২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

গজারিয়ায় ২৫ মামলার আসামি ডাকাত সর্দার বাবলা নিহত

বাবলা ওরফে উজ্জ্বল খালাসী - ছবি : নয়া দিগন্ত

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দু’নৌ ডাকাত গ্রুপের গোলাগুলিতে ২৫ মামলার আসামি বাবলা ওরফে উজ্জ্বল খালাসী (৪২) নামে এক ডাকাত নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো তিনজন।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ইমামপুর ইউনিয়নের মল্লিকের চর গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, নিহত ডাকাত সর্দার বাবলা চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের বাচ্চু খালাসীর ছেলে।

আহতরা হলেন লিটন মিজি (৩৬), রহিম বাদশা (৫০), আক্তার হোসেন (৪০)।

সরজমিনে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ইমামপুর ইউনিয়নের মল্লিকের চর গ্রাম এলাকার মেঘনা নদীতে দু’টি স্পিডবোট এবং দু’টি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে ২৫ থেকে ৩০ জন সহযোগী নিয়ে মহড়া দিচ্ছিলেন ডাকাত সর্দার বাবলা। এ সময় তারা নদী ছেড়ে মল্লিকের চর গ্রামে রহিম বাদশার বাড়িতে চলে যান। পরে রহিম বাদশার বাড়ি থেকে গোলাগুলি শব্দ শুনতে পান তারা।

প্রত্যক্ষদর্শী আরো জানায়, দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলির সময় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গোলাগুলির পর কিছু লোককে দৌড়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। এ ঘটনার পরে রহিম বাদশার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বাবলার লাশ পড়ে আছে এবং পাশের অন্য একটি কক্ষে ডাকাত দলের চার সদস্যকে আটকে রাখা হয়েছে। বাবলার লাশের পাশ থেকে কয়েকটি গুলির খোসা, নগদ ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে, ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় গজারিয়া ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রাম থেকে পাঁচ ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানায়, মেঘনা নদীর ষোলআনী এলাকায় একটি বৈধ বালুমহাল থাকলেও মল্লিকের চর ও গুয়াগাছি এলাকায় রাতের আঁধারে অবৈধ দু’টি বালুমহাল চালু থাকত। নৌ ডাকাত বাবলার ছত্রছায়ায় মল্লিকের চরের বালুমহালটি পরিচালনা করতেন বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন মেম্বার ও রহিম বাদশা।

অন্য দিকে, নদীর গুয়াগাছিয়া এলাকার বালুমহালটি পরিচালনা করতেন আরেক নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর প্রধান নয়ন। দু’বাহিনীর লোকজন আধুনিক অস্ত্র নিয়ে নিয়মিত নদীতে মহড়া দিতেন।

নিহত ডাকাত সর্দার বাবলার স্ত্রী আফিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর প্রতিপক্ষ ছিল নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। আমাদের লোকজনের মাধ্যমে খবর নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি, নৌ ডাকাত নয়ন ও তার লোকজন স্পিডবোট নিয়ে এসে গোলাগুলি করেছে। বাবলাকে গুলি করে হত্যা করার পর তারা দ্রুত স্পিডবোট দিয়ে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড পিয়াস বলেন, ‘এ ঘটনার সাথে কিছু লোক আমাদের জড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কোনোভাবেই আমরা জড়িত নই। ঘটনার সময় আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। শুনেছি, স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে মেরে ফেলেছে।’

গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমরা এরকম একটি খবর পেয়েছি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে বিষয়টি অন্তর্কোন্দল নাকি দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা এ বিষয়ে খতিয়ে দেখছি।’

উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলার সীমান্তবর্তী পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনা দিয়ে চলাচলকারী নৌযানচালকদের কাছে আতঙ্কের নাম নৌ ডাকাত বাবলা বাহিনী। প্রশাসনের সামনে বিভিন্ন নৌযানে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। বাবলা ডাকাত ওরফে উজ্জ্বল খালাসীর নামে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে থানায় ২৫টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement