২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শিপন কাজীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সম্পদ দখলের অভিযোগে মানববন্ধন

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ-শরণখোলা এলাকায় চাঁদাবাজি, বাড়ি-ঘর ও মাছের ঘের দখলের অভিযোগ উঠছে জেলা বিএনপির সদস্য কাজী খায়রুজ্জামান শিপনের (শিপন কাজী) বিরুদ্ধে।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

'বাগেরহাট-৪ আসনে বিএনপির নামধারী চাঁদাবাজ, নব্য বিএনপি আশ্রয়দাতা, আওয়ামী এজেন্ট ও পুলিশের দালাল শিপন কাজীর বিচার ও বহিষ্কার দাবিতে এই মানববন্ধন করেন মোড়েলগঞ্জ-শরণখোলার নির্যাতিত নিপীড়িত ভুক্তভোগীরা। এতে সহস্রাধিক ভুক্তভোগী অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে খুনি শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে আওয়ামী দুঃশাসনের পতন ঘটে। কিন্তু জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে সুযোগসন্ধানী শিপন কাজী লন্ডনে চলে যান। তিনি এলাকায় আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে চলতেন। তার কারণেই দীর্ঘ ১৭ বছরে মোরেলগঞ্জ শরণখোলা এলাকায় আওয়ামী লীগের দুঃশাসন বিরোধী কোনো আন্দোলন গড়ে উঠতে দেননি তিনি। ৫ আগস্টের পর শিপন কাজী লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আওয়ামী দুঃশাসনের দোসর, অর্থ যোগানদানতা ও সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে তাদেরকে দলে যোগদান করিয়ে নব্য বিএনপি সাজিয়ে নিজস্ব গ্রুপ গড়ে তুলেছেন। এরপর তাদেরকে দিয়ে মৎস্য ঘের দখল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে এলাকায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশ মুক্তি পেলে নব্য বিএনপির দাপটে বহু বিএনপির প্রকৃত নেতা-কর্মীরা বাড়িঘর ছাড়া হতে বাধ্য হয়েছেন, হামলার শিকারে পরিনত হন।

ভুক্তভোগী ইউসুফ শেখের নাতনি হাসান শেখ বলেন, ‘আমার নানার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে, বাড়ি-ঘর দখল করে নিয়েছে মাফিয়া শিপন কাজী। আমরা সবাই এখন বাড়ি ছাড়া। স্বৈরাচার হাসিনার চেয়েও খারাপ শিপন কাজী ও তার বাহিনীর লোকজন। এলাকায় বহু মাছের ঘের দখল ও চাঁদাবাজি করে চলেছে। আমি আমার নানার টাকা ফেরত চাই।’

ভুক্তভোগী তানিয়া ইসলাম বলেন, ‘কাজী শিপনের চাঁদাবাজি ও দখলের হাত থেকে আমরা সবাই রেহাই পেতে চাই। স্থানীয় বিএনপি নেতা ও প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। আমার আত্মীয়-স্বজন অনেকের নামে মামলা দেয়া হয়েছে, আমরা এলাকা ছাড়া। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমার পরিবারের নিরাপত্তা ও দখলকৃত ঘের ফেরত চাই।’

ভুক্তভোগী মুফতি মতিউর রহমান বলেন, বিএনপির ব্যানার শিপন কাজী ও তার লোকজন এলাকায় চাঁদাবাজি ও লুটপাট করে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন। ৫ আগস্টের আগে শিপন কাজী আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম হিসেবে কাজ করেছেন। শিপন কাজীর নেতৃত্বে প্রায় ২ শতাধিক মাছের ঘের দখল হয়েছে। অথচ তারা লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মাছের ঘের করেছেন। এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কাছে আমরা এর প্রতিকার চাই। ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে এজন্যই কি দেশ স্বাধীন করেছিল?

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ১৭ বছর আওয়ামী লীগের নির্যাতিত যুবদল নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি সাইনবোর্ডকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে দল সাজাচ্ছেন শিপন কাজী। ৫ আগস্টের পর আমার বাড়িঘর ভাংচুর ও সাড়ে চার লাখ টকা লুট করেছে আওয়ামী লীগ নেতা দাউদ মৃধা। তাকেও বিএনপিতে যোগদান করিয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে এলাকায় লুটপাট ও অনিয়মের কোন নিউজ প্রকাশ করতে দিচ্ছেন তারা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আমার বাড়ি-ঘর ভাংচুরের বিচার চাই।’

স্থানীয় বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফারহানা জাহান নিপা বলেন, গত ৫ আগস্ট পর এলাকায় দখল ও ঘের দেখলের মাস্টারমাইন্ড ছিল শিপন কাজী। তার বিরুদ্ধে এলাকায় ঝাড়ু মিছিল হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে থানা ও উপজেলার পকেট কমিটি করেছেন। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান বাদশাকে দলে যোগদান করিয়েছেন। সে এলাকার আওয়ামী এজেন্ট ও দালাল। তিনি এলাকায় বলেছেন, তারেক রহমান বাগেরহাট-৪ আসন তাকে লিজ দিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া বললেও কাজ হবে না। তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে এলাকায় লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন।

মানববন্ধনে নাসিরের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিন, ভুক্তভোগী সোলায়মান হাওলাদার, লুটুল শরীফ, মিজান প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement