২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পালকি কথা

-

জানো, পালকি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে অনেক গান, ছড়া, কবিতা ও গল্প আছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও যাতায়াতের জন্য পালকি ব্যবহার করতেন। প্রাচীনকালে যখন পায়ে হাঁটা নির্ভর যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল, তখন দূরবর্তী স্থানে যাতায়াতের অন্যতম বাহন ছিল তিনটি- পালকি, গরু বা ঘোড়ার গাড়ি ও নৌকা। এ দেশে পালকির বহুল ব্যবহার ছিল বিয়েতে। বিয়ের এক ঐতিহ্যবাহী প্রতীক ছিল পালকি। অতীতে পালকি ছাড়া কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান কল্পনাই করা যেত না। বিয়ের সময় বর ও কনেকে বাড়িতে আনা-নেয়ার জন্য পালকি ছিল অন্যতম প্রধান বাহন। পালকি বাহকদের বলা হয় বেহারা। বেহারারা পালকি বহনের সময় সুর করে নানা রকম গান গায়। এসব গান পালকির গান নামে পরিচিত।
পালকি যন্ত্রবিহীন এক ধরনের যানবাহন, যাতে কোনো চাকা নেই। মানুষ কাঁধে করে পালকি বয়ে চলে। পালকি শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ পলাঙ্কিকা থেকে। পরে এই শব্দ ফার্সি ফালকি, পর্তুগিজ প্যালানকুইন, ইংরেজি প্লানকিং ইত্যাদি শব্দের অপভ্রংশ হিসেবে পালকি নামে উৎপত্তি হয়েছে। পালকি কাঠের তৈরি একটি চৌকোনা আয়তাকার বাক্সবিশেষ। এর দু’পাশে দু’টি দরজা থাকে এবং দুই মাথায় দু’টি লম্বা মোটা কাঠের হাতল থাকে। দরজা দিয়ে পালকির ভেতরে ঢুকে বসা যায়। বেহারারা হাতল কাঁধে নিয়ে পালকি বয়ে চলে। বেহারাদের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে পালকির নাম ও আকারও ভিন্ন হতো। যেমন চার বেহারার পালকি, আট বেহারার পালকি, ষোলো বেহারার পালকি ইত্যাদি। আট বেহারার পালকিতে চারজন যাত্রী যেতে পারত, ষোলো বেহারার পালকিতে শুয়ে যাওয়া যেত।
অতীতে রাজা-বাদশা, জমিদার, রাজকর্মচারী, উচ্চবিত্ত, বণিক শ্রেণীর লোকেরা সাধারণত আয়েশি ভ্রমণের জন্য পালকি ব্যবহার করতেন। এ শ্রেণীর অনেক লোকের বাড়িতেই পালকি থাকত এবং মাসিক বেতনে বেহারাদের রাখা হতো। যশোর, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম প্রভৃতি জেলায় অতীতে যথেষ্ট পালকির ব্যবহার ছিল। আজ পালকি শুধু জাদুঘরে রাখার জিনিস। শিলাইদহের কুঠিবাড়িতেও কবির ব্যবহৃত পালকিখানা রক্ষিত আছে। তবে উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও এখনো মাঝে মধ্যে ধানক্ষেতের আইলপথে নববধূ নিয়ে বেহারাদের পালকি বয়ে যেতে দেখা যায়।
ছবি : সংগ্রহ


আরো সংবাদ



premium cement