয়ে যাইত, আমার ছেলেগের ক্যান মাইর্যা গেল? আমি এই দুইটা শোক কেমনে সইব? অসুখ-বিসুখ হয় আলাদা কথা। এমনে মার্যা থুইয়্যা যায় নেকি? ওরা কি আজরাইল নেকি? ও আল্লাহ্ এমন কোনো নজির আমি জীবনে দেখি নেই এক জাহাজে এমনে সবাইরে মাইর্যা ফেলে। আমি বিচার চাই। আমি প্রশাসনের কাছে এর কড়া বিচার চাই।’
গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী রোজি আক্তার বলেন, ‘মেয়ের বিয়ের জন্য জানুয়ারির ১০ তারিখে তারিখ ঠিক করছে উনি। বাপের যেই স্বপ্ন থাকে সন্তানরে নিয়্যা। মেয়েরে উঠ্যায় দিবি বৈল্যা আসার কথা ছিল আজকালের ভেতরেই। আইজ নয়তো কাইলই বাড়ি আসার কথা।’
তিনি বলেন, ‘যদি পরিকল্পিতভাবে এসব হয় তাহলে আমি অবশ্যই সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।’
সবুজের বড় ভাই মিজানুর রহমান ফারুক বলেন, ‘আমি নিজে গেছি খবর শুনে লাশ আনতে। তাদের যেভাবে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে মাথার ঘিলু বের হয়ে গেছে। কোনো মালামাল নেয়নি। এটি কোনো বিশেষ গোষ্ঠী আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য করতে পারে। মালিক পক্ষ থেকেও হতে পারে। আবার শুনছি, চট্টগ্রামে সারবোঝাই করার সময়েও তাদের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। এসব কোনো কারণও থাকতে পারে।’
নিহত গোলাম কিবরিয়ার সহকর্মী একই কোম্পানির অন্য আরেকটি জাহাজের মাস্টার মো: আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে এরপরে আর কেউ এমন ঘটনা না ঘটাতে পারে।’
এছাড়া তিনি নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ করে টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের জন্য। অন্যথায় আমরা জাহাজ শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে নামব।’
গত সোমবার চাঁদপুরের হাইমচর নীলকমল ইউনিয়নে মেঘনা নদীর মাঝেচর এলাকায় সারবাহী জাহাজ এমভি আল-বাকেরাহ মাস্টার ও সুকানিসহ সাতজন খুনের শিকার হন। এদের কিবরিয়া ও সবুজ ছাড়াও ফরিদপুরের সদর উপজেলার বগারটিলা গ্রামের সেকেন্দার খালাসির ছেলে জুয়েল রানা (৩৫) নামে এক যুবক ও ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তার শ্বাসনালি কেটে গেছে। তার অবস্থাও শঙ্কটাপন্ন বলে জানা গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা