গাজীপুরে নতুন ট্রেন ও অসমাপ্ত বিআরটি লেনে বিআরটি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন
- মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর
- ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:১৭
ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে নতুন ট্রেন এবং অসমাপ্ত বিআরটি লেনে এক যুগ পর বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। রাজধানী ঢাকার সাথে গাজীপুরবাসীর যোগাযোগ আরো সহজ করতে এসব ট্রেন ও বাস সার্ভিস চালু করা হয়।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) গাজীপুরের জয়দেবপুর রেল জংশন স্টেশনে নতুন জয়দেবপুর কমিউটার ট্রেনসহ পূর্বের তুরাগ কমিউটার ট্রেনের মোট চার জোড়া ট্রেন ও জয়দেবপুরের শিববাড়ী মোড় এলাকায় বিআরটি লেনে বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সকালে উপদেষ্টা জয়দেবপুর রেল জংশন স্টেশনে নতুন ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: ফাহিমুল ইসলাম, বাংলাদেশের রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আফজাল হোসেন।
নতুন ট্রেনের উদ্বোধনের সময় উপদেষ্টা বলেন, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে এ ট্রেন চালু করতে যাচ্ছি। এর উদ্দেশ্যে হলো যেন আপনারা এখান থেকে গিয়ে ঢাকায় অফিস করতে পারেন এবং অফিস শেষে এখানে আবার ফিরে আসতে পারেন। গাজীপুরে অনেক শিল্পকারখানা আছে। এখানে অনেকে চাকরি নিতে চান না যাতায়াতের সময়ের জন্য। এখন তারা অল্প সময়ে, সহজে যাতায়াত করতে পারেন। ট্রেনে স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে খেটে খাওয়া মানুষ যাতায়াত করতে পারবে।
তিনি বলেন, আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা-নরসিংদী, নরসিংদী-ঢাকা একটি কমিউটার ট্রেন এবং একই দিনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে কমিউটার ট্রেন চালু করা হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, এখনো পর্যন্ত রেল একটি লোকসানিপ্রতিষ্ঠান। রেলের সেবা বাড়াতে হলে তার খরচ উদ্ধার করতে হবে। খরচ উদ্ধার করতে না পারলে সেবার মান ও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো যাবে না। পরে উপদেষ্টা পতাকা নাড়িয়ে এবং বাঁশি ফুঁ দিয়ে নতুন ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন। এ সময় জয়দেবপুর কম্পিউটার ট্রেনে চড়ে জয়দেবপুর জংশন থেকে ধীরাশ্রম স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণ করেন ফাওজুল কবির খান।
পরে উপদেষ্টা পার্শ্ববর্তী শিববাড়ী মোড় এলাকায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশনের (বিআরটিসি) পরিচালনায় ঢাকা থেকে শিববাড়ী, গাজীপুর বিআরটি লেনে পরীক্ষামূলকভাবে বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিসের চলাচল উদ্বোধন করেন। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএর মহাপরিচালক ড. মো: মনিরুজ্জামান, বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার (ট্র্যাফিক) মো: ইব্রাহিম খান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি, তারপরও এটি উদ্বোধন করার কারণ হচ্ছে মানুষের কিছুটা হলেও যাতায়াতের সুবিধা হবে। এখন বিআরটি লেনে পরীক্ষামূলকভাবে বিআরটিসি বাস চালু করা হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ বিআরটি বাস সার্ভিস চালু করতে পারব।
তিনি আশা প্রকাশ করে আরো বলেন, ভবিষ্যতে বিআরটি লেনের বাসগুলো ইলেকট্রিক লাইনে চলাচলের ব্যবস্থা করব।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আগে সব প্রকল্পেই দুর্নীতি হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। যদি আগের দুর্নীতি নিয়ে কারও কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকে, যা আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে তা মন্ত্রণালয়কে জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, গাজীপুরের শিববাড়ী বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) টার্মিনাল থেকে বিআরটি করিডোর ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে ১০টি বিআরটিসি এসি বাস বিমানবন্দর পর্যন্ত এবং বিমান বন্দর থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে ফার্মগেট হয়ে গুলিস্থান পর্যন্ত চলাচল করবে।
শিববাড়ী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া ৭০টাকা এবং গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়া ১৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যাত্রী চাহিদা এবং স্টেশনগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাসের সংখ্যা পরে বাড়ানো হবে। বিআরটিসি বাস ছাড়াও বিআরটি করিডোর ব্যবহার করে প্রাইভেটকার অ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদি ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে অন্যকোনো ভারী যানবাহন অথবা রিকশা, অটোরিকশা বা মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবেন। ইতোমধ্যে বিআরটি প্রকল্পের সার্বিক অবকাঠামো নির্মাণ কাজ ৯৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং বিআরটি বাস ক্রয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রকল্প সংক্রান্ত নথি অনুসারে, বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারের চারটি বিভাগ। প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি এডিবি, এএফডি এবং ডিইএফ। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চায়না গেজহুবা গ্রুপ, জিয়াংশু প্রভিনশিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ।
সূত্র আরো জানায়, ২০১২ সালে প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় দু’হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। দফায় দফায় প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে বাড়ানো হয় প্রকল্প ব্যয়, বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। সবশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার লক্ষ নিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, শুরুতে এ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ছিল চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত। কিন্তু পরে সময় বৃদ্ধির সময় প্রকল্প ব্যয় এবং মানুষের ভোগান্তি বাড়ানো হলেও প্রকল্প সঙ্কুচিত করা হয়। প্রকল্পটি সঙ্কুচিত হয়ে বর্তমানে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে কেরানীগঞ্জের পরিবর্তে দূরত্ব কমিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে শেষ করা হয়েছে।
অপর দিকে জয়দেবপুর-কমলাপুর রুটে নতুন জয়দেবপুর কমিউটার ট্রেনসহ পূর্বের তুরাগ কমিউটার ট্রেনের মোট চার জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। ট্রেনগুলো হলো তুরাগ কমিউটার-১, তুরাগ কমিউটার-২, তুরাগ কমিউটার-৩ ও তুরাগ কমিউটার-৪ এবং জয়দেবপুর কমিউটার-১, জয়দেবপুর কমিউটার-২, জয়দেবপুর কমিউটার-৩ ও জয়দেবপুর কমিউটার-৪।
ট্রেনগুলি সূচি অনুযায়ী, তুরাগ কমিউটার শুক্রবার এবং জয়দেবপুর কমিউটার শনিবার বন্ধ থাকবে। তুরাগ কমিউটার-২ জয়দেবপুর থেকে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। তেজগাঁও, বনানী, ঢাকা বিমানবন্দর, টঙ্গী ও ধীরাশ্রম স্টেশনে এ ট্রেন যাত্রা বিরতি দিয়ে ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে কমলাপুর পৌঁছবে। তুরাগ কমিউটার-৪ ট্রেনটি জয়দেবপুর থেকে রাত পৌনে ১০টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ট্রেনটি তেজগাঁও, বিমানবন্দর ও টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি শেষে রাত সোয়া ১১টার দিকে কমলাপুর পৌঁছবে।
জয়দেবপুর কমিউটার-২ সকাল ৭টা ১০ মিনিট জয়দেবপুর জংশন থেকে ছেড়ে ৮টা ২৫ মিনিটে কমলাপুর এবং জয়দেবপুর কমিউটার-৪ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে ১টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর পৌঁছবে। ট্রেন দু’টি তেজগাঁও, বনানী, বিমানবন্দর ও টঙ্গী স্টেশনে থামবে।
তুরাগ কমিউটার-১ ঢাকা থেকে সকাল ৫টার দিকে জয়দেবপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ট্রেনটি বিমানবন্দর ও টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে সকাল ৬টার দিকে জয়দেবপুর পৌঁছবে। জয়দেবপুর কমিউটার-১ ঢাকা থেকে সকাল ৫টা ২৫ মিনিটে জয়দেবপুরের উদ্দেশে ছেড়ে তেজগাঁও, বিমানবন্দর ও টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি দিয়ে সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে জয়দেবপুর জংশনে পৌঁছবে।
জয়দেবপুর কমিউটার-৩ ঢাকা থেকে বেলা ১১টার দিকে ছেড়ে তেজগাঁও, বনানী, বিমানবন্দর ও টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে বেলা ১২টার দিকে জয়দেবপুর পৌঁছবে। তুরাগ কমিউটার-৩ ঢাকা থেকে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে ছেড়ে তেজগাঁও, বনানী, ঢাকা বিমানবন্দর, টঙ্গী ও ধীরাশ্রম স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে ৬টা ৪০ মিনিটে জয়দেবপুর জংশনে পৌঁছবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা