১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি

কিশোরগঞ্জে ডিসিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম

জেলা প্রশাসকে প্রত্যাহার এবং শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তিকারী মুক্তিযোদ্ধার গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন - সংগৃহীত

বিজয় দিবসে জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে এক বক্তা জুলাই-২৪ বিপ্লবের শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার জেরে কিশোরগঞ্জ পালিত হয়েছে মানববন্ধন কর্মসূচি। এতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানকে প্রত্যাহার এবং শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তিকারী মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের সময় বেঁধে দেয়া হয়।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলার ব্যানারে এই কর্মসূচিতে জেলার ছাত্র আন্দোলনের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী, আইনজীবীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক অভি চৌধুরী, ইকরাম হোসেন, মাশরাফি মুর্তজা, আফসানা আক্তার মিম, নাসরুল্লাহ ও ছাত্র আন্দোলনে তাড়াইল উপজেলার শহীদ তরিকুল ইসলাম রুবেলের বড় ভাই জুয়েল আহমেদ প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের দাবি পক্ষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।

মানববন্ধনে অভি চৌধুরী বলেন, ‘জেলা প্রশাসন কর্তৃক শিল্পকলা একাডেমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সামনে কথিক মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী আমাদের ২৪ বিপ্লবের অন্যতম বীর মহানায়ক শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যে আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করেছে আমরা মনে করি সে ২৪ এর আন্দোলনকে অস্বীকার করেছে। এই ইদ্রিস আলীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে এবং এই জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা এখান থেকে আল্টিমেটাম দিচ্ছি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। ২৪ ঘণ্টা পরে আরো কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন বলেন, ‘যার জীবনের বিনিময়ে, যার স্পিডে, যার আত্মাহুতির বিনিময়ে এই বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা জেগে উঠেছিল এবং এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে আমরা বাংলাদেশকে মুক্ত করেছি। আমরা দু’হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে নতুন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। ভারতের তাবেদার মুক্ত রাষ্ট্র পেয়েছি। হাসিনার স্বৈরশাসন থেকে আমরা মুক্তি লাভ করেছি। সেই শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করছি যে আমাদের ইউনিয়ন থেকে উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন থেকে সচিবালয় পর্যন্ত সরকারের সকল সেক্টরে স্বৈরাচারের দোসরেরা ছলে-বলে কৌশলে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আবু সাঈদ-মুগ্ধসহ শহীদদের আত্মত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, কটূক্তি করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, প্রশাসন যদি মনে করে স্বৈরাচারের দোসরদের নিয়ে কাজ করবে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। আমরা দেশকে হাসিনামুক্ত করেছি। এখন আমাদের সংগ্রাম, হাসিনার দোসরদের থেকে প্রশাসন মুক্ত করা। আমরা অলরেডি শহীদ হয়ে গিয়েছি, বোনাস লাইফ লিড করছি। কোনো বাধা-ভয় আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা প্রশাসন থেকে হাসিনার দোসরদের মুক্ত করেই ঘরে ফিরব।’

গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে কিশোরগঞ্জে জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান। বিষয়টি নিয়ে তখন থেকেই কিশোরগঞ্জে তোলপাড় চলছে। দৈনিক নয়া দিগন্তে একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয় এ ঘটনা নিয়ে।

অভিযোগ ওঠে, জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেয়া হয় জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন এমন কয়েকজনকে। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা’। বিজয় দিবসে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসককে মঞ্চে রেখেই ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া নামে এক মুক্তিযোদ্ধা প্রশ্ন তোলেন, ‘আবু সাঈদ কিসের শহীদ? আবু সাঈদ শহীদ হইছে? কার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হইছে? তারা আন্দোলন করছে, দেশটাকে এক হাত থেকে আরেক হাতে পরিবর্তন করছে। তারা এখন আমাদেরকে শাসন করবে?’

বক্তব্য শেষে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে স্লোগান ধরেন।

এ সময় ডিসি তার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপারও।

অনুষ্ঠানের এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার দু’দিন পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণ নেয়া হয়নি।

জানা গেছে, ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের সময়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ছিলেন।
তার ছেলে খালেদ সাইফুল্লাহ সাফাত নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন জেলা ছাত্রলীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারের দাবিতে যারা মানববন্ধন করেছিলেন ডিসি তাদের বেশিভাগকেই ডেকে নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেন এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ রেখে তাদেরকেই বক্তৃতার সুযোগ দেন।

এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফৌজিয়া খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলমতের চিন্তা না করে আমরা তালিকাভুক্ত সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম। বক্তব্যে কে বা কারা কী বলেছে আমি তা লক্ষ্য করিনি। এছাড়া অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কারা বক্তব্য দেবেন এটাও আমি নির্ধারণ করিনি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাই এটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’

এমন পরিস্থিতিতে ‘বীর শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে ডিসি এবং এসপির সামনে কটূক্তি ও বিতর্কিত স্লোগান এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের পূনর্বাসনের চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন’ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলার ব্যানারে ডিসি অফিস প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
চকরিয়ায় ইটভাটার মিক্সার মেশিনে আটকা পড়ে ২ শ্রমিকের মৃত্যু ইজতেমায় সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৪, আহত ৪০ শিশু চিকিৎসকদের পদোন্নতির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালিত আবারো বর্ষসেরা গোলরক্ষক হলেন বিশ্বজয়ী এমি মার্টিনেজ এলসি সংক্রান্ত সব বকেয়া এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে : গভর্নর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সখ্য নিয়ে ভারতে উদ্বেগ, ভীত ভারতীয় গোয়েন্দারা তাবলীগ জামাতের সাথীদের ওপর হামলায় জামায়াতের উদ্বেগ রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে : নৌ উপদেষ্টা প্রয়োজনীয়তা উদ্ভাবনের জননী বাংলাদেশের চারপাশে বাঁধ তৈরি, ভারতের আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন ন্যাটো পেলো ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার দায়িত্ব

সকল