২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

পানি ও রঙ মিশ্রিত মিথানল দিয়ে তৈরি হচ্ছে জীবাণুনাশক

পানি ও রঙ মিশ্রিত মিথানল দিয়ে তৈরি হচ্ছে জীবাণুনাশক - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজধানীর মিটফোর্ড ও বাবুবাজারসহ বিভিন্ন স্পটে মিথানল, পানি ও রঙ দিয়ে তৈরি করে নকল জীবাণুনাশক বিক্রি করছে একটি প্রতারক চক্র। আর এসব চক্রের সদস্যকে সহযোগিতা করছে কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, দেশে মহামারী কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিভিন্ন পেশায় কর্মরত হাজার হাজার লোক এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মারা গেছেন শত শত মানুষ। জীবাণুনাশক হ্যান্ড ওয়াশ হেক্সিসল দিয়ে বারবার হাত ধোয়ার করার কথা বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর তাই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি প্রতারক চক্র মিথানল, পানি এবং কাপড়ের রঙ দিয়ে প্রকাশ্যে তৈরি করছে হেক্সিসলসহ নানা ধরনের নকল ও অকার্যকর হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ২০০ লিটারের এক ড্রাম মিথানলের দাম ১২ হাজার টাকা।

এক ড্রাম মিথানল দিয়ে কয়েক হাজার লিটার হেক্সিসল তৈরি করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে বাবুবাজার ব্রিজের নিচে মিটফোর্ড হাসপাতালের কলেজ গেটের পাশে রেজা মেডিসিন মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে ওই সব ভেজাল হেক্সিসল বানাতে দেখা গেছে। কাপড়ের রঙ, পানি ও মিথানল একত্রে মিশানো হচ্ছে। আর একশ্রেণীর খুচরা ব্যবসায়ী এসব কিনে মিটফোর্ডের আশপাশ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু মেডিসিন দোকানি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে। পাঁচ লিটার এক কনটেইনার দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করছে। আর ওই সব ব্যবসায়ীরা ছোট-বড় বোতলে করে ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় হ্যান্ড ওয়াশ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে। আর পাশেই দাঁড়ানো থাকছে পুলিশ। অন্য দিকে, মিটফোর্ড রোডেও বেশ কয়টি দোকানে এসব ভেজাল হেক্সিসল বানিয়ে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তার মধ্যে কামাল পারফিউম, লাকি পারফিউম, সৌদি পারফিউম, শাপলা পারফিউম, মেডিসিন ফিড ও জামাল পারফিউমসহ প্রায় অর্ধশত দোকানে মিথানল, পানি ও রঙ দিয়ে তৈরি হেক্সিসল বোতলে করে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

স্থানীয় বিভিন্ন মেডিসিন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও নানান দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাবুবাজার ও মিটফোর্ড রোডে ভেজাল হেক্সিসলের ছড়াছড়ি। এসব দেখেও না দেখার ভান করছে পুলিশ। সাংবাদিক কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট এলে দ্রুত সরে যেতে সহযোগিতা করে স্থানীয় থানা পুলিশ। জানা গেছে, ডালিম ও রব ওই সব ভেজাল হেক্সিসলের মূল হোতা। মিটফোর্ড হাসপাতালের গেটের সামনে রবের ব্যাটারির দোকান ছিল। আর ডালিম এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করছে। খুরচা হেক্সিসল বিক্রেতা সাদ্দাম, শাহিন, নাজমুল, হাসান ও মন্নানসহ একাধিক মৌসুমি ব্যবসায়ী জানান, অল্প দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন হেক্সিসল। আর এখানে বসে বিক্রি করতে পুলিশকে ১০০ টাকা ও মেহেদী নামের একজনকে ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। তারপরেও হাজার দুই টাকা দৈনিক থাকে বলে জানান তারা।

স্থানীয় একাধিক কেমিক্যাল ব্যবসায়ী বলেন, বাবুবাজার মিটফোর্ড এলাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের সহযোগিতায় মিথানল, পানি ও রঙ মিশিয়ে নকল হেক্সিসল তৈরি করছে ওই চক্রটি, যা কোনো কাজে আসবে না। আইপিএ বিপি না থাকলেও টেকনিক্যাল জীবাণুনাশক কেমিক্যাল ও গ্লিøসারিন দিয়ে তৈরি করতে পারত। কিন্তু তা না করে মিথানল দিয়ে বানাচ্ছে হেক্সিসল, যা ব্যবহার করলে কোনো লাভ হবে না। যারা কিনবে তাদের টাকা যাবে জলে বলে মন্তব্য করেন তারা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে ভেজাল হেক্সিসল তৈরি ও বিক্রির বিষয়ে ডিএমপি কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ওই সব অসাধু ব্যবসায়ীকে ধরতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছে। কাউকে আটক কিংবা মালামাল জব্দ করার এখতিয়ার আমাদের নেই।


আরো সংবাদ



premium cement