০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

শেকৃবিতে শিক্ষক লাঞ্ছনা ইস্যুতে বিচারহীনতার ২ বছর

- ছবি : সংগৃহীত

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দু’বছর পার হলেও এখনো বিচার কাজ শেষ হয়নি।

এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন। রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে এ তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনার ভুক্তভোগী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান।

অভিযুক্ত হলেন মো: অলিউল আলম টুয়েল। এছাড়া অন্যদের মধ্যে রয়েছে মো: ইলিয়াছুর রহমান, মো: ইব্রাহীম খলিল খান, গৌতম চন্দ্র রায়, মো: হুমায়ুন কবিরসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা।

ছাত্রজীবনে তারা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। ঘটনার পর তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে ক্ষমতার পালাবদলে বিষয়টি আবারো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিক্যাল অফিসারের সাথে ভুক্তভোগী শিক্ষকের সামান্য কথা-কাটাকাটি হয়, যা পরে নিজেদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যায়। কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো: অলিউল আলম টুয়েলের নেতৃত্বে পরিষদের নেতারা ওই শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করে কক্ষে ভাঙচুর চালায় এবং তাকে গালাগাল করে মারতে উদ্যত হন। ঘটনার সময় ভুক্তভোগী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে ফোন করতে চাইলে অলিউল আলম টুয়েল তার ফোনটি নিয়ে টেবিলে ছুঁড়ে মারে এবং বিভিন্ন হুমকি দিয়ে কক্ষ ত্যাগ করে। এ সময় সেখানে উপস্থিত আশপাশের অন্য শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিব্রতবোধ করেন। পরে অভিযোগপত্রে একই বিভাগের একজন সিনিয়র শিক্ষক এবং অনুষদের ডিন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন।

ঘটনাটি ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি করে। অভিযোগের পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত যাতে এগোতে না পারে, সেজন্য তারা ব্যাপক প্রভাব খাটায়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ তাদের সহযোগিতা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা এবং শিক্ষকরা সাবেক ছাত্রলীগের এই গ্রুপটির প্রভাব ও ভয়ে চুপ থাকতেন বলে জানা গেছে।

ছাত্রজীবনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো ছাড়াও, কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তারা আলাদা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার, দলীয় ও আঞ্চলিক কোন্দলকে উসকে দেয়া এবং ভিন্নমতের সিনিয়র শিক্ষকদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণসহ একাধিক অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বলেন, ‘তদন্ত কাজে কমিটির অন্য সদস্যদের অসহযোগিতার কারণে তদন্ত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তদন্ত কাজে বাইরের কেউ বাধা সৃষ্টি বা সুপারিশ করেছে বলে আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মূল অভিযুক্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো: অলিউল আলম টুয়েল বলেন, ‘তিনি (আব্দুল মান্নান) আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করেছেন তা সত্য নয়। তার কক্ষে তার সাথে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এর বেশি কিছু হয়নি। সিনিয়র শিক্ষকদের মাধ্যমে আমরা নিজেরাই ঘটনাটির মীমাংসা করতে চেয়েছিলাম। আর তদন্ত কাজে বাধা সৃষ্টি করার মতোও কোনো কিছু আমরা কখনো করিনি।


আরো সংবাদ



premium cement