‘মা-ও নাই বাবা থেকেও নাই, আমরা এখন কী করে বাঁচবো’
- রনী আহম্মেদ, কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ)
- ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:১৬
‘মা-ও নাই, বাবা থেকেও নাই আমরা এখন কী করে বাঁচবো’ ছোট জমজ দুই বোনকে কোলে নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে এ কথাগুলো বলছিল কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের চিত্রা পাড়া গ্রামের জামাল মিয়ার শিশু সন্তান সাজ্জাদ হোসেন (১৩) ও বোন আফসানা খানম (৭)।
গত ৬ অক্টোবর জমজ দুই মেয়েকে জন্ম দিতে গিয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে ছয় দিন পরে মারা গেলেন, আর গত ৭ নভেম্বর পুলিশ তাদের বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় চারটি শিশু সন্তানের জীবনে নেমে এসেছে অমানিশার ঘর অন্ধকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস আগে দুই যমজ সন্তানকে জন্ম দিয়ে অত্যন্ত অসুস্থতার কারণে ছয় দিন পরে মারা যান দিনমজুর জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম। অন্যদিকে এক মাস পরে গত ৭ নভেম্বর রাতে জামাল মিয়াকে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ঘরে অসুস্থ মা ও চার শিশু সন্তানকে একাই সামলাতেন জামাল মিয়া। গত শুক্রবার রাতে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
শনিবার স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক আলি হোসেন দিদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় জামাল মিয়া এখন কারাগারে রয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দিদার স্বেচ্ছাসেবক দলের টুংগীপাড়া মিটিং শেষে ফেরার পথে হত্যার শিকার হন।
জামাল মিয়ার বড় ভাই মনির মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই বিগত সময় আমতলী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল। বর্তমানে সে কোনো দল করে না। পুলিশ কী কারণে আমার ভাইকে গ্রেফতার করল তা আমাদের জানা নাই। আমার ভাইয়ের দু’টি এক মাস বয়সী জমজ কন্যা সন্তানসহ স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে চার সন্তানকে একাই দেখাশোনা করতে। ঘরে আমাদের বৃদ্ধ অসুস্থ মা রয়েছে, তাকেও আমাদের দেখাশোনা করতে হয়।’
জামাল মিয়ার বড় ভাই আওয়াল মিয়া বলেন, ‘আমার ভাইকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে এখন তার চারটি শিশু সন্তান মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই গ্রেফতার আমি মনে করি অমানবিক। আমরা দ্রুততার সাথে প্রশাসনের কাছে তার মুক্তির দাবি জানাই।
জামাল মিয়ার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চার ভাই-বোন অনেক অসহায় হয়ে পড়েছি, আমার বোনদের দুধ কেনার টাকা নাই, আমাদের খাবারের কোনো ব্যবস্থা নাই। কয়েকদিন পরে আমার বার্ষিক পরীক্ষা, পরীক্ষার ফি কী করে দেবো। পরীক্ষার ফি দিতে না পারলে আমি পরীক্ষা দিতে পারবো না, আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দয়া করে আপনারা আমার আব্বুরে আইনা দেন। তা না হলে আমরা এখন কি করে বাঁচবো।’
এ বিষয়ে কোটালীপাড়া থানা অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেনেছি জামাল মিয়া ঢাকা তেজগাঁও থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এজন্য তাকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাই বর্তমান সময়ে উপরের নির্দেশে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে তার গার্ডিয়ান পক্ষ যোগাযোগ করলে, চারটি শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা মানবিক দিক বিবেচনা করার চেষ্টা করবো।’