২১ অক্টোবর ২০২৪, ৫ কার্তিক ১৪৩০, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

অদম্য শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদের এইচএসসির জয়

- ছবি : নয়া দিগন্ত

অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে প্রতিবন্ধকতার পরাজয়। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। দাঁড়াতে চায় নিজের পায়ে। জন্মের পর থেকেই দুই হাঁটু ও হাতে ভর করে চলে জুবায়ের আহমেদ। হাত দুটিও কাজ করে না ঠিকমতো। কথাবার্তা অস্পষ্ট তবু পড়াশোনার প্রতি তার অদম্য আগ্রহ শৈশব থেকে। পড়াশোনা নিয়ে মা-বাবার চিন্তার শেষ ছিল না। এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার দুই বছর আগে (২০২০ সালে) তার মা মারা যান। ২০২১ সালে বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। মা মারা যাওয়ার পর থেকে জুবায়ের অস্বাভাবিক হয়ে উঠেন। ছেলের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন বাবা ও ভাই-বোনেরা।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত বাঁধন টেকনিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড বি.এম কলেজ থেকে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অল্পের জন্য জিপিএ-৫ না পেলেও জুবায়ের পেয়েছিলেন জিপিএ-৪.৫৪। এ সাফল্যে তার বাবা, সৎ মা ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করেছিল তখন। হুইল চেয়ারে বসে কলেজে এসে ক্লাস করা জুবায়ের আহমেদ এবার ২০২৪ সালে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফলতার সহিত কৃতকার্য হয়েছেন। পেয়েছেন জিপিএ-৩.৬৩। মাতৃহারা জুবায়েরের সাফল্যে আনন্দিত স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী এবং অভিভাবকরা। তবে তার এ বিজয় স্বাভাবিকদের মতো সহজ ছিল না।

রোববার বিকেলে কুলিয়ারচর বাজারস্থ পপুলার মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে এলে কথা হয় তার সাথে।

তিনি বলেন, ‘আমি দুই পা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি না। আমার দুটি পা সম্পূর্ণ অচল। হুইল চেয়ারে করে চলাফেরা করতে হয়। আমি ঠিকমতো কথা বলতে পারি না, কাজ করতে পারি না। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছি। এখন খুব আনন্দ লাগছে। আমার স্যার, সহপাঠী এবং পরিবারের সদস্যরা সবাই আমাকে খুব আদর এবং সহযোগিতা করেছেন। লেখাপড়ায় বিশেষ করে আমার বাবার পরে আমার সৎ মা, চাচা, বড় বোন, দুলাভাই ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মো: নিয়ামুল ইসলাম আঙ্কেল আমাকে অনেক সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে আমি কিছুটা অসুস্থ। কিছুদিন আগে আমার একটি হাটুতে থাকা একটি টিউমার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অপারেশন করে অপসারণ করে দিয়েছিলেন ডাক্তার মো: নিয়ামুল ইসলাম আঙ্কেল। তখন তিনি আমাকে বিনামূল্যে ওষুধ দিয়েও সহযোগিতা করেছিলেন। তাই এখনো এখানে এসেছি চিকিৎসা নিতে।’

তিনি কারোর ওপর যেন বোঝা হয়ে না থাকতে হয় সেজন্য দু’চোখ ভরা পানি নিয়ে বর্তমান সরকারের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে একটি চাকরি দাবি করেন এবং সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।

জুবায়ের আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার পূর্ব ভাগলপুর গ্রামের হাফেজ মো: শহিদুল্লাহ ও মরহুমা জাকিয়া সুলতানা দম্পত্তির ছেলে। তার বাবা পাশের পীরপুর চেয়ারম্যান বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম।

জুবায়েরের বাবা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলের দুই পা অচল, কথাবার্তা অস্পষ্ট ও অস্বাভাবিক। সে সরকারি তালিকাভুক্ত একজন প্রতিবন্ধী। অনেক কষ্ট করে সে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকরাও ওর প্রতি বিশেষ যত্ন নিয়েছেন। অভাবের সংসারে মাতৃহারা ছেলেটা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে এতে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত।’

ডা. মো: নিয়ামুল ইসলাম বলেন, ‘জুবায়ের খুবই ভালো ও মেধাবী একটি ছেলে। তাকে আমি নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। ও যতদিন বেঁচে থাকে আর আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিনই তাকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাবো।’

এলাকাবাসী জানায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বহু কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে জুবায়েরকে। কিন্তু সবাইকে স্কুলে যেতে দেখে তারও পড়ালেখা করার ইচ্ছা জাগে। এরপর জুবায়ের পাশের পীরপুর মাহবুবুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পিএসসি ও আগরপুর গোকুল চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পাস করে বাঁধন টেকনিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড বি.এম কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু দরিদ্র বাবা বই-খাতা কেনার খরচও ঠিক মতো দিতে পারতেন না। প্রতিবন্ধীর ভাতার টাকা দিয়ে কোনো মতে পড়ালেখা চালিয়ে গেলেও ঠিক মতো চিকিৎসা করাতে পারেননি তার বাবা। ফলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে হয় তাকে।

বাঁধন টেকনিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড বি.এম কলেজের অধ্যক্ষ মো: শাহীন আলম বলেন, ‘জুবায়ের মেধাবী ছেলে। পড়ালেখার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ তার। তবে ওর পরিবার খুবই দরিদ্র। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ওকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছি। জুবায়ের আহমেদ এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করা সত্যিই প্রশংসনীয় ও গর্বের বিষয়।’

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পাওয়া জুবায়ের আহমেদের এ সাফল্যে আনন্দিত কুলিয়ারচর উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ-জোহরাও। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। তাদের পাশে থেকে আমাদের সকলের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। সমাজের মূল স্রোতের সাথে তাদেরকে অংশগ্রহণ করাতে হবে। তবেই দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে।’


আরো সংবাদ



premium cement
গাবতলীতে স্কুলছাত্রকে গলা কেটে হত্যা, আটক ১ অক্টোবরের ১৯ দিনে ১৫৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩ দেশের রাষ্ট্রদূতের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল ময়মনসিংহে ড্রাম ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষে অন্তঃসত্ত্বা নিহত, আহত ৫ এবার বিনা টিকিটে খেলা দেখতে মিরপুরে বিক্ষোভ পাথরঘাটায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন, স্বামী কারাগারে লেবাননের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ নাকচ ইরানের হজের টাকা প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ লিড ভাঙার পথে দক্ষিণ আফ্রিকা হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন : আসিফ নজরুল যৌথ মহড়ার জন্য রাশিয়ার নৌবাহিনীর জাহাজ মিয়ানমারে

সকল