০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, নিজ ঘরে আত্মহত্যা

নুরুল ইসলাম - নয়া দিগন্ত

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় নুরুল ইসলাম (৬০) নামে এক শিক্ষকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার পরিবারের দাবি, যৌন হয়রানির মিথ্যা অভিযোগ আনা হলে আত্মসম্মান হারানোর ভয়ে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করেন তিনি।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বড়চওনা ইউনিয়নের দাড়িপাকা গ্রামে তার বাড়ির রান্নাঘর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লাশ পাঠায় পুলিশ।

নুরুল ইসলাম দাড়িপাকা গ্রামের দাড়িপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।

তার মেয়ে নিপা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বাবার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মিথ্যা অভিযোগ এনে দাড়িপাকা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাড়িপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গত ২৭ আগস্ট মানববন্ধন করে। মূলত অভিযোগটা একেবারেই ভিত্তিহীন। দাড়িপাকা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক কামাল মিয়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধনটি করান। ওই মানববন্ধনের আগের দিন কামাল মিয়া এবং নিজেদেরকে সমন্বয়ক পরিচয় দেয়া স্থানীয় খায়রুল ইসলাম, ফরিদ, হামিদ, আরাফাত ও সজিবসহ বেশ কয়েকজন বাবার কাছে টাকা দাবি করে। টাকা না দেয়ার কারণেই মূলত তারা অন্য স্কুলের শিক্ষার্থী এনে মানববন্ধন করায়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ই তারা ফেসবুকে বাবাকে নিয়ে লেখালেখি করত এবং সেগুলো দেখিয়ে বাবার কাছে টাকা দাবি করত।’

নিপা আরো বলেন, ‘সোমবার রাত ৩টা ৪২ মিনিটের দিকে বাবা আমাকে ফোন দিয়ে বলেন যে কামাল মিয়া তার কাছে চার লাখ টাকা দাবি করেছে। না দিলে তাকে হেনস্তা করে তার চাকরি খেয়ে দেবে। বাবা এসব মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছেন।’

এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন নিপা।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সখীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইবরাহীম খলিল বলেন, ‘গত ২৭ আগস্ট শিক্ষক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ পেলে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য সাময়িক সময়ের জন্য তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে ঘটনাটির তদন্ত রিপোর্ট এলে তিনি তাতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন।’

খায়রুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘নুরুল ইসলামের পরিবার আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা যদি তাদের কাছ থেকে টাকাই নিতাম তাহলে ঘটনাটি এ পর্যন্ত গড়াত না। তিনি যদি সত্যিকারেই অপরাধী না হবেন তাহলে আত্মহত্যা না করে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতেন।’

নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দেয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন খায়রুল।

দাড়িপাকা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক কামাল মিয়া বলেন, ‘গতকাল আমি নুরুল ইসলামের কাছে টাকা চেয়েছি এটা একেবারেই মিথ্যা অভিযোগ। মূলত তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আজকে দ্বিতীয়বার তদন্তের তারিখ ছিল। প্রথম তদন্ত রিপোর্টে তিনি দোষী প্রমাণিত হন। আমার মনে হয়, আজকে যেহেতু তদন্তের তারিখ ছিল তাই তিনি মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেছেন।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement