১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৬
`

টমটম কথা

-

জানো, রাজধানীর ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’র সামনের মোড়ে শিল্পী মৃণাল হকের টমটমের শিল্পকর্মটি দেখে মনে হয়, তাহলে কি সত্যি সত্যিই আমাদের দেশ থেকে ঐতিহ্যবাহী ঘোটকযান টমটম উঠে যাচ্ছে! কেননা, কোনো জিনিস লুপ্ত হলেই কেবল তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য বানানো হয় এ ধরনের স্মারক চিহ্ন- ভাস্কর্য বা স্থাপত্য।
টমটম চার চাকাবিশিষ্ট দুই ঘোড়ায় টানা এক ধরনের গাড়ি। যাত্রী বসার জন্য মুখোমুখি বেঞ্চের মতো দু’সারি আসন থাকে। ওগুলো হারিয়ে গেলে হয়তো টমটম-জমানার শেষ হবে। তখন মৃণাল হকের এই ‘রাজকীয় বিহার’ শিল্পকর্মটিই হয়তো সাক্ষ্য দেবে টমটমের। যন্ত্র তো আমাদের অনেক ঐতিহ্যকেই কেড়ে নিয়েছে, টমটমকে আর বাঁচিয়ে রাখবে কেন?
টমটমে চড়ে ঘুরে বেড়ানো, সে এক রাজকীয় বিহারই বটে। একসময় এ দেশের গ্রামাঞ্চলের পথে পথে ধুলো উড়িয়ে ছুটে যেত ঠকঠক করে ঘোড়ার গাড়ি। পণ্য-মানুষ দুই-ই টানত। আজো আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও মানিকগঞ্জে সে ঘোড়ার গাড়ি। টমটম মূলত ঘোড়ার গাড়ি হলেও সেটা আসলে খানদানি ঘোড়ার গাড়ি। টমটম মূলত এ দেশে আসে ইংরেজ আমলে। কলকাতা থেকে প্রথম টমটম গাড়িটি আসে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। ব্রিটিশদের অনুকরণে এ দেশের জমিদার ও অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা ধীরে ধীরে তাদের যাতায়াতের জন্য টমটমের ব্যবহার শুরু করেন। ক্রমেই তা জেলা ও মহকুমাতে ছড়িয়ে পড়ে। কোনো কোনো এলাকায় টমটম জুড়িগাড়ি বা এক্কাগাড়ি নামে পরিচিত। টমটম চার চাকাবিশিষ্ট দুই ঘোড়ায় টানা একধরনের গাড়ি। যাত্রী বসার জন্য মুখোমুখি বেঞ্চের মতো দু’সারি আসন থাকে। এক্কাগাড়িতে থাকে এক সারি আসন। ছাউনি এবং বাক্সের মতো ঘেরা ঘর ও ছাদ খোলা, এ দু’রকমের টমটমই আছে। ছাউনি দেয়া টমটমের দু’ পাশের জানালায় পাল্কির মতো পর্দাও কোনো কোনো সময় দেয়া হয়। বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনে বহনের সময়। সে সময় ফুলের মালা দিয়েও টমটমকে সুন্দর করে সাজানো হয়। এক ঘোড়ায় টানা গাড়িকে বলে টাঙ্গা। টমটম যে চালায় তাকে বলে কোচোয়ান বা সহিস। ঢাকার গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত কয়েকটি টমটম নিয়মিত যাত্রী বহন করে। এ ছাড়া বিয়ে বা কোনো কোনো অনুষ্ঠানে টমটম ব্যবহার করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement