২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ পৌষ ১৪৩১, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

একটি মাদরাসা নির্মাণের স্বপ্ন অন্ধ হাফেজ রাসেলের

- ছবি : নয়া দিগন্ত

চোখ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেও অন্ধত্ব হতে হয়েছে হাফেজ রাসেলকে (৩২)। কিন্তু তিন বছর বয়সের সময় মায়ের মৃত্যুতে কান্না করতে করতে তার দু’টি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে যায়। এলাকায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কোরআনের হাফেজ রাসেলকে কম-বেশি সবাই চেনে। রাসেল জীবিকা নির্বাহের জন্য রাস্তায় রাস্তায়, হাটে বাজারে, গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে মাথা ব্যাথার মলন, দাঁতের মাঝন বিক্রি করেন। তাও ঠিকমতো বিক্রি করতে পারে না। রাস্তায় একা চলাচল করতে গিয়ে শিকার হয়েছেন অনেক দুর্ঘটনার। মরণকে উপেক্ষা করেও ফেরি করে যা পায় তাতে সংসার চলা তো দূরের কথা নিজেই বেঁচে থাকাই কষ্টসাধ্য। মানুষের কাছে হাত না পেতেই তিনি নিজেই সাবলম্বী হতে চেয়েছেন। তার স্বপ্ন একটি মাদরাসা তৈরি করার। সরকার ও বৃত্তশালীরা চাইলেই পূরণ করতে পারে হাফেজ রাসেলের অপ্রত্যাশিত স্বপ্ন।

হাফেজ আবুল হাসান রাসেল মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা চর ঠেঙ্গামারা গ্রামের মরহুমর আব্দুল আদেল বেপারীর ছেলে। তার জন্মের তিন বছর পরে মা মারা যায়। মায়ের মৃত্যুর শোক যেতে না যেতেই তার পাঁচ বছর বয়সেই বাবা মারা যান। পরে তার বড় ভাই ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী তাকে লালন-পালন করেন।

এদিকে মা ও বাবার জন্য কান্না করতে করতে চোখের দৃষ্টি হারিয়ে যায় পাঁচ বছর বয়সেই। পরে তার চাচাতো ভাই তাকে ডাসার হাফিজিয়া এতিমখানা মাদরাসায় ভর্তি করে দেয়। সেখান থেকে শুনামের সাথে দীর্ঘ সাত বছর পড়াশোনা করে তিনি হাফেজ হয়েছেন। পরে একটি মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি মসজিদের মোয়াজ্জিন হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছিলেন। অন্ধ হওয়ায় সেই খেদমতের কাজও চলে যায়। পরে টোরকি মাজার মসজিদে খেদমতের কাজ নিয়েও সেখানেও বেশি দিন করতে পারেনি। স্ত্রী ও এক ছেলের খরচের কথা চিন্তা করে কোনো উপায় না পেয়ে ফেরি করে করে এ সকল বিষয় বিক্রি কোনোমতে জীবনযাপন করেন। যেখানে একটা মানুষের প্রতি মাসে হাত খরচ হিসেবে লাগে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। আল্লাহর রহমতে সেখানে দুই থেকে তিন হাজার টাকায় সংসার চালায়।

হাফেজ রাসেলের সাহায্যের জন্য স্থানীয় ও তার স্বজন ও এলাকাবাসী আবেদন জানিয়েছেন।

হাফেজ আবুল হাসান রাসেল বলেন, ‘আমি অন্ধ হাফেজ। চোখে দেখি না। আমার বাড়িতে একটু জমি আছে, ঘর দেয়ার সামর্থ্য নাই। আপনারা আমাকে একটা যদি ঘর তুলে দেন। তাহলে ওই ঘরের এক পাশে আমি থাকবো আর এক পাশে একটা মাদরাসা নির্মাণ করতে চাই, যা দিয়ে দ্বীনি শিক্ষা দেয়া যাবে। আপনাদের প্রতি আমার দাবি ও আকুল আবেদন আপনারা আমাকে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেন।’

ডাসার এতিমখানা হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা মো: জুবায়ের হাসান জানান, আবুল হাসান রাসেল ডাসার এতিমখানা হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে হাফেজ হয়েছে। তিনি আমাদের মাদরাসারই ছাত্র ছিলেন। আমরা তাকে আলিফ বা তা থেকে পড়েছি। তিনি একটা মসজিদে খেদমতে ছিল। খেদমত ছুটে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। তার জমি আছে ঘর নাই তারে যদি একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আল্লাহর রহমতে সেখানে মাদরাসা দিয়ে কোনোরকম বাঁচতে পারবে।

এ ব্যাপারে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, হাফেজ রাসলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে, উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার মাধ্যমে তিনি যাতে পাঠদানের মাধ্যমে সমাজের স্রোতের সাথে টিকে থাকতে পারে তার সুব্যবস্থা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement