হোসেনপুরে নাব্যতা সঙ্কটে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ফসলের আবাদ
- জাহাঙ্গীর আলম, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)
- ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩২
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া এক কালের খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদটি নাব্য হারিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বালু, পলি আর দখলে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কালের পরিক্রমায় প্রবল খরস্রোতা নদীতে নেই অবিরাম পানির প্রবাহ। নদের বুকে জেগে উঠছে চর।
স্থানীয় কৃষকরা সেই চরেই আবাদ করছেন সোনালী ধানসহ বিভিন্ন জাতের ফসল। অনেকেই আবার ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে উন্নত জাতের গম, ভুট্রা, বাদাম ও বোরো ধানের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নাব্যতা সঙ্কটের কারণে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীগুলোতেও পানি না থাকায় ভূগর্ভ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ইতোমধ্যে অনেক নদী-নালা সরকারের উদ্যোগে খনন করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
তবে, হোসেনপুর বাজার-সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদে কোনো ড্রেজিং কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। তাই দ্রুত সময়ে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর নাব্যতা দূরীকরণে এ শাখা নদটি খননের জন্য জোড়ালো দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে দেখা গেছে, ভরাট হওয়ার কারণে এ নদের অস্তিত্বই এখন বিলীন হওয়ার পথে। ফলে নদের তলদেশে এখন বোরো ধান, গম, ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসলের চাষাবাদ করছেন নদের দুই পাড়ের কৃষকরা। এভাবেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে নদীর বুকে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নদের তীরবর্তী মানুষেরা।
স্থানীয় কৃষক আলামিন, ফরিদ উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, ‘এক সময় ব্রহ্মপুত্র নদে পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ ছিল। তা দিয়ে চাষাবাদ করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজেও ব্যবহার করা হতো। নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হওয়ার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর।
হোসেনপুর বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম, ‘জগাই মেম্বার জানান, ব্রহ্মপুত্রের এ শাখা নদটি এক সময় ছিল প্রবল খরস্রোতা এবং নদী পাড়ের মানুষের কাছে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। কিন্তু বর্তমানে এটি নাব্যতা হারানোর কারণে বর্ষাকালেও অতীতের ভয়াল রূপ আর চোখ পড়ে না। নদের উত্তাল ঢেউ এখন কেবলই স্মৃতি।’
স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম জানান, ‘আমাদের জমিগুলো অতীতে নদী ভাঙনের কবলে বিলীন ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদে বিশাল চর জেগে ওঠায় পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেয়ে এবং সেখানে চাষাবাদ করে আমরা খুবই ভালো আছি। ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চল এখন আমাদের কাছে আশির্বাদ স্বরূপ।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম সাজাহান কবির জানান, ‘ভয়াবহ নাব্যতা সঙ্কটে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি না থাকায় ভূগর্ভ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। নদীতে পানি থাকলে ওই নদীর পানি দিয়ে নানা ধরনের ফসলের জমিতে সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদন করা সহজ হতো। কিন্তু নদে পানি না থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বুকেই এখন হচ্ছে চাষাবাদ। কৃষি বিভাগের পরামর্শে চরাঞ্চলের কৃষকরা বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করছেন। ফলে অনেকেই আজ স্বাবলম্বী।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা