২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নু মানুষ

-

‘নু’ চীনের একটি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। সংখ্যায় কম হলেও একটি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সব বৈশিষ্ট্যই এদের রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব ভাষা, খাদ্য ও খাদ্য সংস্কৃতি, পোশাক, প্রথা, উৎসব ইত্যাদি।
নুদের বসবাস য়ুনান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা বিজিয়াং, ফুগং ও গংশানে। ল্যানপিং ও ওয়েক্সি জেলায়ও কিছু নু বাস করে।
নু জনসংখ্যা মাত্র ২৭ হাজার । নু জাতির ভাষার নামও নু। এটি চীনা-তিব্বতি ভাষা পরিবারের তিব্বতি-মিয়ানি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। অঞ্চলভেদে কয়েকটি নু উপভাষা প্রচলিত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পার্থক্য এত বেশি যে, এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকার ভাষা বুঝতে পারে না। এ ভাষার হরফ নেই। বেশিরভাগ নু চীনা ভাষা বুঝতে পারে এবং এ ভাষায় লেখাপড়া করে।
নুদের ধর্মবিশ্বাস আদিম ও সর্বপ্রাণবাদী। এরা বিশ্বাস করে, সবকিছুরই আত্মা আছে এবং এরা প্রকৃতির শক্তিও স্বীকার করে। কিছু নু লামাবাদে (তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম) বিশ্বাস করে এবং কিছু নু খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী।
নুরা সাধারণত দিনে দু’বার খাবার খায়। এদের প্রধান খাবার শস্য। এরা শস্যের সাথে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার গোশত খায়। এ ছাড়া খায় মাছ এবং মসব্যাক (কচ্ছপবিশেষ), হরিণ ও বন্য পুংশূকরের মাংস। এরা মদ পান করে এবং অতিথি আপ্যায়ন করে রুচিকর মদ দিয়ে। যদি আপ্যায়নকারী অতিথিকে বিশেষ বন্ধু বিবেচনা করে তবে তার জন্য টংসিন মদ পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়। টংসিন অর্থ একহৃদয়।

শণের পাশাক পরার প্রতি নুদের ঝোঁক রয়েছে। পুরুষরা কোমরে ছুরি ঝুলিয়ে রাখে এবং পিঠে রাখে তীর রাখার থলে। নারীরা স্কার্ট করে। এদের মিহি স্বচ্ছ সিল্কের কাপড় প্রবাল, ঝিনুক, সোলেমানি পাথর ও মুক্তা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। নারীরা ছেলেবেলায় ও বাড়ন্ত বয়সে মোজা বানাতে শেখে। এরা এ মোজা উপহার দেয় মনের মানুষকে। যদি কাক্সিক্ষত জন মোজা গ্রহণ করে, তাহলে বুঝতে হবে সে ভালোবাসায় সাড়া দিয়েছে। মোজা ফেরত দেয়ার অর্থ ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান।
নুরা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে দক্ষ। বিশেষ করে এরা দেবিয়ান বাজাতে ওস্তাদ। দেবিয়ান অনেকটা চীনা পিপা বাদ্যযন্ত্রের মতো, অর্থাৎ বেহালার মতো। এরা নিল্ (রজ্জুজাত বাদ্যযন্ত্রবিশেষ) বাজাতেও পছন্দ করে। তরুণ নু যদি কোনো তরুণীর প্রেমে মতোয়ারা হয়, তাহলে দেবিয়ান ও নিল্ বাজিয়ে জানিয়ে দেয়। তরুণী যদি সাড়া দিতে চায়, তাহলে সেও বাদ্যযন্ত্র বাজায়। নু জনজীবনে বিভিন্ন কাজে বাদ্যযন্ত্রের গুরুত্ব রয়েছে।
নু জাতি বিভিন্ন উৎসব পালন করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, নববর্ষ দিবস, ফুল উৎসব, প্রার্থনা উৎসব ইত্যাদি। প্রার্থনা উৎসবে এরা শস্যদেবতা ও বনদেবতার আরাধনা করে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement